Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর আর নেই

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:১৩

লতা মঙ্গেশকর, ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কিংবদন্তী সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর আর নেই। করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে লড়াই করে শেষ নিঃশ্বাস করেন ৯২ বছর বয়সী এই শিল্পী। দ্বিতীয় সংগীত ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ভারতরত্ন পাওয়া এই শিল্পীর মৃত্যুতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে ভারত সরকার।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মারা যান উপমহাদেশের সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। এই হাসপাতালেই মাসখানেক ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

প্রায় সাত দশক ধরে শ্রোতাদের অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে তোলা লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনসহ গোটা ভারতেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীসহ শোক জানিয়েছেন সবাই। বাংলাদেশেও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন এই সুরসম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে।

এর আগে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর নিউমোনিয়াও ধরা পড়ে লতা মঙ্গেশকরের। পরে তাকে ১১ জানুয়ারি মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

গতকাল শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। এরপর আর চিকিৎসকদের কোনো চেষ্টা কাজে লাগেনি। ভূলোকের মায়া কাটিয়ে রোববার ইন্দ্রলোকে পাড়ি জমান নাইটিঙ্গেল অব ইন্ডিয়াখ্যাত ভারতীয়দের প্রিয় ‘লতা দিদি’।

শনিবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে মুম্বাইয়ের ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে।’ বিবৃতিতে হাসপাতালের চিকিৎসক প্রতীত সমদানি বলেন, ‘তার শারীরিক পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। তাকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়েছে। আইসিইউয়ে রয়েছেন। তিনি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন।’

বিজ্ঞাপন

কিছু দিন আগে নবতিপর গায়িকার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। চিকিৎসা হয়েছিল তার। তার পর থেকে একেবারে বাড়িতেই থাকতেন তিনি। বাড়িতে প্রায়শই তাকে অক্সিজেন ব্যবহার করতে হতো। বেশ কিছু দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় লতার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে গুজব ছড়ায়। গায়িকার মুখপাত্র ও পরিবারের তরফে অনুরোধ করা হয় কোনও ভুয়া খবর যেন ছড়ানো না হয়। কোনো পরিবারের ব্যক্তিগত পরিসরে প্রবেশ না করার অনুরোধও জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। এবারে সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি।

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এক মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। বাবা অভিনেতা ও গায়ক পন্ডিত দিননাথ মঙ্গেশকর, মা শেবন্তি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। তবে এর আগেই বাবার হাত ধরে তার  সংগীতের হাতেখড়ি শৈশবেই। প্লেব্যাকের যাত্রা শুরু ১৯৪২ সালে, মারাঠি একটি ছবিতে। তবে জনপ্রিয়তা পেতে অপেক্ষা করতে হয় আরও প্রায় সাত বছর। ১৯৪৯ সালে মহল ছবিতে গেয়েছিলেন ‘আয়েগা আনেওয়ালা’। সেই শুরু, এরপর তার কণ্ঠ থেকে কেবলই ঝরেছে মাধুর্যের সম্ভার। কালে কালে হয়ে উঠেছেন ভারতীয় উপমহাদেশের সুরসম্রাজ্ঞী।

লতা ছিলেন মারাঠি ভাষাভাষী। কিন্তু সুরের ভুবনে তিনি যেন সত্যিই সরস্বতী। হিন্দি, বাংলা, উর্দু থেকে শুরু করে ৩৬টি ভাষায় গেয়েছেন গান। মুকেশ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, এস ডি বর্মণ, আর ডি বর্মণ, সলিল চৌধুরী থেকে প্রথিতযশা সব সংগীত পরিচালকের কাছেই লতা ছিলেন এক পরম নির্ভরতার নাম। তাদের সুর-সংগীতে একের পর এক কালজয়ী গান কণ্ঠে তুলে উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার, মান্না দে থেকে শুরু করে উদিত নারায়ণ, সনু নিগামের মতো শিল্পীদের সঙ্গেও রয়েছে তার অসংখ্য জনপ্রিয় সব গান।

ভারতীয় সংগীতের ধারা বদলের অন্যতম রূপকার লতা মঙ্গেশকর তার কিন্নর কণ্ঠ নতুন মাত্রা দিয়েছেন আধুনিক ও প্লেব্যাক সংগীতে। বর্ণিল ক্যারিয়ারে বলিউড মাতিয়ে একটা সময় সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানকেও। ও মোর ময়না গো, যা রে.. যা রে উড়ে যা রে পাখি, আমি যে কে তোমার, কী লিখি তোমায়, আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন, প্রেম একবার এসেছিল নীরবে, সাত ভাই চম্পা জাগো— এমন প্রায় দুইশ হৃদয় ছোঁয়া গান দিয়ে বাংলা গানের ইতিহাসেও অমর হয়ে রয়েছেন লতা।

শ্রোতাদের ভালোবাসা যেমন, লতার অর্জনের খাতায় তেমনই রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার আর সম্মাননা। ২০০১ সালে তিনি ভূষিত হন ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ভারতরত্নে। ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার দেয় তাকে সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাব। আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন বহু প্রতিষ্ঠান থেকে। পেয়েছেন তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার।

সলিল চৌধুরীর কথা-সুরে মায়াবি কণ্ঠের জাদুতে লতা গেয়েছিলেন অবিস্মরণীয় গান— ‘ফুরালো প্রাণের মেলা/ শেষ হয়ে এলো বেলা/ আর কেন মিছে তোরে বেঁধে রাখি?’ এই কোকিলকণ্ঠীর সুরের জাদুও বুঝি শেষ হলো ৯২ বছর বয়সে। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে লতা গেলেন হয়তো ইন্দ্রলোকে। যা রেখে গেলেন, তা দিয়েই তিনি ভূলোকেও বেঁচেই থাকবেন যুগের পর যুগ।

সারাবাংলা/এনএস

টপ নিউজ ভারত লতা মঙ্গেশকর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর