Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভেঙে গেছে সাড়ে ১২ কোটি টাকায় নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের বিম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৫৫

নেত্রকোনা: নেত্রকোনার বারহাট্টায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের একটি ‘গ্রেট বিম’ রোববার রাতে ভেঙে পড়েছে। তদারকির ঘাটতি, অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং রডের যথাযথ বাঁধাই না হওয়ায় মসজিদটি নির্মাণের মাঝপথে এই বিম ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা যায়, সরকার ২০১৮ সালে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটি মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। বলা হয়, এসব মসজিদ হবে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এতে নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া থাকবে অটিজম কর্নার, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামি গবেষণা ও দাওয়াত কার্যক্রম, হেফজখানা, শিশু শিক্ষার ব্যবস্থাসহ আরো অনেক কিছু। উপজেলা পর্যায়ের তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৪২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।

বারহাট্টা-আটপাড়া সড়কের কোর্টভবন এলাকায় বারহাট্টা উপজেলা মডেল মসজিদটি নির্মিত হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে স্টার লাইট সার্ভিসেস লিমিটেড এবং মেসার্স নায়মা এন্টারপ্রাইজ নামে দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল মসজিদটি নির্মাণের দায়িত্ব পায়। বর্তমানে মেসার্স নায়মা এন্টারপ্রাইজকেই সাইটে পাওয়া যাচ্ছে। নির্মাণ কাজের সময় শেষ হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকেই নির্মাণকাজে গাফিলতি চলছে। ঠিকাদার অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে। কলাম ও বিমে দশ মিলি রড ব্যবহার করা হয়েছে। সিমেন্ট অপর্যাপ্ত। সব রড মরিচা ধরা। নির্মাণের পর থেকে কিউরিং নেই। সরকারি প্রকৌশলী মাঝে মাঝে এলেও ঠিকাদারের লোকজনের সাথে দশ-পনের মিনিট কথা বলে চলে যায়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দফতর সম্পাদক মো. শহীদুর রহমান, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর উদ্দিন, বারহাট্টা হাফিজিয়া মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা আনোয়ারুল হক, রাজনীতিক শামছ উদ্দিন আহমেদ বাবুল, সমাজকর্মী মতিশ চন্দ্র সরকার নান্টু, গণমাধ্যমকর্মী লতিবুর রহমান খানসহ অনেকেই বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যারাতে হঠাৎ এক বিকট আওয়াজ শুনে আমরা ভয় পেয়ে যাই। পরে জানতে পারি যে, নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের তিনতলায় দক্ষিণ পাশের একটি গ্রেট বিম ভেঙে পড়েছে। আমরা সবাই ঘটনাস্থলে যাই ও আফসোস করি। এ সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা সাইট ইঞ্জিনিয়ার (ডিপ্লোমা) আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে এসে ছবি তুলতে নিষেধ করেন। তার কথা উপেক্ষা করে অনেকেই ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন।’

উপস্থিত স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার হোসেন প্রকল্পের ডিজাইন ও নির্মাণ ত্রুটির কথা স্বীকার করেন। এ সময় স্থানীয়রা ভেঙে পড়া বিমটি না সরানো এবং যেভাবে আছে সেভাবেই রাখার জন্য আনোয়ার হোসেনকে বলেন। কিন্তু সোমবার সকালে গিয়ে ভেঙে পড়া বিমের কোন চিহ্নই পাওয়া যায় নাই। আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন, ভেঙে পড়া গ্রেট বিমটি গভীর রাতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের প্ল্যান-ইস্টিমেট অনুয়ায়ী কাজ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজে উন্নতমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মডেল মসজিদটির নির্মাণকাজে ক্রটির ব্যাপারে অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি দুইদিন পরিদর্শনে এসেছি, সাইট ইঞ্জনিয়ারকে পাই নাই। বিষয়টি ডিসি স্যারকে অবগত করেছি। গ্রেট বিম ভেঙে পড়ার বিষয়টিও জানিয়েছি। স্যার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন।’

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমান বলেন, ‘পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে ত্রুটি ধরা পড়ায় আমরাই ওই গ্রেট বিমটিকে ভেঙে ফেলতে বলেছি।’

সারাবাংলা/এমও

মডেল মসজিদ মসজিদের বিম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর