প্রাণের মেলার যাত্রা শুরু, অনেকের প্রস্তুতি চলছে এখনো
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:২৪
ঢাকা: অনেক স্টল প্রস্তুত নয়। প্রস্তুত স্টলগুলোতেও নতুন রঙের গন্ধ। সব ছাপিয়ে বাতাসে নতুন বইয়ের গন্ধ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণের এই গন্ধ আর বিভিন্ন বয়সীদের স্টলে স্টলে নতুন বই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যই বলছে— শুরু হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে যে অনিশ্চয়তার দোলাচল দেখা দিয়েছিল, তা ছাপিয়েই দেরিতে হলেও শুরু হলো বইপ্রেমীদের মিলনমেলার এই আয়োজন।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এবারের বইমেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাথমিকভাবে ১৪ দিনের জন্য শুরু করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও বইমেলাকে মাসজুড়ে চালানোর বক্তব্য আসায় হাসিটা চওড়া হয়েছে প্রকাশকসহ বইপ্রেমীদের মুখে।
প্রথম দিনে বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল, বরাবরের মতোই এখনো চালু হয়নি অনেক স্টল। মেলাজুড়ে এখনো কাজ চলছে অনেক স্টলে। কোথাও রঙের কাজ শেষের দিকে, কোথাও চলছে স্টল সাজানোর কাজ। মেলাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আবর্জনাও। তবে এর বিপরীতেও অনেক স্টলেই শুরু হয়ে গেছে বিক্রিবাট্টা। প্রথম দিন বিবেচনায় মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতিও মন্দ নয়। পাশাপাশি প্রবেশপথে তাপমাত্রা পরিমাপ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উপস্থিতি এবং মুখে মুখে মাস্ক বলছে— মহামারি পরিস্থিতি নিয়ে সবার মধ্যেই সচেতনতা কাজ করছে।
আরও পড়ুন-
- অনিশ্চয়তা ছাপিয়ে খুলল বইমেলার দ্বার
- ‘অমর একুশে বইমেলা মাসব্যাপী চলতে পারে’
- ‘হৃদয়ের খোরাক জোগাতে সংস্কৃতিসেবীদের এগিয়ে আসতে হবে’
- বইমেলা ২০২২: আর মাত্র ১ দিন বাকি, চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা
প্রথম দিনে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও পুরো মেলা যেন এখনো শুরু হওয়ার অপেক্ষায়। ক্রেতা-দর্শনার্থীর চেয়ে প্রকাশক ও স্টল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিই বেশি। প্রথম দিনে স্টল চালু করতে পারেনি অন্যপ্রকাশ, পাঞ্জেরি, দেশ পাবলিসার্স, পুঁথিনিলয়, অন্যধারা, আজকাল, শব্দকোষ, বাংলা একাডেমির উত্তরাধিকার, এপিপিএল, অয়ন প্রকাশ, রেনেসাঁ ও কুঁড়েঘরের মতো প্রকাশনা সংস্থাগুলো। আরও বহু স্টলের অবস্থা একই।
জানতে চাইলে অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে আমাদের স্টল চালু করতে পারিনি। মেলা নিয়ে এবার অনেক অনিশ্চয়তা ছিল। মাত্র ১৩ দিনের মেলা। সব মিলিয়ে প্রথম দিনে স্টল চালু করা সম্ভব হয়নি।
মেলা বাড়ানোর ইঙ্গিত বিভিন্ন মহল থেকেই এসেছে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মেলা বাড়ানোর কথা। তাই মেলা বাড়ছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। অন্যপ্রকাশ থেকে এবার একশর মতো নতুন বই আসবে বলেও জানান তিনি।
স্টল চালু করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে ভাষাচিত্রের প্রকাশক খন্দকার সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, এবারের বইমেলা শুরু থেকেই প্রাণ পাচ্ছি না। বলা যায় নিয়ম রক্ষার জন্যে এসেছি। এখন বাংলা একাডেমির মেলা নিয়ম রক্ষার মেলায় পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলা একাডেমির আয়োজনে ঢিলেমি আছে। আমরাও ঢিলে করেছি। ১৩ দিন আবার কীসের মেলা? আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এই মেলা। তাই মেলা শুরু করেত পারিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মেলা যদি বাড়াতে হয় তবে শুরুর আগেই ঘোষণা আসা উচিত। আমরা যাদের স্টলে নিয়োগ দিয়েছি তাদের সঙ্গে আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি করেছি। মেলা বাড়লে তাদের আবার কীভাবে কাজ করাব?
জানতে চাইলে পাঞ্জেরি প্রকাশনীর ম্যানেজার ইফতেখার আহমেদ আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, মেলা শুরু হওয়ার আগে আমরা প্যাভিলিয়ন বুঝে পাইনি। যেহেতু মাঠ খালি ছিল, জায়গা আমাদের আগে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। আগে বুঝিয়ে দিলে আমাদের স্টল চালু করতে সমস্যা হতো না।
এদিকে, মেলায় বেশকিছু স্টলে এরই মধ্যে বিক্রি শুরু করতে পেরেছে। প্রথমা প্রকাশনীর ম্যানেজার জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের স্টলে বই বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। নিজেরাই অনেকে বই কেনা শুরু করেছেন। প্রথমা থেকে এবার ৫০টিরও বেশি নতুন বই আসছে।
নওরোজ কিতাবিস্তানের স্বত্বাধিকারী মনজুর খান চৌধুরী চন্দন সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবারই প্রথম দিন স্টল চালু করার চেষ্টা করি। এবারও প্রথম দিনে স্টল চালু করতে পেরেছি। প্রস্তুতি থাকায় তা সম্ভব হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নতুন বই এবার খুবই অল্প। কারণ আগের বছরের বইগুলোই পাঠকদের হাতে পৌঁছাতে পারিনি। এবারের মেলা নিয়ে আমরা দ্বিধায় ছিলাম, হবে কি না। তাই নতুন বইয়ের সংখ্যা খুবই কম।
বাংলা জার্নালের প্রকাশক হাবিবুর রহমান রোমেল সারাবাংলাকে বলেন, আমরা প্রথম দিনেই স্টল চালু করতে পেরেছি। এবার ১৫টির মতো নতুন বই আসবে আমাদের।
চন্দ্রবিন্দুর প্রকাশক কবি চৌধুরী ফাহাদ সারাবাংলাকে বলেন, গতকালই আমরা স্টলের কাজ শেষ করে ফেলেছি। আজ আমরা ডিসপ্লে করেছি। আমাদের ৪০টি নতুন বই মেলায় এসেছে। কিন্তু মেলা এখনো আবর্জনায় ভড়া। কবে পরিষ্কার হবে, বুঝতে পারছি না।
মেলায় আসা পাঠক নীলিমা সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম দিনেই প্রাণের মেলায় ঘুরতে এসেছি। এখনো অনেক স্টলের কাজ বাকি। প্রতিবারই এমন হয়। মেলার প্রথম দিকে এমন দেখে আমরা অভ্যস্ত। তবে আশা করি দ্রুতই মেলা জমে উঠবে। আরেক দর্শনার্থী ফাহিম বলেন, প্রথম দিনে মেলায় ভালোই দর্শনার্থী আছে। তবে মেলার পুরো পরিবেশ এখনো অগোছালো।
এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকের দুই পাশেই স্টল রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন দিয়েও মেলায় প্রবেশ করা যাচ্ছে। রাজু ভাস্কর্য থেকে বাংলা একাডেমির কাছেই রমনা কালী মন্দিরের কাছে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রয়েছে। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাগোয়া মেলার পশ্চিম পাশেও রয়েছে প্রবেশপথ। মেলা প্রাঙ্গণে লেকের দুই পাশে দর্শনার্থীদের খোশগল্পে সময় কাটাতে দেখা গেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এবার মেলা দুই সপ্তাহ দেরিতে শুরু হয়েছে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। তবে রাত ৮টার পর কেউ মেলায় ঢুকতে পারবে না। এছাড়া মহান একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে সাত লাখ বর্গফুট জায়গায় এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন রয়েছে ৩৫টি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
অমর একুশে গ্রন্থমেলা বইমেলা বইমেলা ২০২২ বইমেলার প্রস্তুতি বাংলা একাডেমি