Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিসিকে চিঠি— জমি বুঝে না পেলে আত্মহত্যা করব

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:১১

আবু বক্কর সিদ্দিক মুন্সি, ছবি: সারাবাংলা

লালমনিরহাট: ১৯৮০ সালে কমলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয় নির্মাণের জন্য লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার হাজিগঞ্জ বাজারের কাছে ৩০ শতক জমি দান করেন তৎকালীন সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক মুন্সি (৮০)। কিন্তু একটি চক্র ওই ইউপি সদস্যের সরলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দানপত্র দলিলে ৭১ দশমিক ৫ শতক জমি লিখে নেয়। কিন্তু পরে সেখানে আর ইউপি কার্যালয় নির্মাণ হয়নি। তাই অবশিষ্ট জমি ফিরত পেতে জেলা আদালত থেকে শুরু করে হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায় এ মামলা। ২০০০ সাল থেকে দীর্ঘ ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও ৭টি মামলা হলেও সবকটির রায় জমিদাতা আবু বক্কর সিদ্দিকের পক্ষে। তবুও আজ পর্যন্ত জমি ফিরত বা দখলে নিতে পারছেন না তিনি। ওই জমি দখলে নিয়ে দোকান নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

বিজ্ঞাপন

আদালতের রায় কার্যকর না হওয়ায় অবশেষে নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশ কোর্ট ফি বিশ টাকা আবেদন সংযুক্ত একটি পত্র জেলা প্রশাসকের নিকট ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আত্মহত্যার আবেদন করেন আবু বক্কর সিদ্দিক মুন্সি। গতকাল সোমবার (৭ জানুয়ারি) লালমনিরহাট প্রেসক্লাবে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের ছোট কমলাবাড়ী গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে। দীর্ঘ ২০ বছরের ৭টি মামলার জট টানতে টানতে নিঃস্ব হয়েছেন তিনি।

অভিযোগে জানা যায়, ভুক্তভোগী আবু বক্কর সিদ্দিক নালিশী ৭১ দশমিক ৫ শতক জমি দানপত্রের দলিল বাতিলের মামলা করেন। আদিতমারী সহকারী জজ আদালতে মামলাটি করেন। ওই মামলায় রায় ও ডিক্রি প্রাপ্ত হলে আদালতের নির্দেশক্রমে মূল দানপত্র দলিল ও সাব রেজিস্ট্রি অফিস লালমনিরহাট ওই দানপত্র দলিলের ভলিওম সংশোধন করা হয়। পরর্বতীতে জেলা প্রশাসক ওই মামলার রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপীল নং- ৮৮/২০০০ দায়ের করিলে আদালত ওই আপীল খারিজ করে পূর্বের দেওয়া রায় ডিক্রি বহাল রাখেন। জেলা প্রশাসক হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন নং- ২৯৫৬/২০০২ দায়ের করেন। হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকাবস্থায় নালিশী জমি স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা বেদখল করে নেন।

সেখানে আরও বলা হয়, পরে হাইকোর্ট ৪১ দশমিক ৫ শতক জমির সীমানা ও চৌহদ্দি বর্ণনা করে পুনরায় রায় লেখার নির্দেশ দেন জেলা যুগ্ন জজ ২য় আদালত লালমনিরহাটে রিমান্ডে প্রেরণ করলে জেলা যুগ্ম জজ ২য় আদালত ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিলে ৪১ দশমিক ৫ শতক জমির সীমানা ও চৌহদ্দি বর্ণনা করেন পুনরায় রায় ও ডিক্রি প্রদান করেন। ওই রায় প্রাপ্ত জমি দখলে পাওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি জেলা যুগ্ম জজ- ১ম আদালতে অবৈধ দখলদারদের বিবাদী করে খাস দখল মামলা ৩২/২০১৫ইং দায়ের করেন। এতে আদালত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের রায় দেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক ২য় দফায় জেলা জজ আদালতে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করেন। যার নং- ৩১/২০১৯ এবং অন্য বিবাদীরা ৩৬/২০১৮ আপীল করলে জেলা জজ গত বছর ২২ নভেম্বর আপিল ২টি খারিজ করে দেন। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের রায় ডিক্রি বহাল রাখেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

নালিশী জমি সিএসএসএ সর্বশেষ বিআরএস রেকর্ড ব্যক্তি মালিকানার নামে চূড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। নালিশী জমি নিয়ে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন নং- ২৯৫৬/২০০২ বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মোকছেদ আলী ও তাহার ভাই মোকলেছুর রহমানকে এক লাইসেন্স দেন। যা দুই ভাই মিলে ২০ শতক জায়গা দখলে নিয়েছেন। আবার ৩২/২০১৫ খাস দখল মামলায় সরকার পক্ষের জবাবে ১/২০০০ সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক দায়ের কৃত অন্য আপিল ৮৮/২০০০, সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক কর্তৃক দায়ের করা হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন ২৯৫৬/২০০২ মামলার বিষয় গোপন করে এবং নালিশী জমির মালিক না থাকা ও খাস খতিয়ান ভুক্ত করা হয়েছে। যা আদিতমারী থানাধীন জেএল নং-৭৭, বড় কমলাবাড়ী মৌজার নালিশী সি এস নং- ৩০২ এস এ নং- ৩১৯, খতিয়ানের ১৬৬৫ নং দাগে ১ দশমিক ৪৩ একর মধ্যে আরজির হাত নকশায় চিহ্নিত দশমিক ৪১ একর জমির দখল। বাদীর অনুকূলে অর্পণ করার জন্য বিবাদীপক্ষকে আদালত নির্দেশ দেয় বলে ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে জমিদাতা আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমি একজন নিরীহ মানুষ হিসেবে তারা আমার বিরুদ্ধে প্রতিবার হয়রানি ও ষড়যন্ত্র করছে। এ পরিস্থিতিতে আদালত থেকে ৭টি রায় ও ডিক্রি পেয়েও আমি জমি ফেরত পাচ্ছি না। তাই ওই নালিশী ৪১ দশমিক ৫ শতক জমি সরকারী সার্ভেয়ারের মাধ্যমে পরিমাপ পরে দখল ও নামজারীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও আদিতমারী সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট আবেদন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ২০ বছরের মামলার জট টানতে টানতে আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। কেউই আমার বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। এ অবস্থায় আমি আমার পরিবারের যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়ী থাকবেন। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাই আইনের মাধ্যমে সুবিচার চাই।’

এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের ভূমি অফিসের ইনচার্জ মো. মমিনুল করিম চৌধুরী বলেন, আদালতে মামলা জটিলতার কারণে বর্তমান ওই জমির খাজনা আদায় করা হচ্ছে না। তবে যারা ওই জমি লিজ গ্রহীতা তারা ১৪২১ (বাংলা) সাল পর্যন্ত লিজের টাকা পরিশোধ করেছেন।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার ফোন ধরেননি।

সারাবাংলা/এনএস

আদিতমারী আবু বক্কর সিদ্দিক মুন্সি লালমনিরহাট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর