‘রাজীব যদি জানতো, ওর জন্য এত মানুষ কাঁদছে’
১১ এপ্রিল ২০১৮ ২২:৪০
। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।
ঢাকা: অসুস্থ হবার পর যেভাবে সবাই ওর পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু যদি ও বেঁচে থেকে শুনতো, এত মানুষ ওর পাশে দাঁড়িয়েছে, এত মানুষ ওর জন্য চোখের পানি ফেলছে- তাও শান্তি পেত। কিন্তু আল্লাহ্ যদি আর নাই বাঁচায়, এত মানুষের দোয়া, পরিশ্রম, মানবতা…এটাও দেখেও যেতে পারলো না।
বুধবার (১১ এপ্রিল) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসিএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সামনে কথাগুলো বলছিলেন রাজীবের খালা জাহানারা বেগম। যার কাছে ছোটো বেলা থেকে বেড়ে ওঠেছিলেন রাজীব। তার কাছেই শিখেছেন লেখাপড়া।
মঙ্গলবার ভোর থেকে রাজীবের শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হওয়াতে তারা চাইছেন, হাত হারিয়েও যেন তাদের রাজু বেঁচে থাকে, রাজুকে কেবল তারা চোখের সামনে দেখতে চান।
তিনি বলেন, দেশের কত লোক ওর পাশে দাঁড়াইছে, যাদেরকে আমরা চিনিও না। আল্লাহকে বলি, তুমি ওকে একটু বাঁচাও, হাত না থাকুক-কেবল বেঁচে থাকুক আমাদের রাজু। হাত ওর দরকার নেই, ও শুধু বেঁচে থাকুক, রাজু হারার কষ্ট আমরা সইতে পারবো না। ওকে শুধু আমরা চোখের সামনে দেখতে চাই কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
রাজীবকে কখন এই পোশাকি নামে ডাকেননি তারা, রাজীব তাদের কাছে ‘রাজু।’ জাহানারা বেগম বলেন, প্রবাদ আছে হাতের লাঠি-রাজু আমাদের সকলের হাতের লাঠি। ওরে যেমন আমরা মানুষ করছি, ও সবসময় আমাদের ডাকে সাড়া দিত।
চোখ ভরা জল নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কিছু দরকার হলেই রাজুর ডাক পরতো। কারও বাসা বদল, কাউকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে, কারও কম্পিউটারে কোনও কাজ করতে হবে, কাউকে বাসে বা লঞ্চে তুলে দিতে হবে, আমাদের কারও বাচ্চার স্কুলে যেতে হবে, সব কিছুতে আমাদের রাজু। কারও কিছু দরকার হলেই রাজুরে ফোন দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
সেই রাজুর এখন কেবল গলার কাছ দিয়ে শ্বাসটুকু ওঠানামা করছে বোঝা যায়। পাশ থেকে ছোট খালা খাদিজা বলেন, গলা আর বুকের উঠা-নামা দেখে বুঝি শুধু শ্বাসটুকু নিচ্ছে ছেলেটা।
অষ্টম শ্রেণি থেকে রাজীব এই বড় খালার কাছেই বড় হয়েছেন। তার আগে ছিলেন নানা বাড়িতে। তখন মামা-খালারাও ছোট, কারও বিয়ে হয়নি। সবার কাছে রাজু ছিল চোখের মনি।
নিজের গর্ভের ছেলের চেয়ে বড় বোনের ছেলে এই রাজু তার কাছে কোনও অংশে কম নয়। জানাহারা বলেন, আমার ছেলেটা মতিঝিল আইডিয়ালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে, তার পরীক্ষা সামনে, পড়ালেখার প্রচুর চাপ। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালে পরে আছি-কেবল চাই ছেলেটা বেঁচে উঠুক। আমার ছেলেকে বলি, তোমারতো মা-বাবা আছে-তোমার পাশে তারা দাঁড়াবে, কিন্তু ওর (রাজীব) তো মা-বাবা কেউ নেই, ওর পাশে থাকি।
যেদিন দুর্ঘটনা ঘটলো সেদিন থেকে হাসপাতালে সেদিন থেকে আমরা সবাই হাসপাতালে। আমরা যদি রাজুকে হারাই-জানি না তখন কী হবে।
দেশবাসীর কাছে রাজীবের জন্য দোয়া চান তিনি। বলেন, সকলকে বলি-কোনও টাকা পয়সার দরকার নাই, সবাই শুধু ওর জন্য দোয়া করবেন, আমাদের রাজু যেন বেঁচে থাকুক। আমাদের কাছে ফিরে আসুক।
এদিকে, রাজীবের অবস্থা সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করেই আরও খারাপ হয়ে যায় বলে সারাবাংলাকে জানান ঢামেক হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই তার প্রেসার কমে যাচ্ছে, হার্টের পাম্পিং কমে যাচ্ছে। ওষুধ দিয়ে সেগুলো বাড়ানো হচ্ছে।
ছেলেটাকে নিয়ে এত আশাবাদি ছিলাম, কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে-সেটা আমরা আশা করিনি।
সারাবাংলা/জেএ/এমআইএস