তামান্নাকে ফোন করে অভিনন্দন জানালেন প্রধানমন্ত্রী
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১২:৩৩
বেনাপোল: পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া যশোরের ঝিকরগাছার অদম্য মেধাবী তামান্না নূরার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তামান্নার সঙ্গে ৪ মিনিট কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তামান্নাকে অভিনন্দন জানিয়ে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে তামান্নার মোবাইল ফোনে কল করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে তামান্নার ফোন বন্ধ পেয়ে তাকে একটি বার্তা পাঠান তিনি। একইদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানাও তামান্নার সঙ্গে কথা বলেছেন। তামান্নাকে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেছেন শেখ রেহানা।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন তামান্নার বাবা রওশন আলী।
তিনি বলেন, ‘সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা তামান্নার সঙ্গে কথা বলেন। সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা দুই জনে তিন-চার মিনিট করে কথা বলেছেন। দুজনই তামান্নার খোঁজখবর নেন এবং স্বপ্নপূরণে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।’
রওশন আলী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, ‘তোমার নাম তামান্না, আসলেই তুমি নূর। তোমার পরীক্ষার ফলাফল সত্যিই অভূতপূর্ব’।”
রওশন আলী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে তামান্না আনন্দে কেঁদে ফেলে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, “তুমি কাঁদছো কেন। তোমার স্বপ্নপূরণ হবে”।’
এ বিষয়ে তামান্না নূরা বলেন, “আমার চিঠি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী কল দিয়েছেন। এইচএসসির ফলাফল শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘তুমি এগিয়ে যাও, আমি তোমার সঙ্গে আছি। তোমাকে যাবতীয় সহযোগিতা করবো। তোমার সাফল্যে আমি আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে একটি আবেদন করতে বলেছেন।”
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঝিকরগাছার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তামান্না। বাঁ পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। একইভাবে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। তিনি ঝিকরগাছার আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন দম্পতির মেয়ে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তামান্না বড়। দুই হাত ও এক পা নেই তার। শুধু বাঁ পা নিয়ে জন্ম নেওয়া তামান্না শারীরিক প্রতিবন্ধিকতাকে জয় করেছেন।
এরইমধ্যে স্বপ্নপূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা ও দেখা করতে চেয়ে চিঠি লিখেন তামান্না। সেই চিঠি তার বাবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হকের কাছে জমা দেন। পরে ওই চিঠি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান ইউএনও। সেই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের মধ্য দিয়ে চিঠির জবাব মিলেছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুল হক বলেন, ‘কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেন তামান্না। ওই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক। সোমবার তামান্নাকে ফোন করে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তামান্নাকে অভিনন্দন জানিয়ে সাহস ও উৎসাহ দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে তাকে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন।’
জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘ঝিকরগাছার ইউএনও আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা শিক্ষার্থী তামান্না নূরার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তারা তাকে উৎসাহ ও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব ধরনের সহায়তা করবেন।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এর আগে তামান্না নূরা ও তার বাবার করা দুটো আবেদন প্রধানমন্ত্রীর পিএস বরাবর পাঠিয়েছিলাম। তামান্নার লেখা সবশেষ চিঠিও পাঠিয়েছিলাম।’
সারাবাংলা/এমও