খরচ বাড়ছে গোপালগঞ্জের পল্লী অবকাঠামো প্রকল্পে
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৩৮
ঢাকা: বড় অংকের খরচ বাড়ছে ‘গোপলগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পে। এক্ষেত্রে মূল ব্যয়ের তুলানায় বাড়ছে ৬২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সেই সঙ্গে বাস্তবায়নের মেয়াদও বাড়ছে দুই বছর। এজন্য প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এদিকে গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ৬৩৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা। অনুমোদিত ব্যয়ের ৫৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশ।
পরিকল্পনা মিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
সংশোধনের কারণ হিসেবে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, আমরা পিইসি সভায় বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পে ২৭১টি সড়ক নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া কিছু সড়কে নতুনভাবে ব্রিজ কালভার্ট অন্তর্ভুক্তি, অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণের চাহিদা ও স্কিমের দ্বৈততা, ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি এবং হালনাগাদ রেট সিডিউল (২০১৯) অনুযায়ী নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত স্কিমগুলোর ব্যয় প্রাক্কলনসহ নানা কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে। এসব কারণে ব্যয় ও মেয়াদও বাড়ছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি মোট ৬১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে হাতে নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবাযনের জন্য ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে মোট ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি হতে ২০২২ সালের ৩০ জুন বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম সংশোধনী একনেকে অনুমোদন পায়। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা ও জনগুরুত্ব বিচেনায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ১০০টি ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ১৭১টি অর্থাৎ মোট ২৭১টি সড়ক নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তি, জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কিছু স্কিম বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে তা বাদ দেওয়া এবং এলজিইডির হালনাগাদ রেট সিডিউল কার্যকর হওয়ায় প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের একক ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মোট ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি হতে ২০২৫ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এরপর প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা। আরডিপিপি (সংশোীধিত প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠনের সময় মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন যাচাইকালে বাস্তবতার জন্য পূর্ত কাজের ৭টি অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস বৃদ্ধি করা হয়। ফলে এই অঙ্গগুলো বিবেচনার জন্য গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর পুনরায় অনুষ্ঠিত হয় পিইসি সভা। ওই সভায় সাতটি অঙ্গের ব্যয় পরিমাণ হ্রাস বৃদ্ধির বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত হওয়ায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৩৭ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়ন, এবং ৩১৬ মিটার উপজেলা সড়কে ব্রিজ, কালভার্ট, বৌলতলী জিসি-ঘোনাপাড়া-ফুকরা আরএইচডি সড়কে ২০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ। এছাড়া ৫৭ দশমিক ১০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, ১৩ দশমিক ২০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন (এইচবিবি), ৫৯৪ দশমিক ২০ মিটার ইউনিয়ন সড়কে ব্রিজ বা কালভার্ট, গ্রাম সড়ক উন্নয়ন এবং গোপালগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডির অফিস সম্প্রসারণ করা হবে। পাশাপাশি বাসভবন ও বাউন্ডারি ওয়াল পুনরায় নির্মাণ, ৩১টি গ্রোথ-সেন্টার গ্রামীণ হাটবাজার উন্নয়ন, ৬৪টি বোট ল্যান্ডিং নির্মাণ, ৮৮ দশমিক ১২ কিলোমিটার খাল পুনরায় খনন, ৫টি ১৯৭১ সালের ম্যুরাল নির্মাণ, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসন, খাল পুনরায় খনন করা হবে। আরও যেসব কাজ করা হবে সেগুলো হলো- স্লোপ প্রটেশশন ও পাড় উন্নয়ন, সড়ক প্রশস্তকরণ, কোটালীপাড়া উপজেলা কমপ্লেক্স লেক পুনরায় খনন পাড় উন্নয়ন, স্লোপ প্রটেশশন, পাড় উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন, মধুমতি নদীর পাটগাতি লঞ্চঘাটে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল বোট ল্যান্ডিং র্যাম, ঘাঘর নদী-পয়সারহাট ওয়াপদা খাল পুনরায় খনন, পাড় উন্নয়ন, স্লোপ প্রটেশশন ও সৌন্দর্যবর্ধন এবং টুঙ্গিপাড়া লঞ্চঘাটে বাঘিয়া নদীর তীরে বোট ল্যান্ডিং ঘাটলা নির্মাণের অবশিষ্ট কাজ যেমন- পুর্ত কাজ, নদী পুনরায় খনন, ল্যান্ড স্ক্যাপিং, বৃক্ষরোপন এবং ইলেকট্রিক্যাল কাজ ইত্যাদি।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ২৭১টি সড়ক নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তি: ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগে অনুষ্ঠিত প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায় টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার নতুন ২৭১টি সড়ক এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশের জন্য এই সড়কগুলো মাটির কাজসহ এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কিছু সড়কে নতুনভাবে ব্রীজ কালভার্ট অন্তর্ভুক্তি: কিছু সড়কে ব্রীজ বা কালভার্টের প্রয়োজন রয়েছে, যা আগে অনুমোদিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বর্তমানে দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি: কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ২টি ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে মোট ৬৭ কোটি টাকার বরাদ্দ ছিল। বর্তমানে অ্যাপ্রোচ সড়কে প্রণীত ডিজাইন অনুযায়ী ৫৪০ মিটার ভায়াডাক্ট কাম অ্যাপ্রোচ স্ল্যাব নির্মাণের জন্য প্রায় ৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। ফলে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে ৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণের চাহিদা ও স্কিমের দ্বৈততা: গোপালগঞ্জ জেলার সংসদ সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার জন্য কিছু সংখ্যক নতুন স্কিম আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া অনুমোদিত ডিপিপিতে কিছু সড়ক ভিন্ন নামে একাধিকবার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তা সংশোধন করা হয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি: অনুমোদিত ডিপিপিতে ৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। পূর্ত কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ৮ হেক্টর হতে ১২ হেক্টর হয়েছে এবং এ খাতে ব্যয় ১০ কোটি টাকা হতে ২৫ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
হালনাগাদ রেট সিডিউল (২০১৯) অনুযায়ী নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত স্কিমগুলোর ব্যয় প্রাক্কলন: অনুমোদিত মূল ডিপিপির প্রাক্কলন ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের এলজিইডির রেট সিটিউল অনুসারে প্রস্তুত করা হয়েছিল। এরমধ্যে নির্মাণ সামগ্রীর বাজার দর এবং শ্রমিক মজুরি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে তাই এলজিইডির বিভাগীয় দর তালিকা কয়েকবার সংশোধিত হয়েছে। এ জন্য হালনাগাদ রেট সিডিউল অনুযায়ী নতুনভাবে প্রস্তাবিত স্কিমগুলোর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় উন্নত সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। ফলে পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও পরিবহণ ব্যয় হ্রাস পাবে। সামগ্রিকবাবে পল্লী এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস