হাজতখানায় ২ যুবকের সঙ্গে ‘গোপন বৈঠক’ পাপিয়ার
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:৪১
ঢাকা: হাজতখানায় কফি পান করতে করতে দুই যুবকের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া। সারাবাংলার অনুসন্ধানে ওই গোপন বৈঠকের বিষয়টি জানা গেছে।
পুলিশের পাহারায় এই রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিম্ন আদালতের হাজতখানায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই যুবক কারা, কী উদ্দেশে তারা পাপিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তা জানা যায়নি। তবে পুলিশ বলেছে, ওই দুই যুবক পাপিয়ার ‘স্পেশাল গেস্ট।’
এদিকে বিষয়টিকে তুচ্ছ বলে অনেকটা উড়িয়ে দেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। বিষয়টি উপস্থিত সাংবাদিকদের নজরে আসে। পরে পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
এদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালতে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। সকালে কারাগার থেকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় তাদের রাখা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পর তাদের এজলাসে তোলা হয়। এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে দুইজন সাক্ষীও আদালতে হাজিরা দেন। তবে বিচারক অসুস্থ হওয়ায় এদিন সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। ভারপ্রাপ্ত বিচারক এএসএম রুহুল ইমরান আগামী ১৬ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। এরপর আসামিদের আবার হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ সময় পাপিয়ার গতিবিধিতে নজরদারি রাখেন সারাবাংলার এই করেসপন্ডেন্ট। দুপুরে হাজতখানার সামনে সরেজমিনে দেখা যায়, পাপিয়া মহিলা হাজতখানার ড্র্রেসিং রুমে একটি বেঞ্চে বসে আছেন। তার সামনে দুই যুবক বসে আছেন। প্রফুল্ল মনে পাপিয়া কফি পান করতে করতে ওই দুই যুবকের সঙ্গে গল্পে মেতেছেন। এ সময় গেইট লক করে কয়েকজন মহিলা পুলিশ সদস্যকেও পাহারা দিতে দেখা যায়।
আস্তে আস্তে আদালতপাড়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হন। বিষয়টি টের পেয়ে হাজতখানার ইনচার্জ নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস সেখানে প্রবেশ করেন। পাপিয়াসহ তিনজনকে সতর্ক করেন তিনি।
এরপর সেখান থেকে বের হয়ে এসে হাস্যরসাত্মকভাবে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করা চেষ্টা করেন। তিনি সাংবাদিকদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। তখন তার কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া এভাবে কোনো আসামির সঙ্গে বৈঠক করা যায় কি না? তখন তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এরপর বলেন, ‘ওই দুইজন আমাদের স্পেশাল গেস্ট।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পাপিয়াকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার সঙ্গে বৈঠক করা দুই যুবকও বের হন।
পাপিয়ার সঙ্গে কী সম্পর্ক জানতে চাইলে প্রথমে কেউ কোনো উত্তর দিতে চাননি। এরপর একজন বলেন, তার নাম রাসেল। পাপিয়া তার বোন হন বলেও জানান।
পাপিয়ার কেমন ভাই জানতে চাইলে, তিনি কিছু না বলে আদালতপাড়া ছেড়ে চলে যান। অপর যুবক এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি।
২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ (২৮) চার জনকে আটক করে র্যাব-১।
ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ফার্মগেটের ২৮ ইন্দিরা রোড ঠিকানায় পাপিয়া-মফিজুরের বাসায় অভিযান শুরু করে র্যাব। ওই বাসা থেকে নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক বই, কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। এছাড়া লাইসেন্স বিহীন একটি বিদেশি পিস্তল, দুইটি ম্যাগজিন ও ২০ রাউন্ড গুলিও পাওয়া যায় বাসা থেকে।
আরও পড়ুন
অবৈধ সম্পদ অর্জন: পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে আরও ২ জনের সাক্ষ্য
অবৈধ সম্পদ অর্জন: পাপিয়া দম্পতির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
পাপিয়া দম্পতিসহ ৪ জনের বিচার শুরু
বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় স্বামীসহ কারাগারে পাপিয়া
পাপিয়ার মতো অপকর্মকারীরা যেন দলে না ঢোকে: ওবায়দুল কাদের
পাপিয়া-সুমন দম্পতির রায়ের পর্যবেক্ষণে যা বললেন বিচারক
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় পাপিয়া দম্পতির বিচার শুরু
অবৈধ সম্পদ অর্জন: পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে চার্জগঠন ৩০ নভেম্বর
সারাবাংলা/এআই/এনএস