ফসলের ক্ষেতই বিনোদন কেন্দ্র, কৃষকও পাচ্ছেন বাড়তি অর্থ
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:১৮
নরসিংদী: নরসিংদীর পলাশে বিভিন্ন এলাকায় তেলের বীজ হিসেবে চাষ করা সূর্যমুখী বাগান এখন হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের বিনোদন কেন্দ্র। ফলে তেলবীজের পাশাপাশি বাগানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে মিলছে বাড়তি টাকা। এতে কৃষকও খুশি।
জানা গেছে, দেশে আদর্শমানের ভোজ্যতেল হিসেবে সূর্যমুখী বাগানের পরিধি যেমন বাড়ছে, তেমনি এটিকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন স্থানীয়রা। আর কৃষকরা সূর্যমূখী বাগান থেকে ভোজ্যতেলের পাশাপাশি বাগানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকেও করছেন বাড়তি আয়। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব বয়সের দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরতে আসেন। বাগান ঘুরে ছবিও তোলেন।
পলাশের চরসিন্দুর ব্রিজের পাশে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে বিশাল চরাঞ্চল। এখানে প্রায় হাজার বিঘা চরের জমি বছরের একটি সময় পতিত পড়ে থাকে। তাই এই জমিকে কাজে লাগানোর জন্য স্থানীয় মাজহারুল ইসলাম নামে কৃষি বিভাগের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই এলাকায় প্রথমবারের মতো পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করেন সূর্যমুখী। এই বাগানে ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই আসতে শুরু করেন দর্শনার্থী। তাই বাগান রক্ষা ও দর্শনার্থীদের উপভোগের জন্য বাগানে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এই সূর্যমুখী বাগান করে একদিকে কমপুঁজিতে বেশি লাভ, তেমনি বাগানগুলো বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হওয়ায় আসছে বাড়তি আয়। অন্যদিকে এই বাগান ঘুরতে এসে খুশি ভ্রমণ পিপাসুরা।
কৃষক মাজহারুল ইসলাম জানান, তার পরিবারের পাঁচজন সদস্য কৃষি বিভাগের সঙ্গে জড়িত। তিনি দুই বছর আগে অবসর নিয়েছেন। অবসরে এসেই গত বছর পরীক্ষামূলক নরসিংদীতে সূর্যমুখীর বাগান করেছেন। বাগান করে সফলতাও পেয়েছেন। তাই এবার নিজ বাড়িতে এসে শীতলক্ষ্যার পাড়ে গড়ে উঠা বিশালাকার চর পতিত পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি এই জমিগুলো কাজে লাগানোর লক্ষ্যে এখানে জমি ভাড়া নিয়ে প্রথমবারের মতো পাঁচ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন সূর্যমুখীর বাগান।
বাগান তেলবীজ সংগ্রহের আশায় গড়ে তোলা হলেও এখন স্থানীয়দের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব বয়সের নারী-পরুষ এখানে ঘুরতে আসেন দলবেঁধে। বাগান ঘুরে ছবিও তোলেন দর্শনার্থীরা। এবার ভালো ফলন পাবেন বলে আশাবাদী তিনি। তার মূল লক্ষ্য এই বাগান দেখে যেন আগামীতে এই চরে সবাই সূর্যমুখীর বাগান করবে।
করোনার এই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একঘেঁয়েমি সময় কাটাতে এখানে ঘুরতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন দর্শনাথীরা। তারা বাগান ঘুরে ছবি তুলে কিছুটা হলেও আনন্দের মধ্যে কাটাতে পারেন সময়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন রতন জানান, এই বাগান দেখে যেন চরের অন্য কৃষকরাও আগামীতে সূর্যমুখীর বাগান করেন সেই লক্ষ্যে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু নাদির এস এ ছিদ্দিকি জানান, সূর্যমুখী বীজের মাধ্যমে যে পরিশোধিত তেল পাওয়া যায় তা স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর। বাজারে এর চাহিদা প্রচুর রয়েছে। সূর্যমূখীর বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তাতে মানবদেহের ক্ষতিকর কোনো কিছু থাকে না। কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানি করা তেল যে শতভাগ বিশুদ্ধ তাও কিন্তু বলা যাচ্ছে না। তাই শরীরের জন্য উপকারী হিসেবে সূর্যমুখীর বীজ থেকে পাওয়া তেল মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্যকর।
তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন সয়াবিন তেল ব্যবহার থেকে সরে আসছে। সরিষার তেলের পাশাপাশি সূর্যমুখীর তেলও ব্যবহার শুরু করেছেন। তবে এই তেল পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকে সরিষা বা সয়াবিন ব্যবহার করছেন। তবে এর চাষাবাদ পলাশে ব্যাপক না হলেও দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি বর্তমানে এটাকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন স্থানীয় ভ্রমণ পিপাসুরা। যে কারণে কৃকষদেরও মিলছে বাড়তি কিছু আয়।’
সারাবাংলা/এমও