Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদেশে অকৃতকার্য ‘ক্যাপ্টেনদের’ নিয়োগ বাংলাদেশ বিমানে

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:২২

ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ক্যাপ্টেন নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদেশে বিভিন্ন বিমান সংস্থায় যেসব বৈমানিক ‘ক্যাপ্টেন প্রশিক্ষণে’ ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান। এমনকি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার দায়ে বিদেশি বিমান সংস্থা থেকে চাকরিচ্যুত বৈমানিককেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই এয়ারলাইন্সে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি বিমানের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আট বৈমানিক। তারা হলেন— ইত্তেহাদ বিমানের ফার্স্ট অফিসার আওয়াল, এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফার্স্ট অফিসার মারুফ, কাতার এয়ারওয়েজের ফার্স্ট অফিসার ইরফান ও শওকত এবং বিদেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে কাজ করা আজিজুল হক, নাসিম, হারুন ও তাহমিদ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা অনুসন্ধানে জানা গেছে— বাংলাদেশ বিমানে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ পাওয়া হোসেন মো. শওকত জাহান কাতার এয়ারওয়েজে ক্যাপ্টেন প্রশিক্ষণে তিন বার ব্যর্থ হন। ফলে তাকে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি না দিয়ে স্থায়ীভাবে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে রাখে কাতার এয়ারওয়েজ। ক্যাপ্টেন পদের জন্য তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে বিদেশি ওই বিমান সংস্থাটি। এমনকি প্রশিক্ষণে তিন বার অকৃতকার্য হওয়ায় ভবিষ্যতে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতির জন্য আবেদন করার সুযোগও হারান এই বৈমানিক।

কাতার এয়ারওয়েজে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করলেও আন্তর্জাতিক রুটে ক্যাপ্টেন হিসেবে ফ্লাই করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই শওকত জাহানের। এরপরও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশ বিমানে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাকে।

বিজ্ঞাপন

ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আরেক বৈমানিক এরফানুল হকও কাতার এয়ারওয়েজে ক্যাপ্টেন প্রশিক্ষণে তিন বার অকৃতকার্য হন। তাকেও ক্যাপ্টেন হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করে স্থায়ীভাবে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে রাখে কাতার এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ উঠেছে, এরফানের ভাই বাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এবং বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৮৭ উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত থাকায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তাকে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নাসিমুল আওয়ালের বিরুদ্ধেও পারিবারিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাসিমুলের বাবা বাংলাদেশ বিমানের ডেল্টা চার্লি (ড্যাস-১০) উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন। তার বোন জামাই ক্যাপ্টেন ইন্তেখাব বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে কর্মরত। নাসিমুল আওয়াল সবশেষ ইত্তেহাদ বিমানের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক রুটে ক্যাপ্টেন হিসেবে বিমান পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞাতা এই বৈমানিকের নেই।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আরেক বৈমানিক মারুফ। দীর্ঘদিন এমিরেটস এয়ারলাইন্সে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকলেও তিনি ক্যাপ্টেন প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তার ছোট ভাই সাদাত নাওয়াজ বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে ক্যপ্টেন হিসেবে কর্মরত। মারুফের নিয়োগের ক্ষেত্রেও পারিবারিক প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ক্যাপ্টেন হিসেবে নতুন নিয়োগ পাওয়া নাসিমকে নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। দুর্ঘটনা ও উড়োজাহাজের নিরাপত্তাব্যবস্থা লঙ্ঘনের দায়ে কাতার এয়ারওয়েজ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তিনি।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ বিমানে ক্যাপ্টেন পদে চাকরির জন্য যারা আবেদন করেছিলেন তাদের অনেকেরই আন্তর্জাতিক রুটে ক্যাপ্টেন হিসেবে বিমান পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু অদৃশ্য এক কারণে সরাসরি ক্যাপ্টেন হিসেবে বিমান পরিচালনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অনভিজ্ঞদেরেই নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান।

বাংলাদেশ বিমানে ক্যাপ্টেন পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন বৈমানিক মঞ্জুরুল হক। বাংলাদেশ বিমানে বৈমানিক সংকটের সময় এয়ারবাস ‘থ্রি টেন’ উড়োজাহাজের ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন তিনি। এছাড়া বৈমানিক মিনহাজ ক্যাপ্টেন হিসেবে রিজেন্ট এয়ারলাইন্স ও স্পাই জেট এয়ারলাইন্সে কর্মরত ছিলেন। তিনিও আবেদন করেছিলেন ক্যাপ্টেন পদে চাকরির জন্য। একই পদে নিয়োগ পেতে আবেদন করেছিলেন এস কে সাইফুল্লাহ শাহরিয়ার। দীর্ঘদিন রিজেন্ট এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ বিমানের ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

এরকম বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ বৈমানিককে নিয়োগ না নিয়ে শেষ পর্যন্ত দেশে-বিদেশে ক্যাপ্টেন প্রশিক্ষণে অকৃতকার্য একাধিক বৈমানিককে নিয়োগ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশ।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মানের এয়ারলাইন্স এমিরেটস, কাতার, কুয়েত এয়ারলাইন্স, চায়না সাউদার্ন, চায়না ইস্টার্ন, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স, স্কটু এয়ারলাইন্স, ইত্তেহাদে সরাসরি বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৮৭ উড়োজাহাজে ক্যাপ্টেন হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের প্রধান যোগ্যতাই থাকে ৫০ টনের বেশি ওজনের বিমানে ক্যাপ্টেন হিসেবে কমপক্ষে ২ হাজার ঘণ্টা উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বাদ দিয়ে বিদেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন প্রশিক্ষণে ব্যর্থ ও অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত প্রর্থীদের নিয়োগ দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ বিমান যদি বিশ্বখ্যাত এয়ারলাইন্স এমিরেটস, কুয়েত এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারলাইন্স, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স, স্কুট এয়ারলাইন্সের নীতি অনুসরণ করে ক্যাপ্টেন নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে নন-টাইপরেটেড বোয়িং৭৭৭, বোয়িং৭৮৭-এর জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন পাওয়া যেত। কিন্তু সে পথে না হেঁটে অনভিজ্ঞ ও বিতর্কিতদের নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান।

এ প্রসঙ্গে জানতে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নাসিমুল আওয়ালকে ফোন দিলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘কীসের জন্য ফোন দিয়েছেন? কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার মতো সময় আমার নেই। ফোন রাখেন।’

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমানের পাইলট ঘাটতি থাকায় পাইলট নেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকলে আমরা সেটি অনুসন্ধান করব এবং খতিয়ে দেখব।’

সারাবাংলা/এসজে/এজেড

ক্যাপ্টেন নিয়োগ নিয়োগে অনিয়ম নিয়োগে দুর্নীতি বাংলাদেশ বিমান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর