হুমকির মুখে ভোলার শত কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৩৫
ভোলা: দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় হুমকির মুখে পড়েছে শত কোটি টাকার ভোলা শহর রক্ষা বাঁধ। বাঁধের বিভিন্ন অংশে ব্লক ধসে গিয়ে মাটি বের হয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার না করা হলে জোয়ারের পানি প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে ভোলা শহরে। তাই দ্রুত বাঁধ সংঙ্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার মেঘনার হার্ড পয়েন্টে প্রায় ৯ থেকে ১০ স্থানে ব্লক বাঁধের ধ্বংস সৃষ্টি হয়েছে। তবে ওই ভাঙন অংশে প্রায় তিন বছর আগে জরুরি বরাদ্দের আওলতায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। বর্তমানে ওই জিও ব্যাগ নষ্ট হয়ে বালু বের হয়েছে। ফলে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে ওই এলাকাসহ আশপাশের বাসিন্দাদের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক দেখা গিয়েছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া, ধনিয়া, শিবপুর ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের সোনাডুগি পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ভোলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধরা হয়। ভাঙন ঠেকাতে এই বাঁধের পাশে দুই দফায় তুলাতুলি মুন্সিবাড়ি থেকে উত্তরে বালিয়াকান্দি দফাদারবাড়ি পর্যন্ত ৩৪ মিটারের প্রস্থের ৩ হাজার ৩০০ মিটার ব্লকবাঁধ নির্মাণ করা হয়।
দ্বিতীয় ধাপের এক হাজার ৩০০ মিটার ব্লকবাঁধ ২০১১-১২ সালে মেঘনার ভাঙনের তীব্রতায় ও সংস্কারের অভাবে বিলীন হয়ে যায়। পাউবো তৃতীয় ধাপে (২০০৮-২০১১ সালে) ধনিয়া ইউনিয়নের কোড়ারহাট পণ্ডিতবাড়ি থেকে বলরাম সুরা নুর মোহাম্মদের বাড়ি পর্যন্ত মেঘনা তীরে ব্লক ফেলে। চতুর্থ ধাপে কাচিয়ার সঙ্গে বিলীন হওয়া অংশে ব্লকবাঁধ নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন ধাপে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যায় করে প্রকল্পেটি করা হয়েছিল।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে এ শহর রক্ষা বাঁধের ২৫০ মিটার জায়গা সংস্কারের জন্য অধিদফতরে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠালে বরাদ্দ হয় ৪৯ লাখ টাকা। ওই সময় ৯ হাজার ৭২টি বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়।
তুলাতুলী এলাকার মনির জমাদ্দার, আব্দুল খালেক ও নুরুল ইসলামসহ একাধিক বাসিন্দা জানান, দুই যুগেরও বেশি সময় টেকসই ব্লক বাঁধের কারণে এলাকার ভাঙন বন্ধ হয়ে গেয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা। দ্রুত সংঙ্কার বা স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা না হলে তুলাতুলি বাজারসহ ভোলার শহর হুমকির মুখে পড়বে।
ধনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম গোলদার জানান, প্রায় তিন বছর আগে বাঁধটি সংঙ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে জিও ব্যাগ নষ্ট হয়ে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই দ্রুত স্থানীয়ভাবে বাঁধ নির্মাণ না হলে মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও রক্ষা করা যাবে না।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, ভোলা শহর রক্ষা প্রকল্পের ধনিয়ার তুলাতুলি এলাকায় এক কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ নদী তীর সংরক্ষণসহ মোট পাঁচ কিলোমিটারের একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমের আগে প্রকল্পটির আনুমোদন না হলে, আমরা তুলিতুলির ঝুঁকিপূর্ণ অংশে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে এই অংশটি রক্ষার চেষ্টা করবো।’
সারাবাংলা/এমও