Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বয়স ১২ হলে নিবন্ধন ছাড়াও মিলবে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:১৭

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগের কার্যক্রম শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। ১২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের যারা এখনো ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেয়নি তারা এদিন কেন্দ্রে গেলেই ভ্যাকসিন নিতে পারবে। এজন্য কোনো নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে।

অর্থাৎ জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে সুরক্ষা প্লাটফর্মে যারা এখনো নিবন্ধন করেনি তারা কেন্দ্রে গেলেই পাবে প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকেই তাদের তথ্য আপডেট করে নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিচালক ডা. মো. শামসুল হক।

তিনি বলেন, ‘আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। যাদের জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট নেই তারা ২৬ ফেব্রুয়ারির আগে সরাসরি হাসপাতাল ও সুবিধা অনুযায়ী নিকটস্থ কেন্দ্রে গিয়ে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে তাদের তথ্য নথিভুক্ত করে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এমন ব্যক্তিদের একটি কার্ড দেওয়া হবে। এই কার্ডই ভ্যাকসিনের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৬ ফেব্রুয়ারি আমরা বড় আকারে একটি ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন কর্মসূচি পরিচালনা করব। ওইদিন যদি এক কোটিরও অধিক মানুষ প্রথম ডোজ নিতে আসে, সেটিও আমরা দেব।’

ডা. শামসুল বলেন, ‘২৬ ফেব্রুয়ারি ভ্যাকসিন পেতে কোনোরকম নিবন্ধন লাগবে না। জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র কিছুই লাগবে না। যাদের আছে তারা প্রয়োজনে নিবন্ধন করে আসতে পারেন। পাশাপাশি নিয়মিত ভ্যাকসিন কেন্দ্রগুলোতে কার্যক্রম চলবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘লক্ষ্যপূরণের জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে। আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমাদের ভ্যাকসিনের মজুদ আছে পর্যাপ্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ডোজের ভ্যাকসিনকে একটা ধারায় আনতে ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ করা হবে। এর পর প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন কার্যক্রম আমরা বন্ধ রাখব। তখন দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজের কার্যক্রম চালু থাকবে। কারণ দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজও একটি বড় টার্গেট, এটিও আমাদের পূরণ করতে হবে।’

ডা. শামসুল বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং বারবার হাত ধুতে হবে। এতে নিজেও সুরক্ষিত থাকবেন, দেশকেও সুরক্ষিত রাখবেন।’

এদিন ভার্চুয়াল হেলথ বুলেটিনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘খুব ধীরে ধীরে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা কমে আসছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও কমছে। ৯ ফেব্রুয়ারি ছিল ১৮ শতাংশের বেশি, সেটি ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ১৪ শতাংশের নিচে নেমেছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী মাসের শুরুতে সংক্রমণ আরও কমে আসবে।’

এক নজরে দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম

দেশে ২৭ জানুয়ারি প্রথম করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। একই দিন ভ্যাকসিনের নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) সীমিত আকারে উন্মুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অফিসিয়ালি এই ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন শুরু করা হয়।

কর্মসূচি উদ্বোধনের একদিন পর অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রাথমিকভাবে ৫৪১ জনকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়।

এদিন জানানো হয় ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা শুরু হবে জাতীয় পর্যায়ে। ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে সারা দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। বিভিন্ন জেলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এর পরপরই বিভিন্ন জেলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়।

পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল থেকে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু হয়। ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ২৬ এপ্রিল থেকে দেশে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএনসিঅ্যান্ডএইচ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ২৩ এপ্রিল থেকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের জন্য এসএমএস পাঠানো হচ্ছে না। ২৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে। তবে এটি চালু কবে হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতার ওপরে নির্ভর করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দেশে ১৯ জুন থেকে শুরু হতে হয় চীন থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া সিনোফার্মের প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। রাজধানীর চারটি মেডিকেল কলেজসহ দেশের অন্যান্য ৬৩ জেলায় এক যোগে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করে সরকার। চীন সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া এই ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ১০টি ক্যাটাগরিতে পাঁচ লাখ মানুষকে টার্গেট করা হয়।

পরবর্তীতে ২১ জুন রাজধানীর তিনটি কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণমূলকভাবে প্রয়োগ করা হয় ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন। ১ জুলাই থেকে দেশে প্রবাসীদের পর্যবেক্ষণমূলকভাবে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। ৫ জুলাই থেকে তাদের নিবন্ধন শুরু করা হয়। ১৩ জুলাই থেকে দেশে মডার্নার ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয় দেশের ১২ সিটি করপোরেশনে। ৫ জুলাই ফের সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের জন্য।

তবে শুরুতে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য ন্যূনতম বয়সসীমা ৪০ করা হলেও এদিন বয়সসীমা কমিয়ে ৩৫ আনা হয়। পরবর্তীতে ১৯ জুলাই সেই বয়সসীমা ৩০-এ নামিয়ে আনা হয়। ৩০ জুলাই এই বয়সসীমা আরও কমিয়ে ২৫-এ নিয়ে আসা হয়। ১৮ জুলাই থেকে দেশে বিভিন্ন কল-কারখানার শ্রমিকদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়। এই কর্মসূচিতে জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্মনিবন্ধন না থাকলেও ভ্যাকসিন প্রয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

৮ আগস্ট থেকে ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের নাগরিকরা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করতে পারবেন বলে জানানো হয়। আর যারা এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি, তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে ভ্যাকসিন নিতে পারবে বলেও জানানো হয়। একই দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিইআই) থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার নির্দেশনার বিষয়ে জানানো হয়। ১৯ আগস্ট দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগের বয়সসীমা ১৮ বছর করা হয়।

গণটিকা কার্যক্রম

৭ আগস্ট দেশে প্রথমবারের মতো গণটিকাদান কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার। ওই কর্মসূচির আওতায় ছয় দিনে দেশে ৫০ লাখ ৭১ হাজার মানুষ প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে ৭ সেপ্টেম্বর এ কর্মসূচিতে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেবল ঢাকায় এ কর্মসূচি চালানো হয়। ঢাকার বাইরে চলে আরও তিন দিন, ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

পরবর্তী সময়ে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতর বিশেষ গণটিকাদান কর্মসূচি ঘোষণা করে। দেশব্যাপী পরিচালিত গণটিকা কার্যক্রমের আওতায় দুই দিনে ৮২ লাখেরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন পায় ৭৮ লাখ ১১ হাজার ২১৬ জন। ১৬ নভেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়।

এরপর ৩০ নভেম্বর দেশে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানানো হয়। পরে ১৯ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে ৬০ জনকে করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। এরপর ২৮ ডিসেম্বর থেকে জনসাধারণ পর্যায়ে এই ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ প্রয়োগ শুরু হয়।

শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ

১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জে পরীক্ষামূলকভাবে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ১ নভেম্বর রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। প্রথমদিন প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয় দিন থেকে অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে রাজধানীর ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়।

ভ্যাকসিন প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রায় পরিবর্তন

মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। অর্থাৎ ১১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে এই সময়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে অর্থাৎ ১১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। সর্বশেষ, ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ১২ বছরের বেশি বয়সী যে কারও জন্যই কেন্দ্রে নিবন্ধন ছাড়াই ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন না থাকলেও শুধু নাম, বয়স ও মোবাইল নম্বর দিয়ে এই বয়সীরা ভ্যাকসিন নিতে পারবে।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

টপ নিউজ প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর