ইসি’র ভুলে ছেলের থেকে কমবয়সী বাবা, বন্ধ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:৪১
কুড়িগ্রাম: ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় জাতীয় পরিচয়পত্রে ছেলের থেকে মুক্তিযোদ্ধা বাবার বয়স কম হওয়ায় প্রায় দু’বছর ধরে বন্ধ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা। পরিবারের সদস্যদের দাবি, জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও সুরাহা না পেয়ে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন ৯৪ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী।
জানা যায়, উপজেলার চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুলার কুটি গ্রামের মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী। প্রায় ৪৩ বছর বয়সে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে যুদ্ধের আগেই তিন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকার ১৭নং বই ৪০১৪৭ ক্রমিক, লাল মুক্তিবার্তায়-৩১৬০৪০৫২০ ক্রমিক এবং ২০০৫ সালের ২১ মে বেসামরিক গেজেট ৩৭৯১ পৃষ্ঠায় গেজেট ১০৬৪ নম্বরে আকবর আলীর নাম রয়েছে। তিনি ২০০৮ সালের ১ অক্টোবর হতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। তবে ২০২০ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য অনলাইনে পূরণ করতে গিয়ে তিনি জন্ম তারিখের ত্রুটির কারণে ভাতা পাওয়া থেকে বিরত হন।
জন্ম সনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৯২৮ সালের ১১ আগস্ট, কিন্তু ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয় পত্রে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৯৭১ সালের ১০ মে। অথচ তার বড় ছেলে আমির হোসেনকে তার থেকে বড় দেখানো হয়। অর্থাৎ বাবার থেকে ছেলে বড়। জাতীয় পরিচয় পত্রে বড় ছেলে আমির হোসেনের বয়স দেখানো হয় ১৯৬০ সালের ২ মার্চ। জাতীয় পরিচয় পত্রের এমন ত্রুটির কারণে প্রায় দু’বছর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ রয়েছে।
জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন বিভাগে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি আকবর আলীর সন্তানদের। জন্ম তারিখ সংশোধন হওয়ার আগেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী গত ৪ ফ্রেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী বলেন, ‘আকবর আলী ও লস্কর আলী আমরা জেঠাতো ভাই। আমরা তিন জনই যুদ্ধ করেছি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ ভোটার আইডির সমস্যা হওয়ায় আকবর আলীর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আকবর আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেওয়া বলেন, ‘ভাতা বন্ধ হওয়ার পর থেকে উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসাও ঠিকমত করতে পারলাম না। অসুস্থতার কারণে উনি মরেই গেলেন। আমরা অফিস-আদালতে অনেক ঘুরেছি, কেউ বিষয়টির সুরাহা করে দেয়নি।’
বড় ছেলে আমির হোসেন বলেন, ‘জাতীয় পরিচয় পত্র করার সময় বাবার বয়স দিয়েছে ১৯৭১ সাল। আমাদের ভাই-বোনদের অনেকের বয়স তুলে দিছে ১৯৫০, ১৯৬০ এমন অনেক সমস্যা করছে। এই জন্ম তারিখ ঠিক করার জন্য যেখানেই গেছি সেখানেই খালি ট্যাহা-ট্যাহা করে। তাও আমগো বাবার জন্ম তারিখ ঠিক হয়নি। আমরা ব্যর্থ হয়া গেছি।’
নাতি রঞ্জু বলেন, ‘২০০৮ সালে আমার দাদা-দাদী এনআইডি করতে যায়। সেখানে তাদের বয়স ভুল তোলা হয়েছে। দাদার বয়স ঠিক করতে আমরা ঢাকায়ও গেছি। সেখানেও বলা হয় আমরা পারবো না, এটা রংপুর থেকে ঠিক করবে। রংপুরে গেছি, সেখানে আমাদের কথায় শোনা হয়নি। বহু টাকা পয়সা খরচ করেও কোনো লাভ হয়নি, দাদা মারাই গেল। তবু ভাতা চালু হয়নি আজও। এখন অন্যের ভুলের খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে।’
সাবেক ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মরহুম আকবর আলী প্রকৃত একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার বয়স ঠিক করার জন্য আমরা বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেন হইল না তার সঠিক কারণ আমরা জানি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি সঠিক তদন্ত করে মৃত আকবর আলীর ভাতা পুনরায় চালু করে দিতে যেন ব্যবস্থা তিনি নেন।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদনটি বিবেচনা করে ‘গ’ ক্যাটাগরি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই আবেদন নিষ্পত্তি করার জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা করা হয়েছে।’
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে মাত্র এলো। আমি যত দ্রুত সম্ভব সমস্যাটি সমাধান করার চেষ্টা করব।’
সারাবাংলা/এমও
আকবর আলী ইসি’র ভুল জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা