পাল্টেছে পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান, বেড়েছে রাজস্ব
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৫২
ময়মনসিংহ: ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন অপেক্ষা করে নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যেত না পাসপোর্ট। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়েও সঠিক সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে গ্রাহকদের অসুবিধার অন্ত ছিল না। সুবিধাভোগী শ্রেণি ও অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে গ্রাহকদের হয়রানি বেড়েই চলছিল। তবে মো. হাফিজুর রহমান ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর পাল্টে গেছে চিত্র। জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম রোধে কঠোরভাবে দমন করেন তিনি। এতে করে বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি কমায় স্বস্তি ফিরে জনমনে।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সুত্রে জানা গেছে, বর্তমান উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান গত বছরের ১৪ অক্টোবর যোগদান করার পর পরই আবেদনকারীদের সমস্যা লাঘবে গ্রাহকদের মাত্রাতিরিক্ত অসন্তোষের বিষয় জানতে পেরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ ও গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনি। জনদুর্ভোগ লাঘব এবং রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠানটিকে একটি সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কঠোর নির্দেশ দেন। তার কঠোর নির্দেশে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নড়েচড়ে বসেন।
পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক আবেদনকারী জানান, অনলাইনে ফরম পূরণ করে সঠিক সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন। তাদের মতে, পাসপোর্ট করতে অনেক সময় ও সরকার নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অধিক অর্থ গুনতে হয়। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করে অল্প সময়ে তারা পাসপোর্ট পেয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই অবাক হয়ে জানান, এই অফিসের কর্মকর্তাদের আচরণ এবং সেবার মান অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেও স্বচ্ছতা ফিরেছে।
তারা আরও জানান, বর্তমান উপ-পরিচালকের আমলে অনেক সুবিধা হয়েছে। পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা বা কোনো কিছু জানতে চাইলে অফিসের উপ-পরিচালকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায়। সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক উপ-পরিচালক নিজে উঠে টেবিলে টেবিলে ঘুরে সমাধান করে দিচ্ছেন।
ফুলপুরের ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের সিঙ্গাপুরে কাজ পাওয়া ছেলে সোলায়মান জানান, ১৫ দিন আগে পাসপোর্ট আবেদন করেছেন। অনলাইনে ফরম পূরণ করে সঠিক সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন তিনি।
পাসপোর্ট করতে নির্ধারিত ফি এর বেশি টাকা ও লোক ধরতে হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সেদিন এখন আর নেই। সমস্যা হলে সোজা বড় কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায়। আর কি চান। আর কোনো দালাল লাগে না।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করে পাসপোর্ট অফিসে যাই। সেখানে গেলে অফিস প্রধান পরিচয় জানতে পেরে নিজে এসে আমাকে সঙ্গে নিয়ে আবেদন জমাদানের বিভিন্ন কক্ষে যান এবং মুহূর্তে কাজ শেষ করেন। এতে আমি আন্তরিকভাবে খুশি।
বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার তাগিদে আসা ভালুকার সাইফুল ইসলাম বর্তমান পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, লিভারের রোগে ভারতে উন্নত চিকিৎসায় যাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফি দিয়ে আমি অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করি। এর আগেই জানতে পারি বর্তমান অফিস প্রধান জনগণের জন্য আন্তরিক। আমি তার কাছে গেলে মাত্র অল্প সময়ে তিনি নির্দিষ্ট লোক দিয়ে আমার কাজ সমাধান করে দেন। পরবর্তীতে আমি সঠিক সময়ে আমি পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি যোগদানের পর জানতে পারি বিগত সময়ের অসংখ্য পাসপোর্ট আবেদন অপেক্ষমান অবস্থায় পড়ে আছে। এ সব অপেক্ষমান আবেদনকারীদের ৭০ শতাংশ আবেদনকারীদের সমস্যা ইতোমধ্যেই সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। অন্যদের সমস্যা অতি অল্প সময়ে সমাধান করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন জনগণকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে। সেই লক্ষেই আমারা কাজ করে যাচ্ছি। করোনা মহামারিতেও আমরা থেমে নেই। মানুষের দুর্ভোগে দ্রুততার সঙ্গে কাজ যাচ্ছি। চাহিদার বিবেচনায় বিভাগীয় জেলা ময়মনসিংহে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পাসপোর্ট অধিদফতর। পাসপোর্ট আবেদনকারীদের মধ্যে জটিল রোগীদের জন্য ঘরে বসেই পাসপোর্ট প্রাপ্তির সুবিধা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বর্তমান সরকার উন্নত প্রযুক্তির অত্যাধুনিক মেশিন ময়মনসিংহ অফিসে দিয়েছেন। আবেদনকারীদের যে কোনো সমস্যা হলে তারা সরাসরি আমার সঙ্গে দেখা করলে আমি যথাসম্ভব দ্রুত সমাধান করে দেব।’
ময়মনসিংহ পাসপোর্ট অফিস সুত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পাসপোর্ট অফিস হতে সরকারের আয় অনেক বেড়েছে। গত বছরের ১৪ অক্টোবর থেকে শুরু করে পাঁচ মাসে ২৮ হাজার ৬১২ আবেদনকারী বিপরীতে প্রায় ১৪ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত আবেদনের বিপরীতে কোনো ধরনের সমস্যা ও হয়রানি ছাড়াই আবেদনকারীরা নিজ নিজ পাসপোর্ট পাচ্ছেন তা এখন লক্ষণীয়।
সারাবাংলা/এনএস