‘লবিস্ট নিয়োগ নয়, ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের চিঠি দিয়েছে বিএনপি’
১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:০২
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন— বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ নয়, উন্নয়ন সহযোগীদের (ডেভেলপমেন্ট পার্টনার) চিঠি দিয়েছে তার দল। চিঠিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, বিচারহীনতার মতো বিষয়গুলো রয়েছে।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। গত শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের কাছ থেকে কোনো রেসপন্স পাওয়া গেছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দিকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রেসপন্স তো আপনারা দেখতেই পারছেন।’
একটি চিঠির কপি দেখিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই চিঠি দেখিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। আপনারা দেখুন, এ চিঠি কাকে লেখা হয়েছিল এবং চিঠির বিষয়বস্তু কী ছিল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার সব ব্যক্তিদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ভ্যানগার্ড।’
‘আর তাই, বিএনপি তার আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবেই দেশের ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের সমর্থন চায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ চায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে দেশি-বিদেশি অংশীদারদের এই সরকরারের সব অপকর্ম সম্পর্কে অবগত করে রাখতে চায়। বিদেশে লেখা আমার ওইসব চিঠি কোনো লবিস্ট নিয়োগের বিষয় নয়, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহ্বান মাত্র,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘একজন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্তৃক লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টিও আজ আমাদের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। আমরা বলতে চাই, দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রবাসী কোনো পদক্ষেপ কোথাও নেন, দেশের প্রতি তার ভালোবাসার জন্য যদি কিছু করেন, সে পদক্ষেপের দায়িত্ব তার, বিএনপির নয়। ওই পদক্ষেপকে নৈতিক সমর্থনের দায়িত্ব বাদে অন্য কোনো দায়-দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না।’
‘তবে বিশ্বের দেশে দেশে প্রবাসীদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য এ ধরনের দেশপ্রেমিক পদক্ষেপকে বিএনপি সাধুবাদ জানায় এবং তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে,’— বলেন বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকার পুলিশ প্রধান, র্যাব প্রধানসহ সাত জন কর্মকর্তার ভিসা বাতিল এবং র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এটি আড়াল করার জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকায় লবিস্ট নিয়োগের তথ্য মার্কিন সরকারি ওয়েবপেজে প্রকাশ হয়েছে। এ প্রেক্ষিতকে উপলক্ষ করে সরকার তাদের সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে আড়াল করতে, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের কৌশল নিয়েছে।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভিসা বাতিল ও নিষেধাজ্ঞা, সরকার ও আওয়ামী লীগের লবিস্ট নিয়োগ সম্পর্কে বিএনপি বক্তব্য এবং সত্যকে ধামাচাপা দিতে বিএনপির বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সরকারের মিথ্যাচার ও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘দেশের সীমানা পেরিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ গণতন্ত্রহীন, মানবাধিকারহীন, ন্যায়বিচারহীন একটি দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার হরণের জন্য সরকারি বাহিনী ব্যবহার করে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, রাজনৈতিক গায়েবি মামলার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত এই সরকারের অপকর্মের ফিরিস্তি আজ সর্বজনবিদিত। ফলে, তাদের অপকর্মের জন্য যদি কারও ভিসা বাতিল হয় এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, তা গোটা জাতির জন্য লজ্জাষ্কর এক কলঙ্কজনক বিষয়।’
‘কিন্তু এই কানকাটা নির্লজ্জ সরকার একে জাতীয় সংকট হিসাবে গণ্য না করে বেহায়ার মতো তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য অপরাধীদের বাঁচানোর অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশ হলে সরকার সবার আগে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি কার্যধারা শুরু করত, গ্রেফতার করত এবং জাতিকে কলঙ্কের দাগ থেকে উত্তরণের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে জাতীয় সংকট উত্তরণের চেষ্টা করত,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আরও বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার হাঁটছে উল্টো পথে। গুমের শিকার পরিবারের বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, খুনিদের রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে প্রমাণ হয়, সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা এসব খুন গুমের সঙ্গে জড়িত। তাই বিএনপি অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ চায়, খুন-গুমের সঙ্গে জড়িত নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সবার নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ চয়। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা চায়, গণতন্ত্র ফেরত চায়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাকে ধামাচাপা দিয়ে সরকার জনগণের করের টাকায় আমেরিকায় লবিস্ট নিয়োগ করেছে, যা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে স্বীকৃত। বিএনপি মনে করে, জনগণের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টিই প্রমাণ করেছে। সরকার জড়িত না থাকলে ওই সাত কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করত।’
তিনি বলেন, ‘২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সজিব ওয়াজেদ জয়ের সংশ্লিষ্টতায় ৯০ লাখ (৯ মিলিয়ন) ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে। এর প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবপেজে আছে। বিএনপি জানতে চায়, সজিব ওয়াজেদ জয়ের ওই টাকার উৎস কী ছিল, কীভাবে ওই টাকা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছিল?’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর