Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষক নিয়োগ: আশা-নিরাশার দোলাচলে চাকরীপ্রার্থীরা

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:২৩

ঢাকা: বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে প্রার্থীদের অপেক্ষা শেষই হচ্ছে না। ২০১৯ সালের ২৩ মে সবশেষ ১৬তম নিবন্ধনের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনো ওই পরীক্ষা থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া শেষ হয়নি। মাঝখানে চলে গেছে প্রায় তিন বছর। ফলে উত্তীর্ণ হয়েও এখনো নিয়োগ পাবেন কি না— সেই আশা নিরাশার দোলাচলে রয়েছেন বেশিরভাগ চাকরীপ্রার্থী।

১৬তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে এরই মধ্যে চারটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে শেষ বিজ্ঞপ্তিটি ‘বিশেষ’ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে গত পরশু সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি)। এই বিজ্ঞপ্তিকে বিশেষ বলার কারণ— তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে যে ৫৪ হাজার পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে অনেকে আবেদন না করায় এই বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সবশেষ এই বিজ্ঞপ্তি থেকে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাবেশিক পর্যায়ে ১৫ হাজার ১৬৩ জনকে শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। গতকল মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে এই বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন শুরু হয়েছে। চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর এ বছরের মার্চ বা এপ্রিল মাসে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসেএ)। এই বিজ্ঞপ্তির জন্যই দু’দিন আগেও জোর আন্দোলন করেছেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা।

নিয়োগ নিয়ে সময়ক্ষেপণের কারণে ‘বিশেষ’ বিজ্ঞপ্তি পেলেও এনটিআরসিএ’র প্রতি মোটেও খুশি হতে পারছেন না চাকরিপ্রত্যাশীরা। ১৬তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্য এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রতিষ্ঠানটি তাদের মৌখিক ভাবে আশার কথা শোনালেও অতীত অভিজ্ঞতার কারণে কেউই আশাবাদী হতে পারছেন না।

বিজ্ঞাপন

চাকরিপ্রার্থীদের মুখপাত্র মো. শাকিল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, আমরা চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সেখানে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মার্চ-এপ্রিলে চতুর্থ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আমরা আমাদের অনশন স্থগিত করেছি। কিন্তু এনটিআরসিএ আমাদের ভাগ্য নিয়ে যেভাবে খেলছে, আমরা তাতে আশাবাদী হতে পারছি না।
শাকিল আহমেদ জানান, কেবল অনশনই নয়, শিক্ষক নিয়োগ দ্রুত শেষ করার জন্য মানববন্ধনসহ এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন নিবন্ধনকারীরা।

১৬তম নিবন্ধন ফোরামের আরেক মুখপাত্র মো. জাকির বলেন, ১৬তম ব্যাচকে অনেক অবহেলা করা হয়েছে। পরীক্ষা শেষ করতে করতেই অনেকের বয়স ৩৫ পার হয়ে গেছে। তাদের কথা কেউ ভাবছে না। অথচ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একটি চাকরি আমাদের প্রাপ্য।

এদিকে নিয়োগপ্রত্যাশীদের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনটিআরসিএ বলছে, মার্চ মাসের শেষ দিকে অথবা এপ্রিলের শুরুতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি এখন শূন্য পদের তালিকা সংগ্রহের কাজ করছে।
এনটিআরসিএ বলছে, ১৫ হাজার শিক্ষকের ‘বিশেষ’ নিয়োগের পর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশে আরও ৪০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের পথ উন্মুক্ত হবে।

এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান সারাবাংলাকে বলেন, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির কাজই এখনো শেষ হয়নি। এই নিয়োগ থেকে চাকরিপ্রাপ্তরা এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। তারা কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পর আমরা শূন্য পদগুলোর তথ্য সংগ্রহ করব। সুতরাং বলা চলে, মার্চের শেষ দিকে বা এপ্রিলের শুরুতে পরের বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হবে।

এনটিআরসিএ সূত্র আরও বলছে, গত তিন বছর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত ছিল। এ কারণে সারাদেশে এখন প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য। তৃতীয় বিজ্ঞপ্তি থেকে মাত্র ৩৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বাকি পদগুলোতে চতুর্থ বিজ্ঞপ্তি থেকে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।

এনটিআরসিএ বলছে, তৃতীয় বিজ্ঞপ্তি থেকে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। তাদের সবাইকে নিয়োগ দিতে পারলে অচলবস্থা কিছুটা কেটে যেত। নিয়োগপ্রত্যাশীরাও খুশি হতেন। কিন্তু আবেদনকারীদের অধিকাংশই ইনডেক্সধারী হওয়ায় এবং নারী কোটা ও অন্য ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ১৫ হাজার ৩২৫টি পদ ফাঁকা রয়ে যায়। এখন এসব পদে নিয়োগের জন্য যোগ্য প্রার্থী খুঁজতে ‘বিশেষ’ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, তৃতীয় ওই গণবিজ্ঞপ্তি থেকে ৩৪ হাজার ৭৩ জন প্রার্থী নিজেদের কর্মস্থল পেয়েছেন। তাদের বেশিরভাগকেই ভেরিফিকেশন ছাড়াই কর্মস্থল দেওয়া হয়েছে। চাকরিরত অবস্থায় তাদের বিষয়ে পুলিশি যাচাই চলবে, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার চাকরি রদ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

সারাবাংলা/টিএস/টিআর

এনটিআরসিএ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর