Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘হাইটেক সমুদ্র জাহাজ পরিচালনার উপযোগী ক্যাডেট তৈরি করতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:০৩

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী দিনে হাইটেক সমুদ্র জাহাজ পরিচালনার উপযোগী পেশাদার ক্যাডেট তৈরি করতে হবে। আর এজন্য বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৫৬তম ব্যাচের ক্যাডেটদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ (মুজিববর্ষ গ্র্যাজুয়েশন প্যারেড) অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মেরিন একাডেমিতে কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে সালাম গ্রহণ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মেরিন একাডেমির উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ইচ্ছে আছে, দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেরিন একাডেমি চালু হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা শুধু প্রশিক্ষিত হবে না, দেশে বিদেশে তাদের ব্যাপক কর্মসংসস্থানের সুযোগ হবে এবং আমাদের বেকার সমস্যা দূর হবে।’

তিনি বলেন, ‘তোমরা যারা দু’বছর আগে একাডেমিতে যোগদান করেছিলে, কঠোর প্রশিক্ষণ আর রুটিন মাফিক দৈনন্দিন চালচলন তোমাদের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আশা করি, আজকের দিনে তোমাদের অভিভাবকরা নিশ্চয়ই আনন্দিত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতা আসবে। সেগুলো মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা তোমরা অর্জন করেছ। সমুদ্রচারণ কোনো সাধারণ পেশা নয়। এ পেশায় আত্মনিয়োগ করলে সমুদ্রের প্রতি একটা তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ পণ্য পরিবহন সমুদ্র পথেই হয়ে থাকে। আর আমাদের বে অব বেঙ্গল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা। তাই বিশ্ব অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে মেরিন ক্যাডেটদের ভূমিকা অপরিসীম।’ জীবন ধারণের জন্য খাদ্য, জীবন রক্ষাকারী ঔষধসহ শিল্পায়নের যন্ত্রপাতির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর পরিবহন বিঘ্নিত হলে গোটা বিশ্বই স্থবির হবে বলেও মনে তিনি।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বৈশ্বিক মহামারির কারণে বহু সংখ্যক মেরিন অফিসার ও মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা সমুদ্রে আটকা পড়েছিল। তবে আমি আনন্দিত তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েননি। দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র অবহেলা করেননি। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার মহাসচিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরাও করোনাকালে অবিরাম দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মেরিন অফিসার/ইঞ্জিনিয়ারদের ‘কি-ওয়ার্কার’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছি।”

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির প্রায় পাঁচ হাজার প্রশিক্ষিত ক্যাডেট সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিবছর আমাদের অর্থনীতিতে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত করে থাকেন। তাছাড়াও প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক পরিসরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে তারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে থাকেন।’ কর্মক্ষেত্রে সবসময় সততা-দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতে নিজেরও ভালো লাগবে, দেশের মান ভালো থাকবে এবং দেশ আরও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থা উদ্ভাবনী গবেষণার মাধ্যমে মেরিটাইম খাতের উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। কেননা, বৈশ্বিক বেস্ট প্রাক্টিসেস, সম্পদের সহজলভ্যতা এবং প্রযুক্তিজ্ঞানের বিনিময়ের মাধ্যমেই এই খাতকে বর্তমান অবস্থা থেকে একটি সবুজতর ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাই এই সংস্থাটি সবুজতর শিপিংয়ের জন্য নব নব প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আশা করব, আগামী দিনের হাইটেক সমুদ্র জাহাজ পরিচালনার উপযোগী পেশাদার ক্যাডেট তৈরিতে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এবং সেইসব কারিকুলামগুলো নিয়ে আসবে।’

দেশ-বিদেশের সমুদ্রগামী জাহাজে আমাদের মেরিন ক্যাডেটদের নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনসহ দেশি-বিদেশি সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনা সংস্থাসমূহকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি আগামীতে আমাদের মেরিন ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণে উৎকর্ষতা অর্জন, কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং সাইন-অন ও সাইন-অফ সুবিধা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা আমাদের পাশে থাকবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মেরিন একাডেমীর প্রশিক্ষর্ণাথীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা শুধু নির্ভিক সমুদ্রচারী নও, তোমরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করো। আসলে তোমরা বাংলাদেশের দূত হিসাবে কাজ করো। তোমাদের দেশপ্রেম, সততা, আত্মবিশ্বাস ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। যখন এক দেশের পণ্য আরেক দেশে জাহাজে বয়ে নিয়ে যাবে, তোমরা বাংলাদেশের হাজার বছরের সভ্যতা ও সংস্কৃতি তুলে ধরবে। তোমাদের সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা ভবিষ্যৎ ক্যাডেটদের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যে সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। সেখানে বিশাল সমুদ্র সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদ আরোহণ করে আমরা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারব।’

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করতে পেরেছি। করোনা আমাদের বাধা দিতে পারেনি। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’

‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব বলেন’- প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেরিন একাডেমি

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর