কাদের সাথে ঐক্য হবে, জানালেন নজরুল ইসলাম খান
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:৪৯
ঢাকা: আগামী দিনের আন্দোলনে কাদের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য হবে, সে ব্যাপারে ধারণা দিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং এই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে তারাই আমাদের সঙ্গী হবে, যারা গণতন্ত্র চায়, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা চায়। যারা সরকারের সুবিধাভোগী হয়ে ব্যক্তিগত লাভের চিন্তা করে না- তেমন মানুষ, তেমন সংগঠন, তেমন দলের সঙ্গে আমাদের ঐক্য হবে। তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা একসঙ্গে লড়াই করব এবং গণতন্ত্র উদ্ধার করব।’
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন। ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে ৯০’র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীন মাতৃভূমি অর্জন করেছিলাম সেই অর্জনের সুফল এদেশের মানুষ আজও ভোগ করতে পারে নাই। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সুবর্ণ ফসল ছিল গণতন্ত্র এবং আমরা জানি বারবার সেই গণতন্ত্রকে নিহত করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে।’
‘আজকে এই মুহূর্তেও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বিশ্বের সম্মেলনে দাওয়াত পায় না। কারণ, এখন বিশ্ব স্বীকার করে না বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ হলো হাইব্রিড গণতান্ত্রিক দেশ। সাধারণ গণতন্ত্র না, হাইব্রিড গণতন্ত্র। এরকম দেশ কেমন হয়? সেখানে বিরোধীদলকে আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়, যেখানে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়, যেখানে জোরজবরদস্তি করে মানুষের বাকস্বাধীনতাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়, যেখানে সঠিবভাকে নির্বাচন হয় না- সেটাকে বলে হাইব্রিড গণতন্ত্র’- বলেন নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘এখন যারা ক্ষমতায় তাদের ইতিহাসই হলো গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থা নেওয়া। এই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয় বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। এরা হলো সেই দল, যে দল সংবিধানে জরুরি অবস্থাবিধি সংযোজন করেছে এবং জরুরি অবস্থা জারি করেছে। এই দল সেই দল, যে দলের অপশাসনের কারণে এই দেশে দুর্ভীক্ষ এসেছিল। এরা সেই দল, যেই দল সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েম করেছিল।’
‘এরা সেই দল, যে দল তাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে একটা বেআইনি অসাংবিধানিক সেনা সমর্থিত সরকারকে সমর্থন জানাতে পারে এবং তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারে। এরা সেই দল, যারা সব দলের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে, কিংবা দিনের ভোট রাতে করে নিজেদেরকে জনসমর্থিত সরকার বলে ঘোষণা করতে লজ্জিত হয় না’- বলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি কোনো দিন বিশেষ ক্ষমতা আইন করেনি, বিএনপি কোনো দিন জরুরি অবস্থা জারি করেনি, বিএনপি কোনো দিন সামরিক শাসন বা একদলীয় শাসন জারি করে নাই, বিএনপি কোনো দিন গণতন্ত্রকে হত্যাও করে নাই। বরং একদলীয় স্বৈরশাসনের গোরস্তানের ওপর বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাগান রচনা করেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তলাবিহীন ঝুরির অপবাদ থেকে দেশকে রক্ষা করে এদেশের উন্নয়নের সবগুলো ভিত্তি রচনা করেছিলেন তিনি।’
‘এরপরে যখন সামরিক শাসন এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করল, তখন গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ৯ বছর লড়াই করে তিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সে কারণে এ দেশের মানুষ তাকে আপসহীন নেত্রী বলে। তার আপসহীনতার পুরস্কার আমরা পেয়েছিলাম ১৯৯১ সালে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আমরা অনেক জায়গায় প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু জনগণ আমাদেরকে সমর্থন করেছিল। বিশেষ করে শিক্ষিত জনগণ, গ্রামের সাধারণ মানুষ আমাদের সমর্থন দিয়েছে’- বলেন নজরুল ইসলাম খান।
ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সব আন্দোলন শুরুটা করে আমাদের ছাত্রসমাজ। সেটা একুশের ভাষা আন্দোলন বলুন, স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন বলুন, স্বাধীনতার আন্দোলন বলুন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই বলুন- শুরুটা তারা করে। কিন্তু সেটা বেগবান হয় তখন, যখন তাদের সাথে যুক্ত হয় শ্রমিক সমাজ, যুবসমাজ এবং জনগণ।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা জানি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আন্দোলনের অগ্রসেনানী হিসেবে সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার হয়েছে, সবচেয়ে বেশি খুনের শিকার হয়েছে, সবচেয়ে বেশি মামলা-হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রত্যাশা তাদের কাছে। কারণ, তারাই আলোকবর্তিকা হিসেবে বার বার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এবং তাদেরকে অনুসরণ করেছে জনগণ ও সাধারণ মানুষ। আগামী দিনেও এর ব্যতিক্রম হবে না। আমরা আছি তাদের সাথে।’
‘তবে একাত্তর সালে যেটা করতে পেরেছি বা ৯০ সালে যেটা করতে পেরেছি, এখন যদি আমাদের কাছ থেকে সেটা আশা করেন, তাহলে পাবেন না। কিন্তু পাশে আমরা আছি’- বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজকে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারারুদ্ধ, গুরুতর অসুস্থ। আমাদের প্রতি তার যে স্নেহ, সেই স্নেহের প্রতিদান দেওয়ার সময় হয়েছে। এক্ষেত্রেও আপনারা (ছাত্রসমাজ) থাকবেন সামনের কাতারে। আপনাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এই মঞ্চেই যত নেতা আছেন, বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দলে এতো নেতা নেই।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক ছাত্র নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, নাজিম উদ্দীন আলম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এএম