অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জামে সব খাতের জন্য সমান শুল্ক সুবিধার দাবি
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:৫৯
ঢাকা: তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জামের আমদানিতে যে শুল্ক সুবিধা দেওয়া হয়, অন্যান্য খাতের প্রতিষ্টানের জন্যও এসব সরঞ্জাম আমদানিতে একই শুল্ক সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটি।
রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অগ্নি নিরাপত্তা, দুর্যোগ ও বিস্ফোরণ সম্পর্কিত এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম বৈঠক থেকে এ দাবি তুলেছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা।
নেতারা বলেন, সরকার শুধু তৈরি পোশাক খাতকে হ্রাসকৃত হারে শুল্ক দিয়ে অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু অন্যান্য শিল্পের কারখানাতেও অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তাছাড়া সব খাতের কর্মীদেরই নিরাপত্তার অধিকার সমান। অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমাদানিতে শুল্ক হারে এমন বৈষম্য থাকা উচিত নয়।
এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির চেয়ারম্যান মো. নিয়াজ আলী চিশতি বলেন, দেশে নিরাপদ শিল্পায়ন নিশ্চিত করতে সব খাতের কারখানাতে অগ্নি প্রতিরোধী ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় এসব সরঞ্জাম আমদানিতে পোশাক শিল্প বাদে অন্যান্য শিল্পোদ্যোক্তাদের উচ্চ করভার বহন করতে হচ্ছে।
তিনি জানান, ফায়ার ডোর, ফায়ার অ্যালার্ম ক্যাবল ও হোস রিল আমদানিতে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ, গেট ভালভে ৩৭ শতাংশ, ফায়ার পাম্প ও ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেমে (ডিটেক্টর) ২৬ দশমিক ২ শতাংশ, ফায়ার এক্সটিংগুইশারে ১১ দশমিক ০৫ শতাংশ ও এবিসি ড্রাই পাউডারে ৩১ শতাংশ করভার বহন করতে হচ্ছে। উচ্চ করভারের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পক্ষে অনেক সময় পর্যাপ্ত অগ্নি প্রতিরোধী ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই তৈরি পোশাক শিল্পের মতো সব খাতকে অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জামে সমান সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
নিয়াজ আলী চিশতি বলেন, এছাড়াও কার্বন ডাই অক্সাইড, ফোম, ড্রাই পাউডারসহ অন্যান্য আগুন প্রতিরোধী গ্যাস ও রাসায়নিক আমদানিতে আলাদা অনুমতির দরকার হয়। যে কারণে এসব পণ্য আমদানিকারকদের অযথা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, চট্টগ্রামে বিএসটিআইয়ের কোনো পরীক্ষাগার না থাকায় আমদানির পর রাসায়নিক পরীক্ষা করতে ঢাকায় পাঠাতে হয়। ফলে বাড়তি ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। বন্দর ও কনটেইনারের বাড়তি ভাড়ার কারণে দাম বেড়ে যায়।
বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন মূলত অনানুষ্ঠানিকভাবে হয়েছে। তবে এখন শিল্পের নিরাপত্তা বিধানের সময় এসেছে।
কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্ট্যান্ডিং কমিটিকে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে কার্যক্রম শুরুর তাগিদ দেন মো. আমিন হেলালী। একটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করে খাতভিত্তিক প্রশিক্ষণ শুরুর সুপারিশও করেন তিনি।
এসময় সহসভাপতি আমদানিকারকদের দেশেই অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
কমিটির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ আবু মোতালেব বলেন, কারখানায় আগুন লাগার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু সবার আগে মালিককে দোষারোপ করা হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটি কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমস্যা চিহ্নিত ও করণীয় ঠিক করে একটি নীতিমালা শিগগিরই এফবিসিসিআই’র কাছে জমা দেবে বলে জানান তিনি। নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি সাব কমিটিও গঠন করা হয় বৈঠকে।
বৈঠকে এফবিসিসিআইয়ের সেফটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ জানান, শিগগিরই এফবিসিসিআই’র উদ্যোগে শিল্প খাতে নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ শুরু হবে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
এছাড়া অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত সব সনদ ও অনুমতিপত্র প্রদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস স্থাপনে সরকার চিন্তা করছে বলে জানানো হয়।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হারুন অর রশীদ, মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদ উদ্দীন, মোহাম্মেদ শাহজাহান, আবুল হোসাইন, এম মাহমুদুর রশীদ, জাকির উদ্দীন আহমেদ, মোহাম্মদ শামসুল হক জামিল, মুহাম্মদ আওলাদ হুসাইন রাজীব, মোহাম্মদ মনজুর আলম, তানজির আহম্মেদ তুহিনসহ অন্যান্য সদস্যরা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর