এম এ মালেকের কণ্ঠে সিআরবি রক্ষার আকুতি
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৪৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিআরবি রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রমা আবৃত্তি সংগঠন আয়োজিত বসন্ত বরণ উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ করেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ঘরোয়াভাবে এ আয়োজন হয়েছে।
এম এ মালেক বলেন, ‘সিআরবি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য শুধু নয়, এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। আমরা জানতে পেরেছি, সেখানে নাকি একটা হাসপাতাল বানানো হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এই হাসপাতাল বানাতে নাকি ১২ বছর লাগবে। চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে আমাদের যতটা প্রতিবাদ করা দরকার আমরা করেছি। দৈনিক আজাদী খুব ছোট একটা কাগজ। আমরা চেষ্টা করেছি চট্টগ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সিআরবিতে হাসপাতালের বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিমত সেটা প্রকাশ করার। আমরা সেটা করেছি। এখন সরকার করবে। আশা করি সরকার আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করবে।’
সবাইকে আইন মানার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজাদী মানে স্বাধীনতা। আবার স্বাধীনতা মানে সবকিছু পেয়ে যাওয়া নয়। স্বাধীনতা মানে হচ্ছে আইনের অধীনে আমি স্বাধীন। আইন মেনে স্বাধীনভাবে চলতে হবে।’
বসন্ত উৎসবকে বাঙালির জীবনের অংশ উল্লেখ করে এম এ মালেক বলেন, ‘আমাদের জীবনের সঙ্গে বসন্ত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু বসন্ত নয়, ছয় ঋতুই আমরা ছয়ভাবে দেখি, অনুভব করি, ধারণ করি এবং পালন করি। পৃথিবীর আর কোনো দেশে ছয় ঋতু নেই। সুতরাং বসন্তসহ ছয় ঋতুই আমাদের জীবনের অংশ।’
ভালোবাসা দিবসের আয়োজন নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটা বাইরে থেকে ধার করে আনা হয়েছে। নব্বই দশকের আগে আমরা ভালোবাসা দিবস কি জানতামই না। আমরা ভালোবাসা দিবস নয়, বরং বসন্তকে বরণ করি।’
একুশে পদকপ্রাপ্তির জন্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমার যা কিছু চট্টগ্রামবাসীকে ঘিরে, দৈনিক আজাদীকে ঘিরে। আমি চট্টগ্রামবাসীর জন্য এই পদক উৎসর্গ করেছি। সরকার আমাকে এই পদকের জন্য মনোনীত করাই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
সভাপতির বক্তব্যে প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, ‘করোনা মহামারির বিধিনিষেধের কথা বলে সাংস্কৃতিক আয়োজনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সিআরবিতে বসন্ত উৎসব করতে দেওয়া হয়নি। অথচ এই চট্টগ্রাম শহরেই রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় আয়োজন সবকিছু অবাধে হচ্ছে। শুধু সাংস্কৃতিক আয়োজনে বিধিনিষেধ দেয়া হচ্ছে। তবুও আমরা বাঙালি আমাদের প্রাণের শক্তিতে জেগে উঠব, এই মহামারিকাল পেরিয়ে নতুন ভোরের দিকে এগিয়ে যাব। আমরা কবিতা, গান, সংস্কৃতির শক্তিতে অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর দিকে এগিয়ে যাব। জয় হবে বাঙালির, জয় হবে মানবিকতার, জয় হবে সুন্দরের আর সংস্কৃতির।’
প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পালের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার রাজীব রঞ্জন, একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক হোসাইন কবির, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ এবং আবৃত্তিশিল্পী কংকন চৌধুরী।
ঘরোয়া আয়োজন হলেও প্রমার বসন্ত উৎসবে নানা বয়সী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলন ঘটে। গান, কবিতা, নাচসহ নানা আয়োজনের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন সমবেতরা।
বিকেলে স্বপন দাস ও তার দলের ঢোলবাদনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। সঙ্গীত ভবনের শিল্পীরা দলীয় সঙ্গীত এবং শ্রেয়সী রায়, শংকর দে ও সাবিনা ইয়াসমিন একক গান পরিবেশন করেন। ওডিসি এন্ড টেগোর ড্যান্স মুভমেন্ট, ওরিয়েন্টাল ড্যান্স একাডেমি, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, ঘুঙ্গুর নৃত্যকলা একাডেমির শিল্পীরা দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন।
প্রমার শিল্পীদের বৃন্দ ও একক আবৃত্তির পাশাপাশি আবৃত্তিশিল্পী মিশফাক রাসেল, এহতেশামুল হক, মাহবুবুর রহমান, দেবাশীষ রুদ্র, সুবর্ণা চৌধুরী, হাসান জাহাঙ্গীর ও সেলিম রেজা সাগর একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমও