প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব
১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৪৯
খাগড়াছড়ি: জেলার রামগড় উপজেলায় অবাধে চলছে পাহাড় কাটার মহা উৎসব। প্রশাসনের নাকের ডগায় পাহাড় খেকোরা নির্বিচারে কাটছে পাহাড়। বিভিন্নভাবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে ও কমিশনের বিনিময়ে এ চক্রটিকে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা প্রত্যক্ষ সমর্থন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
অবৈধভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলন করায় লাখ লাখ টাকা জরিমানা করে ফিরে যাবার পর আবারও পাহাড় কাটা শুরু করে চক্রটি। এতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে পরিবেশ কর্মীরা। অন্যদিকে নির্বিচারে পাহাড় কাটার জন্য প্রশাসনকে দুষছেন স্থানীয় জনগণ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,রামগড়ের পাতাছড়া, বলিপাড়া, চিনছড়ি পাড়া,বৈদ্যটিলা, কালাডেবা, সোনাইআগা, খাগড়াবিল, শ্মশানটিলা, নজিরটিলা ও ভতপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ১০-১৫টি পয়েন্টে নির্বিচারে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। আইন অমান্য করে এক্সকেভেটর (ভ্যাকু), কোদাল ও শাবল দিয়ে ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি ও লাল মাটির পাহাড় কাটা হচ্ছে। যার ফলে পাহাড়ের ওপরের অংশ ন্যাড়া করে উজাড় করা হয়েছে গাছপালা। কোথাও খাড়া ভাবে, আবার কোথাও কাটা হচ্ছে আড়াআড়ি ভাবে। আর কিছু কাটা হচ্ছে উঁচু চূড়া থেকে। এভাবে হরেক রকম কায়দায় কাটা হচ্ছে রামগড়ের বিভিন্ন পাহাড়। এসব মাটি অবৈধ ইটভাটা,পুকুর ভরাট ও রাস্তা সংস্কারসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
জানা যায়, রামগড়ের সোনাইআগা এবং তৈছালা ছড়ার ২টি জায়গায় বেশ কিছু শর্তে মাটি ও বালু উত্তোলনের ইজারা দেওয়া হয়। অথচ রামগড়ের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ৩০টি পয়েন্টে এক্সকেভেটর ব্যবহার করে নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় পাহাড়-টিলা ধ্বংস করার অভিযোগ পাওয়া যায়। রাস্তা তৈরি বা মেরামতের অজুহাতসহ নানা কায়দায় কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা। যার বিনিময়ে চক্রটির কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন নেয় কয়েকজন নেতা।
রামগড়ের নজির টিলা এলাকায় পাহাড়ের ওপর পরিবার নিয়ে থাকেন জসিম উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে নিজের ভিটের মাটি বিক্রি করতেন তিনি। খবর পেয়ে পাহাড় কাটার অপরাধে তাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে রামগড় উপজেলা প্রশাসন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুল শিক্ষক জানান, রামগড়-ফেনী মহাসড়কসহ উপজেলার প্রতিটি অলি গলির রাস্তাগুলো যেন একরকম মরন ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ইট ভাটার ব্যবহারের জন্য ডাম্পার, মিনিট্রাক দ্বারা সরবরাহ করা কাঠ ও মাটি রাস্তায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে সড়কটি। চরম জনদুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনেরর কোনো সঠিক নজরদারি নেই। যার জন্য অবাধে এসব পাহাড় কেটে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।
দলের নাম ভাঙিয়ে পাহাড় কাটার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম বলেন, কারও ব্যক্তিগত দায় আওয়ামী লীগ নিবে না। যারা এ বেআইনি কাজে নিয়োজিত আছে তারা নিজ দায়িত্বে এসব করছে। দল কাউকে এসবে সমর্থন বা সহযোগিতা দেয় না এবং দেবে না।
বাংলাদশে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম জানান, পাহাড় কাটা গুরুতর অপরাধ। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হবে।
এ বিষয়ে রামগড় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা মজুমদার বলেন, যখনই পাহাড় কাটার খবর পাই, তখনই অভিযানে যাই। গত কয়েকদিনের মধ্যে দুই ব্যক্তিকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। পরিবেশ সুরক্ষা জন্য দলীয় ব্যক্তি হলেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সারাবাংলা/এনএস