সিআরবি-কালুরঘাট সেতু নিয়ে যা বললেন রেলমন্ত্রী
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২০:২৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নাগরিক সমাজের আন্দোলন উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ এগিয়ে নিলেও সেটা বাতিলের বিষয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’ বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। ফলে হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষে রেলমন্ত্রী তার আগের অবস্থানের-ই জানান দিয়েছেন।
শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামে এক কর্মসূচি শেষে রেলমন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতালের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যা-ই কিছু হোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়েই করতে হবে। এটা তো আমরা চট্টগ্রামের জনগণের জন্যই করছি। এখন চট্টগ্রামের জনগণ চান কি চান না- এই বক্তব্য তো আপেক্ষিক। চট্টগ্রামের জনগণের প্রতিনিধি তো এখানকার মন্ত্রী-এমপিরা আছেন। উনারা যদি না চান, তাহলে নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী উনাদের বিরুদ্ধে যাবেন না। আমরাও কি বিরুদ্ধে যাব? আমাদের দরকার কি?’
প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অফিসে একজন সচিবের নেতৃত্বে পিপিপির একটি অথরিটি আছে। ওখান থেকে সিদ্ধান্ত হয়ে বিষয়টা যখন মোটামুটিভাবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। তখন কিন্তু অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ আসছে। সুতরাং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তক্রমে যেহেতু বিষয়টা ওখান থেকে হয়েছে, আমরা রেল মন্ত্রণালয়, আমাদের ভিন্ন কোনো মত থাকলেও আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অথরিটি না। আলাপ-আলোচনা চলছে। আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই হবে।’
উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় সিআরবিতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট বাস্তবায়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য। প্রকল্পের মেয়াদ ১২ বছর।
দুই বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়টি প্রকাশ পেলে চট্টগ্রামে বিভিন্ন নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলনে নেমেছিল। গত বছরের জুলাইয়ে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি উঠে এলে আবারও সোচ্চার হন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এবং ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া রুখে দাঁড়ানোর আহআন জানালে রাস্তায় নামে মানুষ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সিআরবি এলাকায় নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন হচ্ছে।
এদিকে কালুরঘাট সেতু প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। বর্তমানে সেখানে যে রেলসেতু আছে সেটার উচ্চতা ৪ দশমিক ৬ মিটার। নতুন যে সেতুর কথা বলা হচ্ছে, নেভিগেশনের কারণে সেটার উচ্চতা হতে হবে ১২ দশমিক ২ মিটার। আগের থেকে রেললাইন উপরে তুলে তারপর করতে হবে। আমরা চাই যে, সেতু করার পর যেন কোনো সমস্যা না হয়। আগেও তো সাইক্লোনের সময় জাহাজ এসে সেতুতে আঘাত করেছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েই নকশা তৈরির কাজ চলছে। এ কারণে এটু দেরি হচ্ছে। তবে অবশ্যই সেতু হবে। সেতুতে রেলেরও ডাবল লাইন থাকবে, সড়কেরও ডাবল লাইন থাকবে।’
চট্টগ্রামের পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের প্রস্তাবিত শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের জায়গা পরিদর্শনে এসেছিলেন রেলমন্ত্রী। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশে শপিং কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে বিনোদন-সবকিছু নিয়েই কিন্তু একটা রেলব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। আমাদের রেলের অনেক জায়গা, এগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে রেলের আয় যাতে বাড়াতে পারি সেই চেষ্টা আমাদের আছে। এসব জায়গা ফেলে রাখলে তো হবে না।’
তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট, তাদের একটা চাহিদা ছিল যে, তাদের কল্যাণের জন্য একটা মার্কেট নির্মাণ করবে। আমরা জায়গাটা দেখে গেলাম। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে সিদ্ধান্তটা হতে হবে, আমরা যে উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছি সেটার সঙ্গে যাতে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বগি দেওয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে বেশিরভাগ সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকছে। ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। অর্ধেক আসনে যাত্রী ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে একমাত্র ট্রেনই চলাচল করছে। আর কোনো পরিবহন খাত এটি মানছে না। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত ওই রুটে নতুন ট্রেন দেওয়ার।’
এ সময় রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম