Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংক্রমণের ৭০০ দিন আজ— সর্বশেষ ১০০ দিনের তথ্য এক নজরে

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৪০

ঢাকা: ৮ মার্চ ২০২০। প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয় দেশে। এরপর ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গুনে গুনে পেরিয়ে গেছে ৭০০ দিন। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ ঢাকা থেকে ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে। শুরুর কিছুদিন সংক্রমণের হার ছিল বেশ কম। পরে তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।

২০২০ সালের জুন-জুলাই নাগাদ সংক্রমণ শনাক্তের হার ও পরিমাণ সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। ওই সময় করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল বেশি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু কমতে থাকে। তবে মার্চ মাস থেকেই আবার বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু। কিন্তু সেই সব পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যায় জুন-জুলাই মাসে। পরবর্তীতে আবার সেই সংখ্যা কমে আসে অক্টোবরের পরে। একইসঙ্গে কমতে থাকে মৃত্যুর সংখ্যাও।

বিজ্ঞাপন

তবে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। এই মাসে দেশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। একইসঙ্গে বাড়ে সংক্রমণ শনাক্তের হারও। তবে এই সময়ে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসে। মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও তা ২০২১ সালের তুলনায় অনেক কম।

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের এই ৭০০ দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমেও এসেছে গতি। ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি দেশে পর্যবেক্ষণমূলকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন ঘোষণা করার পরে এদিন ২৬ জন ভ্যাকসিন নেন। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ভ্যাকসিনের টার্গেটের তুলনায় ৮২ দশমিক ৪৮ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছেন। তার মাঝে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৫৩ দশমিক ০৩ শতাংশ। একইসঙ্গে দেশে শুরু হয়েছে বুস্টার ডোজ প্রয়োগও।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করায় মানুষের মাঝে মৃত্যুঝুঁকি কমে আসবে। তবে এটি কিন্তু সংক্রমণ কমাবে না। আর এ কারণে সতর্কতায় ঘাটতি দেখা দিলে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে কয়েকগুণ। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সবধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

তারা আরও বলছেন, সম্প্রতি দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার বেড়েছে। আবার কিছুটা কমেও আসছে গত কিছুদিনে। তবে এতে সন্তুষ্টির কোনো উপায় নেই। নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় আরও উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে।

করোনা সংক্রমণের শেষ ১০০ দিনের তথ্য (২৯ অক্টোবর-৫ ফেব্রুয়ারি)

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ৬০০ তম দিন ছিল ২৮ অক্টোবর। এদিন পর্যন্ত দেশে এক কোটি তিন লাখ এক হাজার ৫৯৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮৫৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সংক্রমিতদের মাঝে ২৭ হাজার ৮৪৭ জন মারা যান।

৬০১তম দিন অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০০ দিনে দেশে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৫টি। এর মাঝে দেশে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৩৩০ টি নমুনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় সরকারিভাবে। এই ১০০ দিনে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ।

দেশে শেষ ১০০ দিনে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে ৭১৩ জন। এটি ১০০ দিনে সর্বনিম্ন মৃত্যুর পরিসংখ্যান। এই ১০০ দিনে দেশে মৃত্যুর হার ছিল ০.২৫ শতাংশ।

শেষ ১০০ দিনে দেশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা হয় ৪৯ হাজার ৪৯২টি। এদিনই দেশে ১৬ হাজার ৩৩টি নমুনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়, যা শেষ ১০০ দিনে সর্বোচ্চ। সংক্রমণ শনাক্তের ৬৯৭তম ও ৭০০ তম দিন অর্থাৎ ২ ফেব্রুয়ারি ও ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায়। এটি শেষ ১০০ দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা।

কমেছে নমুনা পরীক্ষা, শনাক্তের সংখ্যা ও মৃত্যু

দেশে শেষ ১০০ দিনে নমুনা পরীক্ষা কমেছে ৫০১ থেকে ৬০০তম দিনের তুলনায়। আগের ১০০ দিনের তুলনায় (২১ জুলাই থেকে ২৮ অক্টোবর) পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮৯টি নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে সর্বশেষ ১০০ দিনে। এই সময়ে সংক্রমণ কমেছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৬৩৮। ২১ জুলাই থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১০০ দিনে দেশে সর্বোচ্চ নয় হাজার ৫২২ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেলেও সর্বশেষ ১০০ দিনে দেশে মারা গেছে ৭১৩ জন।

দেশে এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা

৩ আগস্ট: দেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার ২৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টায়। ২০২১ সালের ৩ আগস্ট এই নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

২৮ জুলাই: দেশে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার ২৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টায়। ২০২১ সালের ২৮ জুলাই এই নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

২ আগস্ট: ২০২১ সালের ২ আগস্ট দেশে ৫৩ হাজার ৪৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৪ ঘণ্টায়।

২৭ জুলাই: ২০২১ সালের ২৭ জুলাই দেশে ৫২ হাজার ৪৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৪ ঘণ্টায়।

২৯ জুলাই: ২০২১ সালের ২৯ জুলাই দেশে ৫২ হাজার ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৪ ঘণ্টায়।

২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ যে ৫ দিনে

২৮ জুলাই: ২০২১ সালের ২৮ জুলাই দেশে ৫৩ হাজার ৮৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ হাজার ২৩০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় সরকারিভাবে। এদিন দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ১২৪ শতাংশ।

২৫ জানুয়ারি: ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি দেশে ৪৯ হাজার ৪৯২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ হাজার ৩৩ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় সরকারিভাবে। এদিন দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৩৯৫ শতাংশ।

২ আগস্ট: ২০২১ সালের ২ আগস্ট দেশে ৫৩ হাজার ৪৬২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৯৮৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় সরকারিভাবে। এদিন দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৯০৭ শতাংশ।

২৭ জানুয়ারি: ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি দেশে ৪৯ হাজার ৪২৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৮০৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় সরকারিভাবে। এদিন দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯৮২ শতাংশ।

৩ আগস্ট: ২০২১ সালের ৩ আগস্ট দেশে ৫৫ হাজার ২৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় সরকারিভাবে। এদিন দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু যে ৫ দিনে

সর্বোচ্চ মৃত্যু: কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৬৪ জনের মৃত্যু ঘটে ২০২১ সালের ৫ আগস্ট। এটি এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে যৌথভাবে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

সর্বোচ্চ মৃত্যু: কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৬৪ জনের মৃত্যু ঘটে ২০২১ সালের ১০ আগস্ট। এটি এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে যৌথভাবে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু: কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৬১ জনের মৃত্যু ঘটে ২০২১ সালের ৭ আগস্ট। এটি এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু: ২০২১ সালের ২৭ জুলাই কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৫৮ জনের মৃত্যু হয়। যা এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান।

চতুর্থ সর্বোচ্চ মৃত্যু: ২০২১ সালের ৬ আগস্ট কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৪৮ জনের মৃত্যু, যা এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান।

পঞ্চম সর্বোচ্চ মৃত্যু: ২০২১ সালের ২৬ জুলাই কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৪৭ জনের মৃত্যু, যা এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে পঞ্চম সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান।

এ পরিস্থিতিতে করণীয়

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে করণীয় কী— জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘জানুয়ারিতে সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়লেও এখন কিছুটা নেমে আসছে। আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যাও কিন্তু এবার কম ছিল। মূলত ভ্যাকসিন একটা প্রভাব ফেলেছে এক্ষেত্রে। একইসঙ্গে রাজধানীতে সংক্রমণ বাড়ার পরে বিধিনিষেধের কারণে কিছুটা হলেও মানুষের মাঝে মাস্ক পরার হার বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে সবচেয়ে জরুরি হলো ব্যক্তির সচেতনতা। সরকারকে অবশ্যই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু ব্যক্তি সচেতন হয়ে সরকারি পদক্ষেপে সহযোগিতা না করলে বিপদ বাড়বে। কারণ, কোনো এলাকায় একজন সংক্রমিত হলেই তার পরিবার-সমাজে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকবে।’

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘৭০০ দিনের পরিস্থিতি যদি বিবেচনা করি তবে শুরুর দিকে কিছুটা সমস্যা থাকলেও এখন কিন্তু আমাদের মহামারি মোকাবিলায় সক্ষমতা বেড়েছে। নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটেছে। তবে এ অবস্থার ধরে রাখতে হবে। এখনো যেসব স্থানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযোগ নেই সেগুলোকে প্রায়োরিটি দিয়ে কাজ করতে হবে। একইসঙ্গে নমুনা পরীক্ষা করানোর বিষয়ে জোর দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমের প্রভাব পড়েছে সংক্রমিতদের মৃত্যু হারে। একইসঙ্গে যারা সংক্রমিত হচ্ছে তাদের মৃত্যুঝুঁকি কমেছে। তবে এরপরেও রিল্যাক্স হওয়ার কোনো উপায় নাই। আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।’

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

১০০ দিনের তথ্য ৭০০ দিন করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর