Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কনডেম সেলে প্রদীপ-লিয়াকত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩১ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৫৬

কক্সবাজার: অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও বরখাস্ত ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে কক্সবাজার জেলা কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে নেওয়া হলে বাকি আসামিদের থেকে লিয়াকত ও প্রদীপকে আলাদা করা হয়। এরপর তাদের কনডেম সেলে পাঠানো হয়। তবে কক্সবাজার কারাগারে আলাদা করে কোনো কনডেম সেল না থাকায় এই দুই আসামিকে যে কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকেই কনডেম সেল ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মামলার ১ নম্বর আসামি লিয়াকত ও ২ নম্বর আসামি প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আরও ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। মামলার বাকি সাত আসামি খালাস পেয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও কর হয়েছে।

আরও পড়ুন-

কক্সবাজার জেল সুপার নেছার আলম জানিয়েছেন, রায়ের পর সন্ধ্যায় আসামিদের পুলিশ ভ্যানে করে কারাগারে পাঠানো হয়। এসময় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি লিয়াকত ও প্রদীপকে অন্যদের থেকে আলাদা করা হয়। তাদের কারাগারের একটি কক্ষে রেখে সেটিকে কনডেম সেল ঘোষণা করা হয়েছে।

সিনহা হত্যার দায়ের মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এই দুই আসামিকে জেল কোড অনুযায়ী সুবিধা দেওয়া হবে বলেও জানান জেল সুপার নেছার আলম। তিনি বলেন, জেল কোড অনুযায়ী তাদের প্রতিদিনের খাবার ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

লিয়াকত ও প্রদীপকে কনডেম সেলে রাখা হলেও বাকিদের এই কারাগারের অন্য কয়েদিদের সঙ্গেই রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মামলার রায়ে যাদের খালাস দেওয়া হয়েছে, তাদের এ সংক্রান্ত কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছালে মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানান জেল সুপার।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে মেরিন ড্রাইভের শামলাপুরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ও মাদক আইনে ওই সময় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছিল। এসব মামলায় সিনহার দুই সঙ্গীকে আসামি করা হয়। চার দিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বোন বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাকে লিয়াকতকে ১ নম্বর ও প্রদীপকে ২ নম্বর আসামি করা হয়। আরও সাত পুলিশ সদস্যকেও মামলায় আসামি করা হয়।

মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত করার পর আদালত তদন্তভার দেন র‌্যাবকে। একইসঙ্গে পুলিশের দায়ের করা মামলা তিনটিও তদন্তের দায়িত্ব পড়ে র‌্যাবের হাতে।

ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও মোট সাত জনকে র‌্যাব গ্রেফতার করে।

গত বছরের ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।

এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।

পরে প্রথম দফায় তিন কার্যদিবসে আসামিদের ভূমিকা আদালতে তুলে ধরেন বাদীসহ চার জন সাক্ষী। এরপর ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য, জেরা, দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে টানা সাড়ে চার মাসে বিচার কাজ শেষে মামলাটি রায়ের জন্য প্রস্তুত করেন আদালত। গত ১২ জানুয়ারি আদালত মামলার রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করে দেন।

এদিন (৩১ জানুয়ারি) সকালে রায় ঘোষণার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে দুপুরে রায় ঘোষণার কথা জানানো হয়। দুপুর ২টায় একটি প্রিজন ভ্যানে ১৫ আসামিকে কারাগার থেকে কক্সবাজারের জেলা আদালতে নিয়ে আসা হয় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে। পরে তাদের দাঁড় করানো হয় কাঠগড়ায়। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে ৩০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ রায় পড়তে শুরু করেন বিচারক। সাড়ে ৪টার দিকে বিচারক দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড, ছয় আসামির যাবজ্জীবন ও সাত জনের খালাসের রায় ঘোষণা করেন।

সারাবাংলা/টিআর

ওসি প্রদীপ কনডেম সেল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লিয়াকত আলী সিনহা হত্যা মামলা সিনহা হত্যা মামলার রায়


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর