নিজেই জানেন না নিজের নম্বর, কমছে যশোর বিটিসিএলের গ্রাহক
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০৬
যশোর: দিন দিন যশোরে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড (বিটিসিএল) গ্রাহক আশংকাজনকহারে কমে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ব্যবহারকারীদের সম্মতি ছাড়াই টেলিফোন নম্বরই বদলে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে আরও ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকেরা। নিজেদের টেলিফোন নম্বরই তারা কাউকে দিতে পারছেন না।
ঘোষণা ছাড়াই টেলিফোন নাম্বার পরিবর্তন গ্রাহকদের আরও বিড়ম্বনায় ফেলেছে। হঠাৎ পরিবর্তন হওয়ায় গ্রাহকরা নিজেদের ফোন নাম্বারই বলতে পারছেন না। আবার আগে ‘১৭’তে কল করে যেকোনো টেলিফোন নম্বর পাওয়া যেত বিটিসিএলের সেবা শাখা থেকে। সেই নাম্বারও পরিবর্তন হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালে যশোরাঞ্চলে বিটিসিএলের গ্রাহক কমে গেছে ১০ হাজার ৭৯০ জন। আর গত ৫ বছরের ব্যবধানে গ্রাহক সংখ্যা ১১ হাজার ১৭টি কমে গেছে। ২০১৭ সালে তাদের গ্রাহক হার ছিল ১৮ হাজার ৭০৭ জন। সর্বশেষ ২০২১ সালে তা কমে আসে ৭ হাজার ৬৯০ জনে। এর মধ্যে যশোর জেলায় সর্বাধিক ৩ হাজার ৩৪৭ জন গ্রাহক রয়েছেন। যশোরসহ নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলা নিয়ে যশোর বিটিসিএল অফিসের কার্যক্রম বিস্তৃত।
বিটিসিএল অফিস সূত্র বলছে, সংযোগ ফি বাড়ানো, লোকবল সংকট, করোনার হানা ও অপ্রতুল সেবার কারণে ক্রমেই গ্রাহক হার কমে যাচ্ছে। এছাড়া ১৯৯২ সাল থেকে বিটিটিবি’র নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে ২০০৮ সালে বিটিসিএল কোম্পানিতে রূপান্তর হলেও এর সুযোগ-সুবিধা সেই সরকারিভাবে থেকে গেছে। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। এটাও গ্রাহক কমার অন্যতম কারণ।
বিটিসিএল যশোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোরসহ ৪টি জেলা নিয়ে এই অঞ্চলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। ২০১৭ সালে তাদের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৭০৭ জন। ২০১৮ সালে ছিল ১৮ হাজার ৭১০ জন, ২০১৯ সালে ছিল ১৮ হাজার ৬৩৬ জন, ২০২০ সালে ছিল ১৮ হাজার ৬৩৬ জন, এবং ২০২১ সালে গ্রাহক সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৬৯০ জনে।
শহরের বেজপাড়া মেইন রোডের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গত বছর লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। টেলিফোনের লাইনে কোনো সমস্যা হলে অফিসে খবর দিয়েও তা সমাধান হয়না। ধরনা দিয়ে সংযোগ ঠিক করতে হয়। আবার সংযোগ বিচ্ছন্ন থাকলেও ভুতুরে বিল চলে আসে। এই সমস্যা সমাধানেও কর্মকর্তাদের আগ্রহ কম। সেইসঙ্গে মোবাইলের এই যুগে আমাদের টেলিফোন ব্যবহার না করলেও ১২০ টাকা প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে।’ যে কারণে তারা টেলিফোনের সংযোগ রাখতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
তবে এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে টেলিফোন নাম্বার পরিবর্তন। বেনাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদ জানান, সম্প্রতি টেলিফোন নাম্বার পরিবর্তন করেছে বিটিসিএল। কিন্তু আগে থেকে আমাদের জানানো হয়নি। এখন নিজের ফোন নাম্বার জানি না। এতে বিড়ম্বনায় পড়েছি।
যশোর বিটিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ মাসুদর রহমান জানান, বেশিরভাগ বকেয়ার দায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় গ্রাহক আমাদের কমে গেছে। তাছাড়া অনেক গ্রাহক কর্মস্থল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার কারণেও গ্রাহক কমে গেছে।
বিটিসিএলের যশোর অফিস সূত্র জানায়, তাদের লোকবল চাহিদার তুলনায় অর্ধেক রয়েছে। বিশেষ করে লাইনম্যান কম থাকায় তারা গ্রাহকদের সঠিকভাবে সেবা দিতে পারছেন না। এখানে মোট জনবলের পদ রয়েছে ২৮২টি। কিন্তু এর বিপরীতে রয়েছে ১২০ জন জনবল। ঘাটতি রয়েছে ১৬২ জন। যার মধ্যে প্রথম শ্রেণির ৪টি পদের বিপরীতে আছে ২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণির একটি পদ থাকলেও রয়েছে শূন্য অবস্থায়। ৩য় শ্রেণির ২৬০ জনের স্থলে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে ১১৭ জন। এর মধ্যে লাইনম্যান ৫৭ জন থাকার নিয়ম থাকলেও কাজ করছেন ১৫ জন এবং ৪র্থ শ্রেণির ১৭টি পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র একজন।
যশোর বিটিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বিটিসিএল ২০০৮ সালের জুলাই মাস থেকে কোম্পানিতে রূপান্তর হবার পর সব ধরণের নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া কোম্পানি হলেও আমরা সেই সুযোগ সুবিধা পায় না। সরকারি নিয়মেই আমাদের বেতন-ভাতা আসে।’
যশোর বিটিসিএলের ব্যবস্থাপক মাহাদী হাসান বলেন, ‘টেলিফোন নম্বর পরিবর্তন আমাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। তবে এখন আমারা যাদের সংযোগ দিচ্ছি তাদের অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে ইন্টারনেট নিতে হবে বাধ্যতামূলক। এটি নিরাপদ মাধ্যম। প্রতি মিনিট কলরেট নেওয়া হচ্ছে ভ্যাট বাদে ৫২ পয়সা।’
সারাবাংলা/এমও