বইমেলা ২০২২: আর মাত্র ১ দিন বাকি, চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:১১
ঢাবি করেসপন্ডেন্ট: সাধারণ সময়ে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে অমর একুশে বইমেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৪ দিন পিছিয়ে এবারের বইমেলা শুরু হতে যাচ্ছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। এক মাসব্যাপী বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার রীতি থাকলেও করোনা বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে এবার তা ১৪ দিন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নানান জল্পনা-কল্পনা শেষে শুরু হতে যাওয়া বইমেলার সর্বশেষ প্রস্তুতির তোড়জোড় দেখা গেছে। চলছে শেষ মুহূর্তের কর্মযজ্ঞ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে দোয়েল চত্বরমুখী সড়কের মাঝামাঝি স্থানেই বাংলা একাডেমির অবস্থান। বামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ওই এলাকায় প্রবেশ করতেই কানে বাজে হাতুড়ি-কাঠ-পেরেকের ঠুক ঠাক শব্দ। ভোর থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত চলছে স্টল তৈরির কাজ, যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। সমান তালে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, মেলার উভয় অংশেত প্রস্তুতিযজ্ঞ চলছে সমানে। বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার স্টলগুলোর অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্বে থাকা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্টল মালিকদের পক্ষ থেকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা আছে তাদের কাছে।
মেলার জন্য একটি স্টল নির্মাণ করছিলেন সায়েদুর রহমান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবছর কাজ করি। এবার তো দেরিতেই শুরু হচ্ছে বইমেলা। আমাদের বলা আছে, যেন দ্রুত কাজ শেষ করি। সময় অনেক কম। সকাল-থেকে রাত পর্যন্ত টানা কাজ করতে হচ্ছে।’
স্টল নির্মাণের তদারকিতে আসা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাবুই’র কর্ণধার কাদের বাবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামীকালের মধ্যে সব কাজ শেষ করে স্টলে বই তুলতে পারব। বইমেলা হচ্ছে, এটাই আনন্দের বিষয়।’
এর আগে, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবারের বইমেলা আয়োজন করার কথা জানায় বাংলা একাডেমি। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারির নয়, ১৭ মার্চ পর্যন্ত বইমেলার সময় বাড়ানোর দাবি আছে প্রকাশকদের পক্ষ থেকে।
বাবুই প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী কাদের বাবু বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির বাস্তবতা অবশ্যই মেনে নিতে হবে। গতবছরও আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। এবার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বইমেলা হবে ১৪দিন। এতে অন্তত কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। তবে মাসব্যাপী বইমেলা হলে ভালো হতো। সারাদেশ থেকে পাঠকরা আসতে পারতেন।’
এদিকে, ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি বইমেলার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এবারের বইমেলা প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। প্রতিদিন রাত ৯টায় মেলার আলো বন্ধ হয়ে যাবে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার এবং অন্যান্য ছুটির বিষয়ে একাডেমির এবারের সিদ্ধান্ত হলো— এই দিনগুলোতে বেলা ১১টা থেকে শুরু হবে মেলা। কেবল ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে মেলা শুরু করার কথা জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।
এদিকে, বইমেলাকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ও প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে এসে মেলাকে ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।।
মেলার আশপাশকেন্দ্রিক একটি, দোয়েল চত্বর ও শহীদ মিনারকেন্দ্রিক একটি এবং শাহবাগ-নীলক্ষেতকেন্দ্রিক একটি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থ থাকবে। মেলায় থাকবে মোট ছয়টি প্রবেশপথ। এর প্রত্যেকটিতেই আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেকটর দিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। এছাড়া মেলায় সোয়াত, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ ডগ স্কোয়াড মোতায়েন থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বইমেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিন সনদ সঙ্গে আনার নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। সেইসঙ্গে মেলার গেটে সবার শরীরের তাপমাত্রা মেপে এরপর মেলায় ঢুকতে হবে। মেলার ভেতরেও মোবাইল টিম থাকবে স্বাস্থ্যবিধি মনিটরের জন্য। মেলার স্টলের দায়িত্বে থাকা সবাইকে তাদের করোনা টিকা সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখতে হবে। না হলে কাউকে স্টলে থাকতে দেওয়া হবে না।’
সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম