ডায়ালাইসিস বন্ধে কিডনি হাসপাতালের রোগীরা রাস্তায়, বিকেলে চালু
২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২০:০১
ঢাকা: রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে (নিকডু) সকালে হঠাৎ করেই রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ বলে জানানো হয়। প্রতিবাদে সড়কে নেমে আসেন ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনরা। রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হলে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে বিকেলে ফের নিকডুতে চালু করা হয় ডায়ালাইসিস সেবা।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের সামনে সড়ক অবরোধ করেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
শেরেবাংলা নগর থানার ডিউটি অফিসার এসআই নুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুপুর ১২টার কিছু আগে কিডনি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা রাস্তায় নেমে আসেন। তারা শ্যামলী শিশুমেলা ও মিরপুর রোডের সড়কের দুইপাশে অবস্থান নেন। এতে এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। আমরা তখন তাদের অনুরোধ করি সরে আসার জন্য। পরে কিডনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ কর্মকর্তারা এসে কথা বলে তাদের মূল সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানালে রাস্তা ছাড়েন।’
মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) কাজী হানিফুল ইসলাম বলেন, ‘ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের প্রতিবাদে কিডনি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিডনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে তাদের বুঝিয়ে বললে তারা মূল সড়ক ছেড়ে দেন। পরে শুনেছি ডায়ালাইসিস ফের শুরু হয়েছে।’
হঠাৎ নিকডুতে ডায়ালাইসিস বন্ধ কেন?
কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মহিম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে আম্মুর ডায়ালাইসিস করানোর জন্য এখানে আসি। এসে শুনতে পারি ডায়ালাইসিস বন্ধ। পরে দেখি এমন আরও অনেকেই এসেছিলেন, কিন্তু সেবা বন্ধের কারণে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। পরে আমরা রাস্তা অবরোধ করি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা না কি আগে প্রেস নোট দিয়েছিল; কিন্তু সেটা তো আর আমাদের জানানো হয়নি।’
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডায়ালাইসিস একেবারে বন্ধ— বিষয়টা ঠিক না। দুয়েক জন রোগীকে আমরা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ডায়ালাইসিস সেবা দিচ্ছি। পাশাপাশি কিছু রোগীকে অন্যান্য হাসপাতালে শিফট করে দেওয়া যায় কি না সেটি আমরা দেখছি। কিন্তু এভাবে সব রোগীদের দায়িত্ব নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর পরিচালিত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে ‘সেন্ডোর’ নামের ভারতীয় একটি কোম্পানি রোগীদের ডায়ালাইসিস দিয়ে আসছে। তাদের সঙ্গে আমাদের ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি থাকায় এ দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে। যেহেতু তাদের সঙ্গে আমাদের আরও দীর্ঘদিন সময় চুক্তি থাকছে, সেহেতু তাদের কিছু বলতেও পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যারা নিয়মিত সেবা নিয়ে নিয়ে থাকেন তাদের জন্য আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু আজ সকালে যেটা হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের হাসপাতালের কাছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেন্ডোরের কিছু বিল বকেয়া আছে। সেই বিল পেতে দেরি হওয়ার কারণে তারা রোগীদের জিম্মি করে ডায়ালাইসিস সেন্টার তালা দিয়ে চলে যায়।’
ডা. মিজান বলেন, ‘এটিতো আমাদের হাসপাতালের কোনো সমস্যা নয়, স্যানডোর তালা মেরে চলে গেছে, এটা তাদের দায়। তারা বলছে, টাকা না পেলে ডায়ালাইসিস সেন্টার খুলবে না। আমরা তাদের বলেছি, টাকাটা প্রসেসিংয়ে আছে। সরকারি টাকা পেতে তো একটু দেরি হতেই পারে। এ জন্য সেবা বন্ধ করে দেওয়াটা অন্যায়।’
তিনি বলেন, ‘স্যানডোর শুধু আমাদের হাসপাতালের রোগীদেরই ডায়ালাইসিস করে না, সব হাসপাতালেই তারা ডায়ালাইসিস করে থাকে। আমাদের কাছে তাদের কিছু বিল বকেয়া আছে, সেটিও প্রসেসিংয়ের মধ্যে আছে। এখন তারা রোগীদের জিম্মি করে ডায়ালাইসিস সেন্টার তালা দিয়ে বন্ধ করে চলে গেছে। যে কারণে রোগীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের নিয়মিত রোগীদের ডায়ালাইসিসের কোনো বিল বাকি নাই। করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য হাসপাতাল থেকেও এই হাসপাতালে এসে ডায়ালাইসিস করিয়েছে অনেক রোগী। কোভিডের কারণে কুর্মিটোলা ও মুগদা হাসপাতাল থেকেও রোগী এসেছে এখানে ডায়ালাইসিসের জন্য। এজন্য এক্সট্রা পেমেন্ট দিতে হবে, সেটা তারা চাচ্ছে। এই পেমেন্টও তারা পেয়ে যাবে, কিছুটা সময় দরকার।’
পরিচালক বলেন, ‘ডায়ালাইসিস সেবা যাতে বন্ধ না থাকে, সেজন্য আমার পক্ষ থেকে যতদূর চেষ্টা করা দরকার তা করব। রোগী ও তাদের স্বজনরা রাস্তা অবরোধ করলে আমি গিয়ে তাদের বুঝিয়েছি যে, আমরা শিগগিরই শুরু করছি। এরপর স্যানডোরের সাথে কথা বলেছি এবং তাদের জানিয়েছি যে, তারা দুয়েক দিনের মধ্যেই বকেয়া টাকা পেয়ে যাবে। পরে তার কার্যক্রম শুরু করে।’
বিকেল সাড়ে তিনটায় ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু
বিকেল চারটার দিকে নিকডু পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ডায়ালাইসিস সেন্টারের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা স্যানডোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এরপরে সকাল থেকে যারা অপেক্ষা করছেন সেবা নেওয়ার জন্য তারা সিরিয়াল অনুযায়ী ডায়ালাইসিস নেওয়া শুরু করেছেন।’
সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলার জন্য স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বিডি প্রাইভেট লিমিটেডের প্রশাসন ও বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক মঞ্জুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাথে ১০ বছরের চুক্তিতে কিডনি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া শুরু করে স্যানডোর। সপ্তাহে সোমবার এবং বুধবার কম টাকায় ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হয়ে থাকে দেশে কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় এই বিশেষায়িত হাসপাতালে। একজন রোগীর একবার ডায়ালাইসিস নিতে দুই হাজার ৭০০ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ৫১০ টাকা। বাকি টাকা হাসপাতাল বহন করে। এই সুবিধায় বছরে ২৯ হাজার ৬০৯টি সেশনের (৪ ঘণ্টায় এক সেশন ধরে) অনুমোদন রয়েছে সরকারের। এর চেয়ে বেশি হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম