শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে ফের উপজেলায় একমাত্র জিপিএ-৫ দীপার
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:১৮
খাগড়াছড়ি: প্রবল মানসিক দৃঢ়তার কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হারতে বাধ্য— তারই প্রমাণ আরেকবার মিললো দীপা নন্দীর কাছ থেকে। দুই বছর আগে এসএসসি পরীক্ষাতেও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী রেখেছিল মেধার স্বাক্ষর। এবার এইচএসসিতেও তার সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত। এসএসসির মতোই এইচএসসিতেও গোটা উপজেলায় একমাত্র জিপিএ-৫ ফল অর্জন করেছে দীপা।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এইচএসসি পরীক্ষার ফলপ্রকাশের পরই জানাজানি হয়, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দীপা পেয়েছে জিপিএ-৫। স্বাভাবিকভাবেই অভিনন্দনে ভেসেছে এই শিক্ষার্থী। কলেজের শিক্ষক-সহপাঠী থেকে শুরু করে স্থানীয় সবাই তার এই ফলে ভীষণ খুশি।
পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ছিল দীপা। এর আগে, ২০১৯ সালে সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। সেবারে উপজেলার মধ্যে একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে জিপিএ-৫ পেয়েছিল সে। এরপর পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়া নিয়েই ছিল অনিশ্চয়তা। সবার সহযোগিতায় সেই অনিশ্চয়তা কেটেছে। করোনাকালে কলেজে যাওয়ার সুযোগ তেমন না পেলেও শিক্ষক-সহপাঠীদের সমর্থন নিয়ে বাসায় বসেই পড়ালেখা চালিয়ে গেছে। এবার এইচএসসিতেও মিলেছে একই ফল— কলেজ তো বটেই, উপজেলাতেই একমাত্র জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী দীপা।
শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী পিতৃহীন দীপার সংগ্রামটা একদিনের নয়। নিজে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তার মা-ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। বেড়ে ওঠা মামা সঞ্জয় দাশ আর মামী চুমকি বিশ্বাসের কাছে। মামা-মামীও আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নন। তারপরও দীপার আগ্রহের কারণেই তার পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন কষ্ট হলেও। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েই তাক লাগিয়েছিল দীপা। মামা-মামী তাই তার পড়ালেখা বন্ধ করার কথা ভাবেননি। অষ্টম শ্রেণির সমাপনী জেএসসি পরীক্ষাতে জিপিএ-৫ পেয়ে তার প্রতিদান দিয়েছিল দীপা।
এইচএসসির এই ফলে ভীষণ খুশি তার পরিবার। মামী চুমকি বিশ্বাস বলেন, পড়ালেখার প্রতি দীপার যে আগ্রহ, সে কারণেই তার এত ভালো ফলাফল। আমাদের মতো অনেকেই ভাবতে পারেনি, দীপা এত ভালো ফল করবে। ওর এতদিনের চেষ্টা সফল হয়েছে। এতে আমরা খুব খুশি।
উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চোখ দীপার। ফিন্যান্স বিভাগে পড়ালেখা করে ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন তার। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতেই যে আর্থিক টানাপোড়েন মোকাবিলা করতে হয়েছে দীপাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠলে সেই টানাপোড়েন আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা মামা সঞ্জয় দাশের। বলছেন, তাদের একার পক্ষে দীপাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করানো সম্ভব নয়।
এমন পরিস্থিতিতে দীপার উচ্চ শিক্ষার জন্য সমাজের বিত্তবান ও সুহৃদদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, দীপার এমন সাফল্য অত্যন্ত আনন্দের। সবার জন্য দীপা অনুকরণীয়। সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে সে। আমরা তার পাশে থাকব। অন্যরাও সাধ্যমতো ওর পাশে দাঁড়ালে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো করবে।
সারাবাংলা/টিআর