‘দারিদ্র্য মোকাবিলায় সামনের কাতারে কাজ করবে কৃষি’
২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:৩৭
ঢাকা: পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, দারিদ্র্য মোকাবিলা করাই আমাদের প্রথম এবং প্রধান সংগ্রাম। সেজন্য দারিদ্র্য মোকাবিলায় সামনের কাতার থেকে কাজ করবে কৃষি। কৃষিকে ন্যায়ভাবে এগিয়ে নিতে হবে। কৃষিতে একটু নজর দিতে হবে। সরকার কৃষি নিয়ে উদারভাবে কাজ করছে। দারিদ্র্য নিরসনে কৃষির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কৃষি কাজে নানা ধরনের ভর্তুকি দিচ্ছে। শুধু সার ও বীজ নয়, কৃষি যান্ত্রিকীকরণেও ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি)- এর মিলনায়তনে ‘স্ট্রেনদেনিং স্মল হোল্ডারস ফার্মস অ্যান্ড রুরাল এন্টারপ্রাইজ টু বেটার কপি উইথ ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন দ্যা ভালনারেবল হাওর রিজন অব বাংলাদেশ প্রজেক্ট’ নিয়ে আলোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারের পরিচালক ড. মো. বখতিয়ার হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার।
দারিদ্র্য নিরসনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘অসম আইনের বেড়াজালে দরিদ্র গোষ্ঠী জড়িত থাকে। এটা খুবই কষ্টের ব্যাপার। দরিদ্র মানুষ পায় না তাদের অধিকার। ফলে নিজেদের অবস্থানেরও কোনো পরিবর্তন করতে পারে না। তবে মানুষের জীবনে স্বস্তি নিয়ে আসতে বর্তমান সরকার কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘হাওর আমার এলাকা। হাওরে আমার জন্ম। হাওরের পানি ও হিজল গাছের ছায়ায় বড় হয়েছি। বাঙালি জাতির আধুনিক সোপানের পথ কৃষি। এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলা হচ্ছে। তবে মৌলিক বিপ্লব কৃষির হাত ধরেই। মাছ ধরা, ধান চাষ করা সবই আমাদের সংস্কৃতি ও সংগ্রামের অংশ। অনেকে বলে হাওরে জীবন কষ্টের। আমি এই কথায় দ্বিমত পোষণ করি। কোনো জীবনই কষ্টের নয়, কষ্টের একমাত্র বিষয় হলো দারিদ্র্য। থাকা ও খাওয়ার নিশ্চতয় পেলেই কষ্ট থাকার কথা নয়। হাওরের খোলশে, পুঁটি ও ট্যাংরা মাছ ধরে খাওয়ার আলাদা একটা মজাও আছে।’
দারিদ্র্য প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করছি। জন্মগতভাবে দরিদ্র মানুষের প্রাকৃতিক পাওনা যেগুলো আছে সেগুলো পেলেই তার কষ্ট অনেকটা কমে যাবে। উদাহরণ দিচ্ছি- আমার এলাকায় চার থেকে পাঁচটি বিল আছে। বিলগুলোর নাম আমার মুখস্ত। সরকার বিলগুলো ইজারা দিয়ে কিছু পয়সা আয় করে। ছোটবেলায় এসব বিলে পলু দিয়ে, জাল দিয়ে আমি মাছ ধরতাম। কিন্তু আর কেউ মাছ ধরতে পারে না। বিলগুলো ভূমি মন্ত্রণালয় ইজারা দিয়ে দিল। কেন ইজারা দিল আমি জানি না। তবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুক্তি বিলগুলো ইজারা না দিলে এক দিনেই সব খেয়ে ফেলবে। ইজারাদাররা নাকি উন্নয়ন করে।’
এমএ মান্নান বলেন, ‘বিলে মাটিকাটা প্রকল্প কীভাবে তৈরি হয়- তা আমার জানা আছে। আষাঢ় মাসে আমরা সরকারি খরচে লাখ-কোটি মাছের পোনা ছাড়ি জনগণের জন্য। দুই তিন মাস পর সেই পোনা কার পেটে যায়, কীভাবে বিলুপ্তি হয় জানি না। তবে কোন মহাজনের পেটে যায় মাছের পেছনে হেঁটে হেঁটে আমরা এগুলো বের করতে পারি। অথচ দরিদ্র মানুষ এসব মাছ খেতে পায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু অন্যায় আইন আছে- যেমন খাল মানে আমাদের নিজেদের জমি। কিন্তু খালগুলো সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারে না। খালের আশেপাশে কিছু গাছপালা পড়ে যায়, সেগুলোও ব্যবহার করতে পারে না সাধারণ মানুষ। এই বিষয়ে কিছু আইন কানুন আছে। যেটাকে বেড়াজাল বলা যায়। অসম আইনের বেড়াজালে দারিদ্র্য মানুষগুলো জড়িয়ে পড়ে। এটা খুবই কষ্টের ব্যাপার। মানুষের জীবনে স্বস্তি নিয়ে আসতে কাজ করছে সরকার।’
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম