‘নির্বাচন কমিশন গঠনে তাল গাছটা যেন আমার না হয়’
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:৪৩
ঢাকা: ‘দলীয় চামচা’ দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে সেটি হতাশাজনক হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে তাল গাছটা যেন আমার না হয়। শুরু থেকেই আমরা কমিশন গঠনে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচন কমিশকে ক্ষমতা না দিলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। আমরা নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন কমিশন আইন চেয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠনে যে আইনটি হয়েছে, তা হচ্ছে নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস। দেশের মানুষ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬টি থানা কমিটি ঘোষণা ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় জি এম কাদের আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে— আওয়ামী লীগের কর্মীরাই এখন আর নৌকায় ভোট দিতে চায় না। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনায় থেকে অনেক জনসমর্থন হারিয়েছে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর বৈষম্য দেশের মানুষের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি দেশের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের নাম এখন মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়ার পাশে। আবার অনেক জনসমর্থন থাকা স্বত্ত্বেও বিএনপি এখন ক্ষয়িষ্ণু দলে পরিণত হয়েছে। গণমানুষের কল্যাণে বিএনপির বক্তব্য পরিষ্কার নয়। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি আর অপরাজনীতি আরও বেড়ে যাবে। এই দুটি দল একানব্বই সালের পর থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রকে ধংস করেছে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশের মানুষ বুঝেছে— আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দিয়ে মুক্তি মিলবে না। দেশের মানুষ এই দু’টি দলের বিপরীতে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়। এ কারণে নির্বাচনের আগেই দলকে আরও শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দেন তিনি।
দেশে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, কিছু মানুষ এত ধনী হচ্ছে যে দেশে টাকা রাখার জায়গা তাদের নেই। তারা বস্তা ভরে টাকা বিদেশে পাচার করছে। অন্যদিকে দেশের বেকার তরুণরা সাগরে ডুবে মরছে। দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই, ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। সড়কে বের হলে দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে, যার কোনো প্রতিকার নেই।
এসময় জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা আর কারও জোটে পা দেবো না। আমরা এককভাবেই তিনশ আসনে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। দু’টি দলকে দেশের মানুষ আর চায় না। দেশের মানুষ বিকল্প হিসেবে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়।
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নির্বাচনের জন্য কোনো সমাধান নয়। নির্বাচনের জন্য ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করলে তবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। ক্ষমতাহীন কমিশন দিয়ে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।
ঢাকা মহানগর উত্তর প্রতিনিধি সভায় সভাপত্বি করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু। সভা পরিচালনা করেন জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এবং কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান।
সভাও আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ ও অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া; উপদেষ্টা শেরীফা কাদের, আমানত হোসেন আমানত ও মুজিবুর রহমান লিপটন; ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক ও সুলতান আহমেদ সেলিমসহ জাতীয় পার্টি এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর