ড. অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ১৭ অভিযোগ, নথি চেয়েছে দুদক
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:০১
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) ড. এম অহিদুজ্জামান এর দুর্নীতি তদন্তে নথিপত্র চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. .মোহাম্মদ দিদার উল আলমের কাছে এ সংক্রান্ত নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।
দুদকের নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফেরদৌসী আহসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নথিপত্র পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। চিঠিতে ১৭টি বিষয়ে রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে।
যা চেয়েছে দুদক
১. নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান এর কর্মকালীন তার বিদেশ সফর (চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, জাপান ইত্যাদি) ভ্রমণসূচি ও খরচের বিবরণী সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।
২. সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান এর ব্যবহৃত গাড়ি ক্রয় ও ব্যবহার সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, গাড়ি ক্রয়ে ইউজিসির অনুমোদিত বরাদ্দপত্র, গাড়ি প্রাক্কলন, গাড়ি ক্রয় সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।
৩.সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান এর গাড়িচালক মনির হোসেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও পরবর্তী স্থায়ী নিয়োগের রেকর্ডপত্র ও তার বেতন ভাতার বিস্তারিত বিবরণ এবং গাড়িচালক মনির হোসেন কোথায় গাড়ি পরিচালনা করেছেন তার রেকর্ডপত্র।
৪. তার সময়কালে ইতালি থেকে লিফট ক্রয়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, ইতালি ভ্রমণের খরচসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র ও লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির রেকর্ডপত্র। ৫.সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.এম অহিদুজ্জামানের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্বপালনকালীন পারিতোষিকের বিবরণ
৬. অহিদুজ্জামান কর্তৃক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজের নিয়োগ ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাবদ টিএ ও ডিএ এর বিবরণ।
৭. সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.এম অহিদুজ্জামান এর সময়কালে হাইকোর্টের রিট এর জন্য আইনজীবী নিয়োগ ও এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচের বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র।
৮. উপাচার্যের বাংলোর কৃষিপণ্য, গবাদি পশু,হাস-মুরগি, মাছ চাষে আয়/ব্যয়ের বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র। ৯.সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.এম অহিদুজ্জামান যোগদানের পর ঢাকা ও বরিশাল/ঝালকাঠিতে ভ্রমণের কারণ ও ভ্রমণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ের বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র। ১০.২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা বাবদ সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামানের পারিতোষিক গ্রহণের বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র।
১১. অহিদুজ্জামানের কর্মকালীন ইম্প্রেস মানি বাবদ উপাচার্যের অফিস ও বাসভবনের জন্য ব্যয়িত ও বরাদ্দকৃত অর্থের বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র।
১২. উপাচার্যের বাসভবন এয়ারমার্ক সংক্রান্ত বিবরণ ও রেকর্ড এবং বাড়িভাড়া বাবদ অর্থগ্রহণের বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র।
১৩. অহিদুজ্জামানের সময়ে ১৯ জন শিক্ষকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের রেকর্ড ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নীতিমালা
১৪. অহিদুজ্জামানের সময়ে অডিট সেলের প্রধানে নিয়োগ সংক্রান্ত রেকর্ড ও সহকারী পরিচালকে নিয়োগ সংক্রান্ত রেকর্ড।
১৫. সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.এম অহিদুজ্জামানের সময়ে পরিকল্পনা উন্নয়ন ও ওয়ার্কার্স দফতরের পরিচালক পদে নিজাম উদ্দিনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, সহকারী প্রোগ্রামার পদে জাকির হোসেন, প্রধান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আল আহাদ ও এলডি পদে আরিফকে নিয়োগ সংক্রান্ত রেকর্ড।
১৬. চিফ মেডিকেল অফিসার পদে ডা. মোখলেছ উজ্জ জামানকে নিয়োগ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র ও নীতিমালা।
১৭. সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সংক্রান্ত তথ্য ও তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপি ও রেকর্ডপত্র।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ থাকার পরও সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এসব নিয়ে ক্ষোভ দমাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপকে ব্যবহার করার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালের জুনে নোবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান। তারপর থেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
তার অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের কমিটিও করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি তদন্ত কমিটি নোয়াখালীর সার্কিট হাউজে যায়। কিন্তু উপাচার্যপন্থি কর্মকর্তা ও বহিরাগত যুবকদের সশস্ত্র মহড়ায় ভীত হয়ে কমিটি তদন্ত না করেই ঢাকায় ফিরে আসে।
এ বিষয়ে ড. এম অহিদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ উঠেছে তা অসত্য ও ভিত্তিহীন। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কে বা কারা এসব অভিযোগ তুলেছে। এ সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’
নথি চাওয়ার বিষয়ে ফেরদৌসী আহসান বলেন, ‘চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই বলতে পারব না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই অধ্যাপক ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির পঞ্চম উপাচার্য।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ২০০১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
সারাবাংলা/একে