Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে প্রতি ঘণ্টায় ২৪ গুণ বেশি সংক্রমণ

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:০৫

ঢাকা: দেশে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ছয় লাখ দুই হাজার ৭৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯ হাজার ২৫৫ জনের মাঝে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। কিন্তু জানুয়ারি মাসে দেশে ৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করে দুই লাখ ১৩ হাজার ২৯৪ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের ৩১ দিন প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার ৩২৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৮৭ জনের মাঝে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

অথচ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশে প্রতি ঘণ্টায় ৮১০ টি নমুনা পরীক্ষা করে ১২ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। অর্থাৎ দেশে ডিসেম্বর মাসের তুলনা জানুয়ারি মাসে প্রতি ঘণ্টায় ২৪ গুণ বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে ঘণ্টাপ্রতি সংক্রমণ শনাক্তের হার ১.৫৪ শতাংশ হলেও জানুয়ারিতে তা দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরের সই করা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে ৩১ জন।

সরকারি এই বিজ্ঞপ্তির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮২ টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩৩ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে ২৮ হাজার ৩৯৪ জন।

জানুয়ারি মাসের পরিসংখ্যান

জানুয়ারি মাসে দেশে ৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মাঝে দুই লাখ ১৩ হাজার ২৯৪ নমুনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় সরকারিভাবে। এই মাসে সংক্রমণ শনাক্তের গড় হার ছিল ২১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

জানুয়ারি মাসে দেশে ৩২২ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে বলে জানানো হয় সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে। এই মাসে মৃত্যুহার ছিল ০ দশমিক ১৫ শতাংশ।

ডিসেম্বর মাসে তুলনায় জানুয়ারির সংক্রমণ পরিস্থিতি

দেশে ২০২১ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপরে আগস্ট থেকে এই সংখ্যা কমে আসে। অক্টোবরে ১৩ হাজার ৬২৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হলেও নভেম্বরে ছয় হাজার ৭৪৫ ও ডিসেম্বর মাসে দেশে ৯ হাজার ২৫৫ নমুনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

ডিসেম্বর মাসের পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে দেখা যায়, ছয় লাখ দুই হাজার ৭৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এই মাসে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮১০টি। প্রতি ঘণ্টায় ৮১০টি নমুনা পরীক্ষা করে ১২ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় এই মাসে। এর মাঝে প্রতি ঘণ্টায় মৃত্যু বরণ করেন শূন্য দশমিক ১২২ শতাংশ।

তবে এই সব পরিসংখ্যান পালটে যায় জানুয়ারি মাসের ৩১ দিনে। এই মাসে প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার ৩২৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মাঝে প্রতি ঘণ্টায় সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২৮৭ নমুনায়। সংক্রমিতদের মাঝে প্রতি ঘণ্টায় মারা যায় শূন্য দশমিক ৪৩২ শতাংশ।

অর্থাৎ ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারি মাসে দেশে বেড়েছে কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। ডিসেম্বরে সংক্রমণ শনাক্তের হার এক দশমিক ৫৪ শতাংশ হলেও জানুয়ারিতে এটা হয় ২১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের মাস জানুয়ারি

২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো তিনজনের নমুনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২১ সালের জুলাই মাসে। এই মাসে দেশে ১১ লাখ ৩১ হাজার ৯৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করে তিন লাখ ৬২ হাজার ২২৬ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই মাসে প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার ৯৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মাঝে প্রতি ঘণ্টায় ৫৮৪ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। প্রতি ঘণ্টায় মারা যার ১১ জন।

একইবছরের আগস্ট মাসেও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকে। এই মাসে ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫১টি নমুনা পরীক্ষা কর দুই লাখ ৫১ হাজার ১৩৪ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই মাসে প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার ১১৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মাঝে প্রতি ঘণ্টায় ৩৩৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। প্রতি ঘণ্টায় মারা যার ৮ জন।

তবে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা দেখা যায়। এই মাসে ৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৪ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয়। এই মাসে প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার ৩২৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মাঝে প্রতি ঘণ্টায় ২৮৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। প্রতি ঘণ্টায় মারা যার ০ দশমিক ৪৩২ জন।

অর্থাৎ দেশে চলতি জানুয়ারিতে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে মৃত্যু হার।

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ঘণ্টা প্রতি ৭৪৮ নমুনা পরীক্ষা করা হলেও মাত্র ৯ দশমিক ৩৬ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয়।

জানুয়ারিতে সংক্রমণের হার অতীতের চেয়েও বেশি

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে তিন সপ্তাহের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এই সময়ে দেশে সংক্রমণ বেড়েছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সংক্রমণ শনাক্তের ৯৫তম সপ্তাহ অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে দুই হাজার ৯২৪ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ সময় সাপ্তাহিক সংক্রমণ শনাক্তের দৈনিক হার ছিল দুই দশমিক ২৪ শতাংশ। এর আগের ১০ সপ্তাহ অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে সাপ্তাহিক সংক্রমণের দৈনিক হার ছিল দুই শতাংশের নিচে।

২ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি অর্থাৎ ৯৬তম সপ্তাহে দেশে ছয় হাজার ৩০০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ৯৫তম সপ্তাহের চাইতে ৪৬ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। ৯ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি অর্থাৎ ৯৭তম সপ্তাহে দেশে ২০ হাজার ২৮০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ৯৬তম সপ্তাহের চাইতে ৩১ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি।

১৬ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি অর্থাৎ ৯৮তম সপ্তাহে দেশে ৬১ হাজার ৭৪১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ৯৭তম সপ্তাহের চাইতে ৩২ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের ১০ গুণ বেশি সংক্রমণ শনাক্ত বেড়েছে ১৬ থেকে ২২ জানুয়ারিতে।

২২ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি অর্থাৎ ৯৯তম সপ্তাহে দেশে ৯৮ হাজার ৯১৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ৯৮তম সপ্তাহের চাইতে ৬২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।

প্রথমবার টানা ৭ দিন সংক্রমণের হার ৩১ শতাংশের বেশি

দুই বছর দুই ঢেউয়ের পর এবার দেশে চলছে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবেই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সংক্রমণে। তবে আগের দুইবারের তুলনায় এবারে অনেক দ্রুতই সংক্রমণ শনাক্তের হার রেকর্ডের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কয়েকদিনের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টাসহ সবশেষ সাত দিনেই নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩১ শতাংশের বেশি। এমন ঘটনা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে আর কখনো ঘটেনি।

এর মাঝে ২৩ জানুয়ারি দেশে ৩৪ হাজার ৮৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৯০৬টি নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। এদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ।

২৪ জানুয়ারি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এদিন ৪৫ হাজার ৮০৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ হাজার ৮২৮টিতে সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

২৫ জানুয়ারি ৪৯ হাজার ৪৯২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬ হাজার ৩৩ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

২৬ জানুয়ারি ৪৯ হাজার ৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করে সংক্রমণ পাওয়া যায় ১৫ হাজার ৫২৭টিতে। এদিন সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

২৭ জানুয়ারি দেশে ৪৯ হাজার ৪২৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৮০৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এদিন সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯৮২ শতাংশ।

২৮ জানুয়ারি দেশে ৪৬ হাজার ২৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৪৪০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এদিন সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

২৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ৩৩ হাজার ৩৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৩৭৮টি নমুনায় পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ।

তবে জানুয়ারি মাসের শেষ দুই দিনে সংক্রমণ শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের নিচে নেমে আসে।

টানা ৭ দিন সংক্রমণের হার ৩১ শতাংশের বেশি

করোনার তিনটি ঢেউয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিন বারই সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। ৩১ এবং ৩২ শতাংশ অতিক্রমের নজিরও রয়েছে। তবে কোনোবারই সংক্রমণের হার টানা পাঁচ দিন ৩১ শতাংশের বেশি ছিল না।

এর মধ্যে করোনার প্রথম ঢেউয়ে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের ৩০ শতাংশ অতিক্রম করেছে মাত্র দুই দিন। ২০২০ সালের ১২ জুলাই এই হার ছিল ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। আর ওই বছরেরই ৩ আগস্ট সংক্রমণের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি তুলনামূলকভাবে কম দিন ছিল। তবে সংক্রমণের হার প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় ছিল অনেক বেশি। এবারে ১৪ দিন সংক্রমণের হার পাওয়া গেছে ৩০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে আট দিন সংক্রমণের হার ছিল ৩১ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ২০২১ সালের ৬ থেকে ১০ জুলাই— এই পাঁচ দিনের প্রতিদিনই সংক্রমণের হার ছিল ৩০ শতাংশের বেশি। ৬, ৭ ও ৮ জুলাই সংক্রমণের হার ছিল ৩১ শতাংশের বেশি।

এর ক’দিন পরেই ২১ থেকে ২৫ জুলাই— এই পাঁচ দিনও সংক্রমণের হার টানা ৩০ শতাংশের বেশি ছিল। এর মধ্যেও আবার ২২, ২৩ ও ২৪ জুলাই সংক্রমণের হার ছিল ৩১ শতাংশের বেশি। তবে টানা পাঁচ দিন ৩১ শতাংশের বেশি সংক্রমণের হার এবারে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে এসেই প্রথম দেখা গেল।

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতেই হবে

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণেই মূলত সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে সংক্রমণ বাড়িয়েছে, একই ধরনের প্রবণতা বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে। কারণ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘোষণাই বলছে, দেশে এই ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এরই মধ্যে ঘটে গেছে। এ বছর করোনাভাইরাসের যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তার সিংহভাগেও মিলেছে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি।

ওমিক্রনের প্রভাবে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কত দিন থাকবে, সে বিষয়ে অবশ্য এখনই কিছু বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রভাব যাই থাকুক, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পাশাপাশি আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দিকে সরকারকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। বলছেন, সংকটের এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একেবারেই বাইরে চলে যাবে, যার জন্য ভুগতে হবে দীর্ঘ সময়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে কি না কিংবা কবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে— এসব বিষয়ে বলার মতো যথেষ্ট তথ্য এখনো কারও কাছেই নেই। আমাদের দেশেও এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আরও কমপক্ষে দুই থেকে তিন সপ্তাহ চলতে পারে। সবাই গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে এরপর হয়তো সপ্তাহখানেক স্থিতাবস্থা থাকবে। তারপর সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে পারে।’

তবে স্বাস্থ্যবিধি বা বিধিনিষেধ নিয়ে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল। তিনি বলেন, ‘সরকার বিধিনিষেধ দিয়েছে। কিন্তু সেগুলো কার্যকর করতে প্রশাসন কী করছে? সরকার নির্দেশনা দিলেও প্রশাসনের তেমন তৎপরতা দেখছি না। স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্ব সরকারের একার নয়, এর সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। সেটিই হচ্ছে না। সেটি করার পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীদের অক্সিজেনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা এক লাখ হলে ভালো হতো। বাড়তি জনবল নিয়োগ দিয়ে হলেও এই কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে।’

ওমিক্রনের প্রভাবে সারাবিশ্বেই করোনা সংক্রমণের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে জানিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশেও দুয়েকদিনের মধ্যে হয়তো সংক্রমণের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষায় সেখানে ১৫ হাজারের বেশি শনাক্ত হচ্ছে, ১ লাখ নমুনা পরীক্ষা হলে তো এই সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

তবে সংক্রমণের সংখ্যায় মনোযোগ না দিয়ে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী হতে আহ্বান জানালেন ডা. মুশতাক। তিনি বলেন, ‘যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে হবে। পরীক্ষা করার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা আক্রান্তদের ফলোআপের আওতায় আনতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে আইসোলেশন সেন্টার করতে হবে। এসব না করতে পারলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কোথায় গিয়ে থামবে, বলা মুশকিল।’

সারাবাংলা/এসবি/এএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর