প্রেমিকার বিয়ে ঠেকাতেই হবু বরকে হত্যা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:১২
ঢাকা: গত বছরের ১২ আগস্ট ঢাকার ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের কাঁঠালবাগান থেকে শাহাদাত নামে এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে তিন হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতার তিন জন হলো- জাহিদুল ইসলাম জাহিদ (২২), সবুজ হোসেম (২৮) ও আবু তাহের (২৪)। র্যাবের দাবি, মূলত প্রেমিকার বিয়ে ঠেকাতেই জাহিদ তার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে হবু বর শাহাদাতকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের ১ আগস্ট ঢাকার ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের শাহাদাত কালিয়াকৈরে তার কর্মস্থলে যায়। এর পর ৪ আগস্ট থেকে বাড়ির সাথে সে কোনো যোগাযোগ করেনি। ৬ আগস্ট থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ৮ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তার পরিবার। এরপর ১২ আগস্ট ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের একটি কাঁঠাল বাগান থেকে নিখোঁজ শাহাদাতের অর্ধগলিত ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরে ওই ঘটনায় ঢাকার ধামরাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পরবর্তী সময়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ভিকটিম শাহাদাতের মা বাদী হয়ে ধামরাই থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধামরাই থানা পুলিশ গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শাহাদাতের বন্ধু জাহিদকে গ্রেফতার করে। জাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দেওয়ায় রিমান্ড শেষে তাকে জেল হাজতে পাঠায় আদালত। এরপর জাহিদ জামিনে জেল থেকে বের হয়।
ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু র্যাব। অবশেষে মূল হত্যাকারী জাহিদ ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার তিন জন হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
জানা যায়, ভিকটিম শাহাদাত ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের ছেলে। ভিকটিম কালিয়াকৈর উপজেলার বারইপাড়ায় একটি প্রতিষ্ঠিত কারখানার কর্মচারী ছিলেন। গত বছরের ১৪ আগস্ট গ্রেফতারকৃত জাহিদের প্রেমিকার সঙ্গে শাহাদাতের বিবাহের দিন ধার্য ছিল। নিজের প্রেমিকার অন্যত্র বিবাহ জাহিদ মেনে নিতে না পারার জের ধরে জাহিদ তার গ্রেফতারকৃত অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে শাহাদাতকে হত্যার নকশা আঁকে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ভিকটিম ও গ্রেফতারকৃত আসামিদের সবাই ধামরাই থানার মাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এবং তাদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এ সর্ম্পকের কারণে তাদের মধ্যে সচারচর সাক্ষাৎ হতো এবং তারা একত্রিত হয়ে ভাড়া বাসা ও নিজ এলাকায় জুয়ার আসর বসাতো। গত বছরের ৩ আগস্ট শাহাদাতকে চন্দ্রা থেকে গাজীপুর জেলার কাশিমপুরের কাছে মাটির মসজিদ এলাকায় ডেকে নিয়ে আসা হয়। আসার এক পর্যায়ে আসামিরা তাকে ফুসলিয়ে জুয়া খেলতে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে ভুক্তভোগীকে ফুসলিয়ে ২ দিন অবস্থান করায়।
এরপর ৬ আগস্ট সন্ধ্যার সময় সবাই মিলে ভুক্তভোগীকে নিয়ে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় আসে। সেখান থেকে আশুলিয়া থানাধীন একটি ফাঁকা নির্জন এলাকায় নিয়ে শাহাদাতের হাত পা বেঁধে ফেলে। প্রথমে জাহিদ ভুক্তভোগীকে চর-থাপ্পর মারে এবং গোপনাঙ্গে ৪/৫টি লাথি মারে। এ সময় তাহের ভুক্তভোগীর মাথা চেপে ধরে বসে ছিল এবং অন্যরা হাত পা ধরে ছিল। পরবর্তী সময়ে তাদের সঙ্গে থাকা লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত করে। তারপর গ্রেফতারকৃতরা শাহাদাতের লাশ ভ্যানচালক সবুজের ভ্যানযোগে ধামরাই থানাধীন আমরাইল পুকুরিয়া সাকিনস্থ মনুমিয়ার কাঠবাগানের কাছে নিয়ে যায়। পরে গাছের একটি ডালে কাঁচা পাট দিয়ে ফাঁস তৈরি করে ঝুলিয়ে রাখে, যাতে এলাকার লোকজন জানতে পারে এটি একটি স্বাভাবিক আত্মহত্যা। এর পর তারা দ্রুত সেখান তাদের আগের ভাড়া বাসা চক্রবর্তীর মাটির মসজিদ এলাকায় চলে যায়।
উল্লেখ্য যে, ওই সময় প্রবল বর্ষণের কারণে আশেপাশে লোকজনের উপস্থিতি খুব কম ছিল বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়। ঘটনার পর তারা নিজ নিজ এলাকায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে। পরবর্তী সময়ে র্যাব-৪ এর ছায়া তদন্তে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস শাহাদাৎ হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং পরিকল্পনাকারীসহ জড়িতদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম