Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আওয়ামী লীগে বনিবনা না হলে বিএনপির তীরে ভিড়বে জাতীয় পার্টি

আজমল হক হেলাল স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:৫৯

ঢাকা: মহাজোটের অংশীদার হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সখ্য বেশ পুরনো। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎ সরকারেও থেকেছে আবার সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকাও পালন করেছে দলটি। তবে দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর নানা চড়াই-উতরাইয়ের মুখে  দলটি। দলের কোথাও ভাঙন, কোথাও অভ্যন্তরীণ কোন্দল এমন অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নতুন হিসাব-নিকাশ কষতে চাইছে দলটি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ঘর গোছানো, যোগ্য প্রার্থী যাচাই এবং নতুন জোটে সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

বিজ্ঞাপন

দলটির প্রভাবশালী সূত্র থেকে জানা গেছে— জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার হাঁকডাক করলেও তা শুধু কথার ফুলঝুরি। একক নির্বাচন করার সক্ষমতা জাতীয় পার্টির নেই। কেননা দলের ভেতর যোগ্য প্রার্থীর খুবই অভাব। দলটির নির্বাচন করতে হবে জোটগতভাবেই। এক্ষেত্রে যে জোটে আসন বেশি পাবে সেদিকেই ঝুঁকে পড়বে জাতীয় পার্টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে— আগামী নির্বাচনে আসন সংখ্যা নিয়ে দরকষাকষিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বনাবনি না হলে বিএনপির তীরে ভিড়ে জাতীয় পার্টি। এ জন্য জাতীয় পার্টির একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। মামলা-হামলাসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ওই গ্রুপটি দৃশ্যমান হচ্ছে না বলে দাবি করে দলটির দায়িত্বশীল সূত্রটি।

সূত্রমতে বিএনপি’র সঙ্গে জোটে থাকলে জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে ১০০ আসন অনায়াসে পেতে পারে। কারণ জাতীয় পার্টিকে বিএনপি’র খুবই প্রয়োজন।

সূত্রটির মতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট জাতীয় পার্টিকে তেমন কোনো মূল্যায়ন করেনি। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে তাদের চাওয়া অনুযায়ী আসন দেয়নি। জাপার অভিযোগ- আওয়ামী লীগ কৌশল করে তাদের আসনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনেও এমনটি হবে না তার নিশ্চয়তা নেই। ফলে আগামী নির্বাচনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করলে ১৫ থেকে ২০টি আসন জাতীয় পার্টিকে দিতে পারে। হয়ত সেসব আসনেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে— এই হিসাব নিকাশ মাথায় রেখে জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে থাকবে। দলটির নীতিনির্ধারকের সভাও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে তার আগে দলকে শক্তিশালী করতে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে জাতীয় পার্টি।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেছেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ড এবং ২৪টি থানা কমিটির সম্মেলন করা হচ্ছে। এরমধ্যে ২৩টির সম্মেলন শেষ হয়েছে। ৪৮টি থানা ও ওয়ার্ডের সম্মেলন করার তারিখ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা ঢাকা মহানগরের দলকে শক্তিশালী করার জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ কর্মকাণ্ডে নিজেই উপস্থিত থাকছেন।

দলকে শক্তিশালী করার জন্য মাঠে কর্মরত কেন্দ্রীয় একজন নেতা জানান, সম্মেলন করতে গিয়ে যেটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে মনে হয়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা দলটি করতে চাচ্ছে না। তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। অনেক কর্মীরাই বলেছে রাজনীতি করতে এসে আমাদের লাভ নেই। লাভ সব শীর্ষ নেতাদের। তারা মন্ত্রী হচ্ছে, এমপি হচ্ছে, আখের গুছাচ্ছে। আগামী নির্বাচনেও তাদের অবস্থান অটুট থাকবে। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয় জাতীয় পার্টির প্রতি তাদের মায়া মমতা খুবই কম। মহাজোটে গা ভাসিয়ে এমপি মন্ত্রী হওয়ার জন্য স্বপ্নে ভাসছেন তারা।

এ নেতা জানান, জেলা কমিটিগুলোর অবস্থাও একই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যারা আছেন তারা জাতীয় পার্টি নামে রাজনীতি করছেন। অথচ তারা তৎপর নন।

তিনি জানান ৫৪টি জেলা কমিটিতে তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতাকর্মী রয়েছেন। তারা সবাই ছাত্রসমাজ থেকে রাজনীতি করেন। এ সব নেতারা এখন অবহেলিত।

এদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে র কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে উঠে এসেছে তাদের বিভাগে যোগ্য প্রার্থী নেই। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো নেতার একক জনসমর্থন নেই। এককভাবে নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টি বড়জোর দুই থেকে পাঁচটি আসন পেতে পারে।

এ প্রসঙ্গ নিয়ে ঢাকা মহানগরী এক নেতা জানান, ঢাকা বিভাগের ১৮টি জেলায় ২৫ জন যোগ্য প্রার্থী আছেন। তবে তারা একক নির্বাচনে জয়লাভ করবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। তার মতে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও নির্বাচিত হতে পারবেন কিনা সন্দেহ।

এদিকে দলটির তৃণমূল নেতারা জানান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতা ও দলীয় এমপিদের আনাগোনা নেই। সবাই বনানীমুখী। কারণ আগামী নির্বাচনসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হয় বনানী কার্যালয় থেক। প্রমোশন সহ সুযোগ-সুবিধা বিলি বণ্টন হয় ওখান থেকে। চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজেই বলেছেন যারা বনানীমুখী নয়, যাদের দেখি না তাদের প্রমোশন দেব কীভাবে?

কাকরাইল অফিসে ১৩টি অঙ্গসংগঠনের কক্ষ রয়েছে সে সব কক্ষে তালা ঝুলছে মাসের পর মাস। এমনকি চেয়ারম্যান ও মহাসচিব যে রুম দুটিতে বসেন সেখানেও ময়লা জমে পড়েছে।

দলকে শক্তিশালী ও আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধ ভাবে করা হবে কিনা সে সম্পর্কে দলটির চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন না। তবে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আগে দলকে শক্তিশালী করি, তারপর জোটগতভাবে নির্বাচন নাকি এককভাবে নির্বাচন তা ভাবা যাবে। দল যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে কোথাও মূল্যায়ন হবে না।’

জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, ‘দলকে শক্তিশালী করার জন্য শিগগিরই সারাদেশে ঝটিকা সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ সফরে আগামী নির্বাচনের জন্য যোগ্য প্রার্থী খোঁজা হবে। সফরে যাওয়ার আগ সারাদেশের জেলা কমিটি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি জাতীয়-নির্বাচন জি এম কাদের জোট বিএনপি মহাজোট সরকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর