Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রাজনীতি স্বাভাবিক হলে গুম কমবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৪:৩১

ঢাকা: রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারা ফিরে এলে বাংলাদেশে গুম-খুনের ঘটনা বন্ধ হবে। একইসঙ্গে, এসব ঘটনার বিচার শুরু করা জরুরি বলেও মনে করছেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত জোরপূর্বক নিখোঁজ এবং রাষ্ট্রের দায় শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বক্তারা এই শর্তসাপেক্ষ আশাবাদের কথা জানান।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় ওই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

ওয়েবিনারে শুরুতেই কথা বলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট অসীম কুমার উকিল। তিনি বলেন, গুম-খুনের ঘটনাগুলো রাজনীতির অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলে এসেছে। কোনো ক্ষেত্রেই এসব ঘটনা কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না। রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারা ব্যাহত হলে অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া চালু হয়। যার ধারাবাহিকতায় এগুলো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের ধারাগুলি যত বেশি শক্তিশালী হবে রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তত সহজ হবে। অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া তথা গুম-খুন কমে আসবে। গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার পালা বদল হলো নির্বাচন। নির্বাচনের আগে অংশীজনদের বিমুখীতা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে বলে আশা করেন অসীম কুমার উকিল।

বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বলেন, যারা গুমের শিকার হচ্ছেন তারা আইনের আশ্রয় পাচ্ছেন না। কোথাও অভিযোগ করা যাচ্ছে না। দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতার ঘাটতি রাজনীতিতে ছন্দপতন ঘটাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হলে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তারা দায় নিলে এসব ঘটনা বন্ধ হয়ে যেত।

এ সময় তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে গুম হওয়া কয়েকজনের আত্মীয় ও স্বজনদের দুর্ভোগের বিষয় তুলে ধরে বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গুম হওয়া মানুষজনের স্বজনদের মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। যাতে তারা মুখ খুলতে না পারে।

আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মহাসচিব নূর খান লিটন গুমের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, সংক্ষিপ্ত পথে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন, বিরোধী মত দমন- এই তিন উদ্দেশ্যে গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে দায় না এড়িয়ে এই ধরণের অপরাধ কারা করেছে তা স্পষ্ট করা। দেশে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি নেই কারণ ক্ষমতায় আসতে কারও সমর্থন দরকার হয় না। এজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। এসব ঘটনার জন্য পুরো বাহিনীকে দোষারোপ করছি না। কিন্তু অনেকের নাম চলে আসবে। যারা ফিরে এসেছেন তাদের বর্ণনা আমরা শুনেছি। তারা যে বর্ণণা দিয়েছেন এভাবেও রাষ্ট্র চলতে পারে না। এক মুহূর্তও চলার সুযোগ নেই।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নাগরিক সমাজ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। দমনমূলক আইন দিয়ে তাদের থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দল বা ব্যক্তির কথা না বলে গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলে দেওয়ার কথা বলতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার পেছনে জড়িত যারা বেঁচে আছে আজ না হোক ৩০ বছর পর তাদের বিচার হবে। ল্যাটিন আমেরিকার ৭০ দশকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিচার হচ্ছে। বাংলাদেশেও এগুলোর বিচার হবে। কতগুলো জিনিসের বিচার না হলে সমাজ টিকে থাকতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, আজ হোক দশ বছর পরে হোক, যারা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা কাঠগড়ায় দাঁড় হবেন। এত বড় অন্যায় করে যারা বুক ফুলিয়ে আছেন এই সমাজকে টিকে থাকতে হলে তাদের বিচার হতেই হবে।

সিজিএস সভাপতি ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, গুম খুন সবই রাজনৈতিক ঘটনা না। টাকার জন্য অনেক ঘটনা ঘটছে। রাজনীতিবিদরা এগুলো স্বীকার করছেন না। ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে গুম-খুন বেশি হয়েছে। কারণ যেন নির্বাচনে লোকজন না দাঁড়ায়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব এগুলো প্রতিহত করা।

তিনি আরও বলেন, স্যাংশনের মাধ্যমে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে। স্বচ্ছ ও শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন গঠন করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সারাবাংলা/টিএস/একেএম

গুম টপ নিউজ সিজিএস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর