Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গাছ কাটার প্রমাণ ধ্বংস করেছে আইনজীবী সমিতি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:১৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আইনজীবী সমিতি পরীর পাহাড় থেকে বিনা অনুমতিতে গাছ কেটে ফেলার পর এবার তাদের বিরুদ্ধে সেই আলামত ধ্বংসের অভিযোগ এনেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে কেটে ফেলা গাছের গোঁড়া অপসারণের মধ্য দিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের আলামত ধ্বংস করেছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে পরীর পাহাড়ে আইনজীবী সমিতির ভবনের হিলটপ রেস্টুরেন্টের সামনে একটি গাছ কাটা হয়। আরেকটি গাছ কাটার সময় জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চার শ্রমিককে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে গাছ কাটার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তবে এ ঘটনায় কোনো মামলা না হওয়ায় পরে চার শ্রমিককে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন।

সোমবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, জেলা আইনজীবী সমিতি তাদের একটি ভবন নির্মাণের জন্য বিনা অনুমতিতে প্রায় শত বছরের পুরনো একটি গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় চার শ্রমিককে আটক করে পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গাছ কাটার প্রমাণ ধ্বংস করতে আইনজীবী সমিতি নিধন করা গাছের গোঁড়াটি অপসারণ করেছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পাহাড় বা টিলার ওপর সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। পাহাড়-টিলা যে অবস্থায় আছে এর কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু আইন ভঙ্গ করে আইনজীবী সমিতি গাছ কেটেছে। গাছ কাটার আলামতও ধ্বংস করেছে। পরীর পাহাড়ের খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে পরিবেশ বিনষ্ট করে তাদের এই কার্যক্রমের বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিনকে ফোন করা হলেও সভায় থাকায় তিনি কথা বলতে পারেননি।

চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণে লালদিঘী এলাকায় পরীর পাহাড়ের অবস্থান। সেই পাহাড়ে আদালত সংলগ্ন এলাকায় জেলা আইনজীবী সমিতি সম্প্রতি আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য নতুন দু’টি ভবন নির্মাণেরর উদ্যোগ নিলে আপত্তি তোলে জেলা প্রশাসন। সমিতির ওই দুই নতুন স্থাপনা নির্মাণকে জেলা প্রশাসন বলছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। আর সমিতির দাবি, নিয়ম মেনে ‘অনুমোদন’ নিয়েই তারা ভবন করছেন। ইতোমধ্যে পাহাড়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করতে এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে তাতে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পাহাড়টিকে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে উল্লেখ করে সেটি সংরক্ষণের জন্য সকল স্থাপনা উচ্ছেদে অনড় অবস্থানের কথা জানায়। আইনজীবী সমিতি জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিবাদ গড়ায় আদালতেও। গত বছরের ৭ নভেম্বর আদালতে প্রতিনিধিত্বমূলক একটি মামলা দায়ের করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন। মামলায় জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে বলা হয়, বর্তমান জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামে যোগদানের আগে সকল সরকারি নথিতে পাহাড়টিকে ‘কোর্ট হিল’ হিসেবে উল্লেখ করা হত। কিন্তু সম্প্রতি সেটা পরিবর্তন করে পরীর পাহাড় লেখা হচ্ছে। পরীর পাহাড় নামকে বেআইনি ঘোষণা করে এই নাম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে প্রতিনিধিত্বমূলক মামলাটি করা হয়।

এ অবস্থায় গত ৩১ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতি ‘একুশে ভবন’ নামে নতুন একটি বহুতল ভবন করার জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনও তাদের বিরোধিতায় অনড় আছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আলমত গাছ ধ্বংস পরীর পাহাড়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর