সিআরবিতে হাসপাতাল ‘চান না’ মোশাররফও
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:০৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ চান না আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর এ দাবি করেছে সিআরবি রক্ষায় গঠিত ‘নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম’।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নাগরিক সমাজের নেতারা প্রবীণ সাংসদ মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এরপর নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মোশাররফকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, তিনি সিআরবির বাইরে অন্য কোথাও হাসপাতাল হলে স্বাগত জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
মতবিনিময়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল করার যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেটি অন্য কোথাও করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, চট্টগ্রামের এক-চতুর্থাংশ এলাকার মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। হাসপাতাল করার জন্য সিআরবি ছাড়াও হাজার একর জায়গা আছে। সেখানে হাসপাতাল হলে আমরা স্বাগত জানাব।’
নাগরিক সমাজের দাবি, মোশাররফ হোসেন তাদের চলমান প্রতিবাদ কর্মসূচির সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
এসময় তিনি বলেছেন, ‘সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধী শুধু আমি নই, চট্টগ্রামের অন্যান্য এমপি, মন্ত্রী, মেয়র ও শীর্ষ প্রায় সকল নেতা রয়েছেন। সবাই চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত সিআরবি রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। আমরা সবাই সিআরবিতে শ্বাস নেওয়া অব্যাহত রাখতে চাই। তবে আমরা হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধেও নই। হাসপাতাল সিআরবি ছাড়া অন্য কোথাও হোক— এটাই আমাদের দাবি।’
জানতে চাইলে সাংসদ মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নাগরিক সমাজের নেতারা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাদের বলেছি, চট্টগ্রাম শহরে রেলওয়ের অনেক জায়গা আছে। এক-চতুর্থাংশ জায়গাই তাদের। হাসপাতাল সিআরবিতে না করে অন্য কোথাও-ও করা যায়। শুধু শুধু সিআরবিকে নিয়ে টানাটানি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে আশা করি সিআরবিতে এ প্রকল্প হবে না।’
মতবিনিময়ের সময় নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, কো-চেয়ারম্যন ডা. মাহফজুর রহমান, পরিবেশ গবেষক ড. ইদ্রিস আলী, জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, নাগরিক সমাজের যুগ্ম সদস্য সচিব রাশেদ হাসান, বোধনের সভাপতি আব্দুল হালিম দোভাষ ও সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক আলীউর রহমান, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মুন্না, সরোয়ার আমিন বাবু ছিলেন।
উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় সিআরবিতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট বাস্তবায়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য। প্রকল্পের মেয়াদ ১২ বছর।
দুই বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়টি প্রকাশ পেলে চট্টগ্রামে বিভিন্ন নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলনে নেমেছিল। গত বছরের জুলাইয়ে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি উঠে এলে আবারও সোচ্চার হন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এবং ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালে রাস্তায় নামে মানুষ।
এরপর নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম গঠন করে ধারাবাহিকভাবে সিআরবি এলাকায় নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। শুরুর দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ সিআরবিতে হাসপাতালের বিরোধিতা করলেও এখন তারা নিশ্চুপ আছেন।
এর মধ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে সরকারি সফলে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেছেন, চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপি, জনপ্রতিনিধিরা সিআরবিতে হাসপাতাল না চাইলে প্রধানমন্ত্রীও মত দেবেন না।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর