Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এইচএসসি: পাসের হার বেড়েও পিছিয়ে চট্টগ্রাম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:৪৭

ফল প্রকাশের সেলফি তুলছেন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের শিক্ষার্থীরা, ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হারে দেশের অন্যান্য শিক্ষাবোর্ড থেকে পিছিয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পার্বত্য অঞ্চলের ফলাফল সামগ্রিকভাবে পাসের হারে প্রভাব ফেলেছে। তবে তিন পার্বত্য জেলায় আশানুরূপ ফল না হলেও আগের চেয়ে কিছুটা ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, এইচএসসিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গতবার পরীক্ষা না হওয়ায় শতভাগ পরীক্ষার্থীকে কৃতকার্য ঘোষণা করা হয়েছিল। এজন্য এবারের ফলাফল গতবারের সঙ্গে তুলনায় নিরূৎসাহিত করেছেন শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা। তবে একই পরিস্থিতিতে ২০২১ সালে পরীক্ষা হয়েছে বিলম্বে এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে।

বিজ্ঞাপন

গতবার অর্থাৎ ২০২০ সালের পরীক্ষার্থীদের ফলাফল বাদ দিলে এর আগের তিনবছরের চেয়ে এবার ভালো হয়েছে। এবার পাসের হার বেড়েছে। ২০১৭ সালে পাসের হার ছিল ৬১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ২০১৮ সালে ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ২০১৯ সালের ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছিল।

পাসের হার বাড়লেও দেশের অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৯৫ দশমিক ৭১ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে।

বিজ্ঞাপন

পিছিয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলার কারণে সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে অবকাঠামোগত সংকট আছে। বিষয়ভিত্তিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকেরও সংকট আছে। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেখানে শিক্ষার মান বাড়াতে। কিন্তু সেখানে অনেক দুর্গম অঞ্চল আছে। সেই বাস্তবতাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। এরপরও সেখানে ফলাফল আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পার্বত্য জেলাগুলো এখনো পিছিয়ে আছে।’

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা মিলিয়ে ২৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৯ হাজার ৬২৮ জন ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে পাস করেছে ৮৯ হাজার ৬২ জন।

পাসের হারে এবং জিপিএ ফাইভ অর্জনে ছাত্রীরা এগিয়ে আছে। ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ ছাত্রী ও ৮৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছাত্র পাস করেছে। জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ জন পরীক্ষার্থী, এর মধ্যে ছাত্রী ৭ হাজার ৬৭০ জন, ছাত্র ৬ হাজার ৫০ জন।

বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাশের হার ৮৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

বৃহত্তর চট্টগ্রামের জেলাগুলোর মধ্যে ফলাফলে পিছিয়ে আছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। সেখানে পাশের হার ৮১ দশমিক ৬২ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৮৩ দশমিক ২১ শতাংশ। বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৯১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাশের হার ৮৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বান্দরবানের পরীক্ষার্থীরা ভালো ফল করলেও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি পিছিয়ে আছে। বান্দরবানের চেয়ে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে দুর্গম এলাকা বেশি। সেটা একটা কারণ। সেখানে আরও কি কি সমস্যা আছে, সেটা আমরা খতিয়ে দেখব।’

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলিয়ে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ। শুধু মহানগরে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। শুধু জেলায় পাসের হার ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ।

কেউ পাস করেনি এমন কলেজের সংখ্যা দুইটি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পটিয়ার আইডিয়াল কলেজ থেকে শুধুমাত্র একজন পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে। খাগড়াছড়ির মহালছড়ির বৌদ্ধ শিশুঘর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চারজন পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করেছে।

শতভাগ পাস করেছে এমন কলেজের সংখ্যা ১৬টি। এগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, সেন্টপ্লাসিড্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কাপ্তাই, লামার কোয়ান্টাম কসমো কলেজ, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, সেন্ট স্কলাস্টিকাস গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাফকো স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কক্সবাজারের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেরন সান কলেজ, বোয়ালখালীর পশ্চিম কধুরখীল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরি কলেজ।

জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তির দিকে প্রথম স্থানে আছে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ। এই কলেজে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১২৮৫ জন।

মহসীন কলেজসহ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড জিপিএ-ফাইভ প্রাপ্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকা ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে। বাকি ২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, হাজেরা তুজ ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, পটিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজ, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মহিলা কলেজ চট্টগ্রাম, বিএএফ শাহীন কলেজ, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাটহাজারী কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ, হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম বন্দর কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ, নিজামপুর কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ, মহাজনহাট ফজলুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর