পরীর পাহাড় নিয়ে বিরোধ: গাছ কাটার সময় ৪ শ্রমিক আটক
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আইনজীবী সমিতির ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম নগরীর পরীর পাহাড়ে একটি পুরনো গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় চার শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। পরীর পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির বিরোধের মধ্যে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শ্রমিকদের আটক করা হয়েছে।
শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে পরীর পাহাড়ে আইনজীবী সমিতির ভবনের হিলটপ রেস্টুরেন্টের সামনে একটি গাছ কাটা হয়। আরেকটি গাছ কাটার সময় কোতোয়ালি থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে গাছ কাটার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার পিযুষ কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, আইনজীবী ভবন দোয়েল ও শাপলার মাঝখানে গভীর রাত থেকে গাছ কাটা শুরু হয়। ১০-১২ জন শ্রমিক মিলে গাছটি কাটছিল। সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে একটি শিরিষ গাছ কেটে ফেলা হয়। আরেকটি গাছ কাটার সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করে। অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।’
চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণে লালদিঘী এলাকায় পরীর পাহাড়ের অবস্থান। সেই পাহাড়ে আদালত সংলগ্ন এলাকায় জেলা আইনজীবী সমিতি সম্প্রতি আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য নতুন দু’টি ভবন নির্মাণেরর উদ্যোগ নিলে আপত্তি তোলে জেলা প্রশাসন। সমিতির ওই দুই নতুন স্থাপনা নির্মাণকে জেলা প্রশাসন বলছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। আর সমিতির দাবি, নিয়ম মেনে ‘অনুমোদন’ নিয়েই তারা ভবন করছেন। ইতোমধ্যে পাহাড়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করতে এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে তাতে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পাহাড়টিকে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে উল্লেখ করে সেটি সংরক্ষণের জন্য সকল স্থাপনা উচ্ছেদে অনড় অবস্থানের কথা জানায়। আইনজীবী সমিতি জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিবাদ গড়ায় আদালতেও। গত বছরের ৭ নভেম্বর আদালতে প্রতিনিধিত্বমূলক একটি মামলা দায়ের করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন।
মামলায় জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে বলা হয়, বর্তমান জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামে যোগদানের আগে সকল সরকারি নথিতে পাহাড়টিকে ‘কোর্ট হিল’ হিসেবে উল্লেখ করা হত। কিন্তু সম্প্রতি সেটা পরিবর্তন করে পরীর পাহাড় লেখা হচ্ছে। পরীর পাহাড় নামকে বেআইনি ঘোষণা করে এই নাম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে প্রতিনিধিত্বমূলক মামলাটি করা হয়।
এ অবস্থায় গত ৩১ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতি ‘একুশে ভবন’ নামে নতুন একটি বহুতল ভবন করার জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনও তাদের বিরোধিতায় অনড় আছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘ওখানে পুরোনো একটি কাটা গাছ ছিল। যে জায়গায় শ্রমিকেরা কাজ করছিল সেটা আমরা ডিক্রিমূলে পেয়েছি। ওই জায়গায় একটি ভবন হবে। ওখান থেকে শ্রমিকদের ধরে নিয়ে গেছে। এখন আমরা আইনমন্ত্রী ও মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। এটা একটা সমাধান হবে।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গাছ কাটার সময় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা চারজনকে আটক করেছি। সেখানে স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির মধ্যে বিরোধ আছে। চার শ্রমিককে আটকের পর এখনও কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। জেলা প্রশাসন এবং আইনজীবী সমিতি নিজেরা আপস করছে বলে আমাদের জানিয়েছে। আপস হয়ে গেলে আমরা মুচলেকা নিয়ে শ্রমিকদের জিম্মায় দেব।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম