Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশুর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলায় পল্লি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:১৯

ডান থেকে পল্লি চিকিৎসক মো. জয়নাল আবেদীন ও সহযোগী মিজানুর রহমান, ছবি: সারাবাংলা

কক্সবাজার: জেলার মহেশখালী উপজেলায় সুন্নাতে খৎনা করানোর সময় ৮ বছরের শিশুর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলায় পল্লি চিকিৎসক মো. জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশুটি। এক্ষেত্রে কোনো ক্ষতিপূরণ নয় ওই হাতুড়ে চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করছেন ভুক্তভোগী পরিবার। এদিকে কোনো প্রকার সহযোগিতা না করে উল্টো বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অপহরণ মামলা দেওয়ার হুমকি দেন ওই পল্লি চিকিৎসক।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা মো. মঞ্জুর আলম (৩৮) বাদী হয়ে পল্লি চিকিৎসক জয়নাল আবেদীনকে (৩৫) প্রধান এবং তার সহযোগী মিজানুর রহমানকে (২৮) দ্বিতীয় আসামি করে গত ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে (কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-মহেশখালী) মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী শিশুটির বাবা মো. মঞ্জুর আলম মহেশখালীর গোরকঘাটা পুটিবিলার আবুল কাশেমের ছেলে। আর মামলায় প্রধান আসামি জয়নাল আবেদীন ওই উপজেলার ছোট মহেশখালী সিপাহীর পাড়ার মো. ইসলামের ছেলে এবং মামলার দ্বিতীয় আসামি মিজানুর রহমানওই পল্লী চিকিৎসকের ছোট ভাই। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন মিজানুর।

আদালতে দায়েরকৃত মামলায় (ধারা-২২৯-৩১৯-৩২৬-৩০৭-৪৩ দঃ বিঃ) উল্লেখ করা হয়েছে, মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালীর সিপাহীর পাড়ার মেসার্স ‘জাহেদ মেডিকো’তে গত ২৮ নভেম্বর দুপুর ২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে মঞ্জুর আলম জানান, তার ৮ বছরের সন্তানের খৎনা করানোর সময় কাঁচি দিয়ে পুরুষাঙ্গের বড় অংশ কেটে ফেলে পল্লি চিকিৎসক জয়নাল আবেদিন। এ সময় তার সন্তান অজ্ঞান হয়ে যায় এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কক্সবাজার শহরের প্রাইভেট হাসপাতাল ফুয়াদ আল খতিবে ভর্তি করা হয়। ওখানে তিনদিন চিকিৎসার পরেও সন্তানের কোনো উন্নতি না হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও তিনদিন চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রামেই আরেকটি প্রাইভেট হাসপাতাল ‘এভার কেয়ার’এ ভর্তি করা হয়। ওখানে একদিন চিকিৎসার পর খরচ যোগাতে না পেরে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। এরপর থেকে বাড়িতে রেখে যতটুকু পারেন চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত ১৪ জানুয়ারি ওই প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়ার কথা থাকলেও টাকার অভাবে তা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ বাঁচা-মরার ব্যাপার হয়ে যাওয়ায় ঋণ করে শিশুটিকে চিকিৎসা করানো হচ্ছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

বিজ্ঞাপন

একদিকে টাকার সংকট অন্যদিকে শিশুর করুন অবস্থা। শিশুটির এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা হওয়ার পরেও পল্লি চিকিৎসক জয়নাল আবেদীন কোনো সহযোগিতা করছেন না। সন্তানের এই দুরবস্থার কারণে বাবা-মা অসহায় হয়ে পড়েছেন। শিশুটির বাবা আরও জানান, ওই চিকিৎসক কোনো সহযোগিতা করছেই না বরং হুমকি দিচ্ছে এ ব্যাপারে বেশি বাড়াবাড়ি করলে অপহরণ মামলা দিয়ে আমাদের ফাঁসানো হবে।

শিশুটির মা’ রাশেদা খানম বলেন, ‘এখনো জানি না আমার সন্তান আদৌ বাচঁবে কি না? কোনো ক্ষতিপূরর্ণ চাই না। বিচার চাই। যাতে করে এই ভুয়া চিকিৎসকের হাতে আর কোনো মায়ের সন্তানের এমন অবস্থা না হয়।’

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মো. জয়নাল আবেদিন সার্টিফিকেটধারী পল্লি চিকিৎসক নন। তিনি একজন ভুয়া হাতুড়ে ডাক্তার। তার লেখাপড়ার যোগ্যতা নেই বললেই চলে। এক চিকিৎসকের সহযোগী থেকে চিকিৎসক বনে গেছেন তিনি। মূলত খৎনাই করায় এবং সারা বছর একই ধরনের ওষুধই লিখেন তিনি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, যদি এমন হয়ে থাকে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবি আবুল কাশেম আবু জানান, এই ঘটনায় সি-আর মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সারাবাংলা/এনএস

টপ নিউজ পল্লি চিকিৎসক শিশুর পুরুষাঙ্গ কর্তন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর