Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাঁশঝাড়ে অবৈধ সিসা কারখানা, জনবহুল এলাকায় ছড়াচ্ছে বিষ

শ্যামল মিত্র, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:১৩

নরসিংদী: প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকেই নাকে আসে অসহনীয় ঝাঁজালো গন্ধ। পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা বের করার কারণে তৈরি হওয়া অ্যাসিডের এই প্রকট গন্ধে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ। এলাকাবাসী জানান, অবৈধ এই সিসা কারখানার কারণে নিঃশ্বাস নেওয়াই কষ্টের কাজ হয়ে গেছে।

বেলাব উপজেলার পাহাড় উজিলাব গ্রামের বেলাব-মরজাল সড়কের পাশে খোলা জায়গায় বাঁশঝাড় ও ফসলি জমির পাশে এই কারখানার অবস্থান। অন্যদিকে, উপজেলার একই ইউনিয়নের বেলাব বটেশ্বর সড়কের রাজারবাগেও একইভাবে তৈরি করা হয়েছে আরেকটি অস্থায়ী সিসা সংগ্রহের কারখানা।

বিজ্ঞাপন

দু’টি কারখানাই জনবহুল এলাকার সড়কের পাশে স্থাপন করে প্রতিদিনই পোড়ানো হচ্ছে শত শত পুরোনো ব্যাটারি। এসব ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কারণে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘদিন ধরেই বিরূপ প্রভাব ফেলে চলছে।

এলাকার কৃষক ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সিসা কারখানা দু’টি থেকে নির্গত এসিড গবাদি পশু, পুকুরের মাছ ও ফসলি জমির ক্ষতি করছে। সিসার বিষে কিছু কিছু জমিতে ধানের চারা লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। তীব্র দুর্গন্ধে এলাকাবাসীর শ্বাসকষ্ট হয়। অনুমোদনহীন কারখানাগুলো নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত এসব করখানা বন্ধ বা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।

জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার টুটুল নামে একজন উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের পাহাড় উজিলাব ও রাজারবাগ গ্রামে দু’টি অস্থায়ী অবৈধ কারখানা স্থাপন করে এলাকার কিছু প্রভাবশালীর সহযোগিতায় পুরোনো ব্যাটারি সংগ্রহ করে এসব কারখানায় এনে ব্যাটারি ভেঙে সিসা গলিয়ে পিন্ড তৈরি করে। এ থেকে সৃষ্ট বর্জ্য মাঠ, ফসলি জমি ও পানিতে মিশে যায়। ফলে অতিরিক্ত সিসা থেকে সৃষ্ট বিষক্রিয়ায় জমি নষ্টের পাশাপাশি গবাদি পশু, মাছসহ জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

উজিলাব গ্রামের কৃষক জনি ভূঁইয়া বলেন, ‘উজিলাব গ্রামে যে জায়গায় কারখানা করা হয়েছে, এর পাশেই তার পুকুর ও ফসলি জমি। ব্যাটারি থেকে নির্গত এসিড ও বিষে তার পুকুরের মাছ মরে যাচ্ছে। জমির ফসলও লাল হয়ে মরে যাচ্ছে।’

একই গ্রামের পল্লী চিকিৎসক বাদল জানান, তিনি কারখানার কাছেই তার জমিতে ধান লাগিয়েছেন। কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও এসিডে তার ধানের চারা লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে।

নরসিংদী জেলা পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রলয় জামান বলেন, ‘এ ধরনের কারখানা করতে হলে অবশ্যই ইটিটিপি ও এটিটি প্ল্যান্ট থাকতে হয়। কারণ এর পানি ও আগুনের ধোঁয়া হেভি মেটাল। প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করা না হলে মাটি ও বাতাসে সিসার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর প্রভাব শুধু ফসলি জমি বা পশুর মাধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এর প্রভাব মানুষের শরীরে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।’

অভিযুক্ত কারখানা মালিক টুটুল জানান, জরুরি কাজে তিনি গাইবান্ধায় আছেন। এলাকায় এসে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলবেন। আর কোনো কথা না বলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বেলাব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিম উর রউফ খান বলেন, ‘ব্যাটারি গলানোর ফলে নির্গত সিসা ও বর্জ্য ফসলি জমির জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে এখনও কোনো কৃষক লিখিত বা মৌখিক ভাবে তার কাছে অভিযোগ করেননি। ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘ব্যাটারি গলানোর ফলে নির্গত পানি যদি কোনো ঘাস, খড় বা জলাশয়ে পড়ে এবং তা গবাদি পশু খায়, তাহলে সেই গবাদি পশু বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবে। এমনকি গবাদি পশুর মৃত্যুও হতে পারে।’

বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএস) ডা. মোহাম্মদ নূর আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যেকোনো কেমিক্যালের গ্যাসই ক্ষতিকর। এটার মাত্রা যদি অতিরিক্ত হয়, তাহলে মানুষের শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার, কিডনি, হৃদরোগের ঝুঁকিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে।’

বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, ‘কেউ যদি অবৈধ ভাবে সিসার কারখানা করে থাকে, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় তারা এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।’

সারাবাংলা/এমও

জনবহুল এলাকা বাঁশঝাড় সিসা কারখানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর