Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাতারের গ্যাসের প্রধান ক্রেতা এশিয়া, ইউরোপের চাহিদা মেটাবে কে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১২:৫৮

ইউরোপে বৃহত্তম গ্যাস সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। ইউক্রেনে যুদ্ধ হলে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শীতকালে চাহিদা মতো গ্যাস না পেলে জনজীবনে সরাসরি বিরূপ প্রভাব পড়বে। এতে বিপাকে পড়বে ইউরোপের দেশগুলো। ফলে গ্যাস সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়ার বিকল্প খুঁজতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কর্মকর্তারা। বিকল্প হতে পারত কাতার। তবে বিশ্বের শীর্ষ গ্যাস রফতানিকারক কাতার সম্প্রতি এশিয়ার বাজারে বেশি মনযোগী। ফলে ইউক্রেন সংকটে ইউরোপের জন্য গ্যাসের চাহিদা মেটানো বেশ কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন কাতারসহ প্রধান কয়েকটি গ্যাস রফতানিকারকের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আলোচনার বিষয় ছিল, যদি ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন চালায় ও গ্যাসের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে ইউরোপ মহাদেশের গ্যাসের চাহিদা যাতে অন্যান্য রফতানিকারকরা মেটাতে এগিয়ে আসে।

তবে বাণিজ্য ও পণ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাতার একতরফাভাবে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে পারবে না। কারণ কাতারের বেশিরভাগ উৎপাদনের গন্তব্য এশিয়ার বাজার। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিবদ্ধ দোহা। ক্রেতাদের সম্মতি ছাড়া ইউরোপে চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে না কাতার।

পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান কেপলারের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক লরা পেজ নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, বিশ্বের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় এক পঞ্চমাংশ মেটায় কাতার। তবে উপসাগরীয় ছোট এই দেশটি বর্তমানে সক্ষমতার সর্বোচ্চ গ্যাস উৎপাদন করছে। ফলে সহসাই গ্যাসের উৎপাদন ব্যাপক মাত্রায় বাড়ানো দেশটির পক্ষে সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন- যেভাবে লিথিয়াম শিল্পে চীনের কাছে পিছিয়ে পড়ছে আমেরিকা

তিনি জানান, কাতারের বৃহত্তম গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ ও রফতানি কেন্দ্র রাস লাফান। সেখানে কাতারের মোট গ্যাসের ৯০-৯৫ শতাংশ উৎপাদন হয়। এ কেন্দ্রটি ইতিমধ্যে পূর্ণ সক্ষমতায় এশিয়ার ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিবদ্ধ। পেজ বলেন, ‘এই মুহূর্তে এশিয়ায় গ্যাসের চাহিদা ব্যাপক। তাই খুব শিগগির কাতারের গ্যাসের সরবরাহের বড় অংশ ইউরোপে যাবে এমন সম্ভাবনা আমি দেখছি না।’

পরামর্শক সংস্থা এফজিই-এর মধ্যপ্রাচ্যের গ্যাস বিভাগের প্রধান সিয়ামক আদিবি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘কাতার ইউরোপের জ্বালানি সংকট মোটেও সমাধান করতে পারবে না।’

বিজ্ঞাপন

গত বছর থেকে ইউক্রেন সীমান্তে লাখো সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করেছে রাশিয়া। এছাড়া কৃষ্ণ সাগর ও প্রতিবেশী বেলারুশে অস্ত্র ও সেনা পাঠিয়ে ইউক্রেনকে কার্যত তিন দিকে ঘিরে রেখেছে মস্কো। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি মনে করছে ইউক্রেনে যেকোনো সময় হামলার আদেশ দিতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে ক্রেমলিন বরাবরই বলে আসছে, ইউক্রেনে হামলা করার কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই।

রাশিয়া হামলার সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি হামলা আশঙ্কায় সবরকম প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। এর অংশ হিসেবে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ ঠিক রাখতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপের কর্মকর্তারা রাশিয়ার বিকল্প গ্যাস সরবরাহকারী খুঁজতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। উল্লেখ্য যে, পাইপলাইনের মাধ্যমে চাহিদার এক তৃতীয়াংশের বেশি গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করে থাকে ইউরোপ। ইতিমধ্যে রাশিয়া গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যুদ্ধ হলে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেল এ মাসের শুরুতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে চাহিদা মেটাতে বিকল্পের সন্ধানে একসঙ্গে কাজ করছেন তারা।

ইউরোপের সম্ভাব্য গ্যাস সংকট সামাল দিতে অবশ্য কিছু মিত্র দেশ আগেভাগেই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।  গত মাসে অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, রাশিয়া যদি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে ইউরোপে অতিরিক্ত এলএনজি সরবরাহ করবে তারা। বিশ্বে চীনের পর বৃহত্তম এলএনজি আমদানিকারক জাপান। দেশটি জানিয়েছে, ইউরোপে গ্যাসের সংকট দেখা দিলে ব্যবহারের পর উদ্বৃত্ত গ্যাস ইউরোপে সরবরাহ করবে তারা। দেশটির শিল্পমন্ত্রী কোইচি হাগিউদা গত সপ্তাহে বলেছিলেন, জাপানের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সেদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রম ইমানুয়েল।

আরও পড়ুন- বাইডেন-পুতিন ফোনালাপ: হামলা হলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাবে পশ্চিম

এদিকে কাতার জোর দিয়ে বলেছে, ইউরোপের গ্যাসের চাহিদা একা কোনো দেশ মেটাতে পারবে না। গত সপ্তাহে কাতারের জ্বালানি মন্ত্রী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, গ্যাসের সরবরাহ ইউরোপ অভিমুখে করতে তার দেশ এখনও এশিয়ান ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেনি।

কাতারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা কাতার এনার্জি গত দুই বছর ধরে এশিয়ার ক্রেতাদের সঙ্গে লাগাতার দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করে আসছে। এশিয়ার ভোক্তাদের মধ্যে চীন ও তাইওয়ান রয়েছে। এই দুই ভোক্তা কাতারের গ্যাসের বড় অংশ আমদানি করছে। ফলে গত বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে এর আগের বছরের তুলনায় তুরস্কসহ ইউরোপে কাতারের গ্যাস সরবরাহ কমেছে ২৭ শতাংশ। এশিয়ায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে গ্যাসের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। এছাড়া এ বছরের জানুয়ারিতেও গ্যাসের চাহিদা তুঙ্গে। করোনাভাইরাস মহামারিকালীন লকডাউন শিথিল হওয়ার ফলে এবং শীতকালে বাড়িঘর উষ্ণ রাখতে গ্যাসের চাহিদা মৌসুমের যেকোনো সময় থেকে বেশি বৃদ্ধি পায়।

সিয়ামক আদিবি বলেন, ‘এটা সম্ভব হতে পারে যে—এশিয়ার ক্রেতারা তাদের চুক্তি অনুযায়ী পূর্ণ গ্যাস সরবরাহ কাতারের কাছে নাও চাইতে পারে। তারা হয়ত নমনীয় হতে পারে। তবুও আমি এশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ খুব বেশি পরিমাণ হবে বলে মনে করি না। কাতার থেকে খুব সীমিত পরিমাণ গ্যাসই ইউরোপে যেতে পারে।’

যেসব এশিয়ান ক্রেতা কাতারের সঙ্গে ইতিমধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ক্রয় চুক্তি করেছে তারা দাম কম থাকার ফলে এখনই সর্বোচ্চ পরিমাণ আমদানি করতে চাইবে। কিন্তু রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আক্রমণ করে তাহলে গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে। ওই পরিস্থিতিতে এশিয়ার ক্রেতারা হয়ত গ্যাস ক্রয়ে ছাড় দিতে পারে।

আরও পড়ুন-

এলএনজি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ-এর পরিচালক অ্যান ক্যাটরিন ব্রেভিক নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, ‘কাতার বেশিরভাগ গ্যাস দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিবদ্ধ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকে। চুক্তিবদ্ধ ক্রেতাদের চাহিদা মাফিক গ্যাস সরবরাহ করতে আইনত বাধ্য কাতার। কাতার যদি চুক্তি ভঙ্গ করে ইউরোপে চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ করতে চায় তাহলে বিশ্ববাজারে তাদের সুনাম ব্যাপক মাত্রায় ক্ষুণ্ণ হবে, যার খুব উচ্চমূল্য দিতে হবে কাতারকে। ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করতে হলে কাতারের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিবদ্ধ ক্রেতাদের সম্মতির প্রয়োজন হবে।’

তিনি বলেন, ‘ক্রেতাদের সম্মতিতে কাতার ইউরোপে কিছু গ্যাস পাঠাতে পারে, কিন্তু রাশিয়া সরবরাহ বন্ধ করে দিলে যে ঘাটতি তৈরি হবে তা পূরণ করতে মোটেও যথেষ্ট হবে না।’

কেপলার পেজ জানান, রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে ইউরোপের চাহিদা মেটাতে এগিয়ে আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ইউরোপের প্রধান গ্যাস সরবরাহকারীর ভূমিকা নিতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস উৎপাদন ব্যাপক মাত্রায় বাড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে।

এছাড়া আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর মতো দেশে যথেষ্ট তরল গ্যাস রয়েছে। কিন্তু এসব দেশ সরবরাহ সীমাবদ্ধতার কারণে উৎপাদন কম করে থাকে। নানা কারণে দেশগুলো সহসা উৎপাদন বাড়াতে হিমশিম খাবে।

ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের পণ্য বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো নিক্কেই এশিয়াকে জানান, কোনো দেশের পক্ষে হঠাৎ করে গ্যাসের অতিরিক্ত উৎপাদন বাড়ানো কঠিন। গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে নানা জটিলতা রয়েছে। এছাড়া গ্যাস রফতানির বড় অংশ দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে আবদ্ধ। চাইলেও চুক্তিবদ্ধ ক্রেতাকে বঞ্চিত করে অন্য কোনো দেশে গ্যাস সরবরাহ করা যায় না।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গ্যাস রফতানিকারক দেশগুলোর ফোরামের দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন। ওই সম্মেলনে গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচ্যসূচিতে এ বিষয় থাকলে হতে পারে উত্তেজনা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গ্যাস রফতানিকারকদের ওই ফোরামের এক অন্যতম সদস্য রাশিয়া, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ওই ফোরামের সদস্যই নয়।

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর