Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভালোবাসার রঙ মিশেছে বসন্তে

সারাবাংলা ডেস্ক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:৪৯

বাসন্তি রঙে বসন্তকে স্বাগত জানাচ্ছে প্রথা মারিশা

সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন অমর পঙ্ক্তি— ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/ আজ বসন্ত’। না, বসন্তকে বরণ করে নিতে ফুল না ফোটার মতো ঘটনা ঘটেনি। পলাশ-শিমুল গাছে ঠিকই ফুটেছে আগুনরঙা ফুল। কংক্রিটের এই নগরীতেও একটু সতর্ক হয়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে কোকিলের কুহুতান। বাতাসে হিম থাকলেও দিনের বেলা রোদের উত্তাপও যেন কানে কানে বলছে— ‘বসন্ত এসে গেছে।’

প্রকৃতিজুড়ে বসন্তের এই আগমনী প্রস্তুতির মধ্যেই বর্ষপঞ্জির পাতা বলছে, শুরু হলো বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাস। শুরু হলো ঋতুরাজ বসন্তের যাত্রা। আর সংস্কার করা বর্ষপঞ্জি মেনে সেই একই দিনেই গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও শুরু ভ্যালেন্টাইনস ডে তথা ভালোবাসা দিবস। তাতে বসন্তের রঙে মিশেছে ভালোবাসায়।

বিজ্ঞাপন

ঋতুরাজ বসন্তের আগমন মানেই প্রকৃতিতে রঙের বাহার। শীতের হিম শুষ্কতা যখন প্রকৃতিকে রুক্ষ করে তোলে, সেই প্রকৃতিতে যেন প্রাণ ফিরিয়ে আনে বসন্ত। পাতা ঝরার দিন শেষে গাছে গাছে নতুন সবুজ পাতার উপস্থিতি। আগুনরঙা সব ফুলের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ভ্রমরের গুনগুনানি গান।

আরও পড়ুন- ফুলে ফুলে ফাল্গুন, ভালোবাসা গুনগুন | ছবি

প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে শীতের হিম কাটিয়ে ওঠে মানবহৃদয়ও। প্রকৃতিকে দোলা দিয়ে যাওয়া বসন্ত দোলা দিয়ে যায় মানুষের মনেও। তাই কবিতা-গানের ছত্রে ছত্রে বসন্তের বন্দনা। সেই বন্দনা ঘিরে রয়েছে প্রেমের জয়গানও। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের একটি দিনে মিলে যাওয়া তাই বাসন্তি ভালোবাসার মিশেল।

হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাওয়া এই ফাল্গুন অবশ্য গত বছর কেটেছে অনেকটাই ম্যাড়মেড়ে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের দাপটে দিন কাটাতে হয়েছে ঘরে। এবারও পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলেও অতটা প্রতিকূলেও নেই। তাই কিছুটা সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও বাসন্তি উৎসব আর ভালোবাসা দিবসের উৎসবে আগ্রহ-উচ্ছ্বাসের কমতি নেই।

বিজ্ঞাপন

রোববার মাঘের শেষ দিনেও রাজধানী ঢাকাতেও তেমনই দেখা গেল বসন্ত বরণ আর ভালোবাসা দিবসের প্রস্তুতি। রাজধানীর অন্যতম বড় ফুলের বাজার শাহবাগে এদিন দেখা গেল তরুণ-তরুণীদের ভিড়। লাল-বাসন্তি রঙের পোশাকে সবাই এসেছেন ফুল আর ফুলের গহনা কিনতে। একদিন আগে থেকেই যেন অনেকে বরণ করে নিতে শুরু করেছেন বসন্তকে। কেউ কেউ আবার প্রিয়জনের জন্য ফুল আর ফুলের গহনা কিনছেন পরদিনের জন্য।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বসন্ত বন্দনা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। কেউ কেউ আগের বর্ষপঞ্জি মেনে রোববারকেই পহেলা ফাল্গুন ধরে নিয়ে বসন্তের শুভেচ্ছা জানিয়ে চলেছেন। কেউ কেউ লাল-বাসন্তি পোশাকে ছবি দিয়ে বসন্ত বরণের আগাম বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন প্রিয়জনদের কাছে।

আরও পড়ুন- আগুনরঙা পলাশ বনে ফুল-পাখির মিলনমেলা | ছবি

অর্থনৈতিক দিক থেকেও পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের গুরুত্ব রয়েছে। দেশজুড়ে ফুলের যে আবাদ হয়ে থাকে, তার সবচেয়ে ভরা মৌসুমই মনে করা হয় বসন্ত বরণের এই সময়টিকে। এর সঙ্গে ভালোবাসা দিবস আর সপ্তাহখানেক পরেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস— ফুলের চাহিদা এই সময়টিতে থাকে তুঙ্গে।

দেশে ফুলের আবাদ যেসব এলাকায় হয়, তার মধ্যে অন্যতম যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদাখালী। এখানে প্রায় ছয় হাজার ফুল চাষিসহ ফুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষ। তারা বলছেন, বরাবরের মতোই তারা এই মৌসুমকে লক্ষ্য করেই আবাদ করেছেন গোলাপসহ নানা জাতের ফুল। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ফুলের বাজার নিয়ে বেশ শঙ্কাতেও ছিলেন তারা। তবে শেষ দু’দিনে বিক্রির পরিমাণ আশানুরূপ হওয়ার পাশাপাশি দামও পেয়েছেন ভালো। ফলে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

একই ধরনের কথা বললেন শাহবাগের দোকানিরাও। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে শেষ দুয়েকদিনের বেচাকেনা এবং ক্রেতাদের আনাগোনায় তাদের শঙ্কা কেটেছে। ফুলের বিক্রি যথেষ্ট ভালো। সোমবার অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে গত বছরের মতো হা হুতাশ করতে হবে না।

পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস সামনে রেখে রাজধানীর অলিগলিতেও লেগেছে রঙের বাহার। অনেক এলাকাতেই মোড়ে মোড়ে বসেছে অস্থায়ী ফুলের দোকান। পহেলা ফাল্গুনের দিনটিতে তরুণ-তরুণীদের হাতে ফুল তুলে দেওয়ার পশাপাশি নিজেদের পকেটটাও একটু ভারী করে নেবেন— তাদের লক্ষ্য এটুকুই।

এদিকে, জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মাথায় রেখে সোমবার তাদের বসন্ত বরণের আয়োজন কবে কিছুটা সীমিত পরিসরে। আগের বছরগুলোতে রাজধানীর উত্তরা, বাহাদুর শাহ পার্ক, রবীন্দ্র সরোবরে একযোগে নানা আয়োজন থাকলেও এ বছর তাদের বসন্ত উৎসব সীমাবদ্ধ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে। সেটিও সকাল ৭টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত। এর বাইরে ভালোবাসা দিবস সামনে রেখে উন্মুক্ত তেমন কোনো আয়োজন নেই কারও। তবে রেস্টুরেন্টগুলোতে থাকছে বিশেষ আয়োজন।

সোমবার যে ফাল্গুনের সূচনা হচ্ছে, সেই ফাল্গুন মাস জাতীয় জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫২ সালের এই ফাল্গুনেই ভাষার অধিকারের দাবিতে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। সালাম, রফিক, বরকতের রক্তে স্নাত হয়েছিল এই ফাল্গুন মাসই। ভাষার দাবিতে সেই আন্দোলনের ধারা বেয়েই বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হয় স্বাধীনতার সংগ্রামও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জাতি অর্জন করে গৌরবময় স্বাধীনতা। ভালোবাসা আর উষ্ণতার পাশাপাশি ফাল্গুন মানেই তাই বাঙালির দ্রোহের বহিঃপ্রকাশ। আসছে একুশে ফেব্রুয়ারি তথা ৮ ফাল্গুন সেই দ্রোহের সূচনাকারী ভাষা শহিদদের প্রতিও বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে জাতি।

সারাবাংলা/টিআর

ঋতুরাজ বসন্ত টপ নিউজ পহেলা ফাল্গুন বসন্ত বরণ ভালোবাসা দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর