সুন্দরবন বাঁচাতে গ্রিন ভয়েসে’র সমাবেশ, পরিবেশ রক্ষায় ৪ দাবি
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:১৫
ঢাকা: সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বনকে রক্ষার দাবিতে ৪ দফা দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী ছাত্র-যুব সংগঠন ‘গ্রিন ভয়েস’। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘সুন্দরবন দিবস পালন ও ফসলি কৃষি জমির উর্বরতা ধ্বংস করে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের মহোৎসব বন্ধ করার’ দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে গ্রিন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির মাটি উত্তোলনকে পরিবেশবিনাশী, খাদ্য নিরাপত্তা বিনষ্টকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি মানুষসৃষ্ট এ সংকট থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
পরে সমাবেশ থেকে সংগঠনের পক্ষ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। তাদের দাবিগুলো হলো—
১। ইটভাটা, টাইলস ফ্যাক্টরিতে কৃষি-ফসলি জমি খনন করে উত্তোলিত মাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
২। ফসলি কৃষি জমির উর্বরতা, শ্রেণি প্রকৃতি নষ্ট করে মাটি উত্তোলনের মত পরিবেশবিনাশী, খাদ্য নিরাপত্তা ধ্বংস করে এমন কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৩। কৃষিজমি বিনষ্টকারী মাটিখেকো অপরাধচক্রের মাফিয়া সিন্ডিকেটকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৪। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতির আওতায় কৃষি জমি সুরক্ষার জন্য প্রয়োগযোগ্য, বাস্তবানুগ আইন তৈরি করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে কৃষি-ফসলি জমির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
গ্রিন ভয়েসের সহ সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমনের সঞ্চালনায় এবং প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবিরের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সিপিবি’র কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, নিরাপদ নৌ আন্দোলনের চেয়ারম্যান আমিনুর রসুল, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আইলা-সিডর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। আর এই বন ধ্বংসে সরকার ব্যস্ত। ফসলি জমি রক্ষায় ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে ভূমি ব্যবহার বিষয়ক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।’
নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘কৃষি জমির মাটি অবৈধভাবে উত্তোলন করার কাজে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান, স্থানীয় টাউট ও প্রভাবশালীদের এক শক্তিমান সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ভারি ও সড়ক বিনষ্টকারী ভেকু বা খননযন্ত্র, হাজার হাজার ওভারলোডেড মাটি ভর্তি ট্রাকের অবাধ চলাচল গ্রামীন সড়ক ব্যবস্থাকেও বিপন্ন করে তুলেছে।’
নিরাপদ নৌ আন্দোলনের চেয়ারম্যান আমিনুর রসুল বলেন, “জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি, ২০০১-এর ৫.৫ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, ‘উর্বর কৃষি জমি যেখানে বর্তমানে দুই বা ততোধিক ফসল উৎপাদনের জন্য সম্ভাবনাময়, তা কোনক্রমেই অকৃষি কাজের জন্য যেমন ব্যক্তি মালিকানাধীন নির্মাণ, গৃহায়ণ, ইটের ভাটা তৈরি ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এ নীতিমালার কোন কথাই কেউই গ্রাহ্য করছে না। এভাবে চলতে থাকলে কৃষি জমির সুরক্ষা বিপন্ন হবে। ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।”
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গ্রিন ভয়েসের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমন্বয়ক শাকিল কবির, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম রাতুল ও ইশরাত জাহান, খুলনা বিভাগের সমন্বয়ক আরিফুর রহমান, নড়াইল জেলার সমন্বয়ক কাউসার হামিদ, মৃত্তিকা সমাজ উন্নয়নের ব্যবস্থাপক খাদিজা খাতুন, গ্রিন ভয়েস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সধারণ সম্পাদক তারেক রায়হান, বহ্নিশিখার সংগঠক ফাতেহা শারমিন এ্যানিসহ অনেকে।
সারাবাংলা/আরএফ/এমও