সুরভীর যাত্রীরা ফিরলেন কীর্তনখোলায়, নিখোঁজ শ্রমিকের হদিস মেলেনি
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:৫১
বরিশাল: ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর সংযোগস্থল অতিক্রমের সময় বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সুরভী-৭ লঞ্চের যাত্রীরা নিরাপদে বরিশালে পৌঁছেছেন। কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে করে বরিশাল নদী বন্দরে ফেরেন তারা। দুর্ঘটনা কবলিত সুরভী-৭ লঞ্চটি বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের থ্রি অ্যাংগেল শিপ ইয়ার্ডে মেরামতের জন্য নেওয়া হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পর সুরভী লঞ্চ থেকে নিখোঁজ শ্রমিকের সন্ধান এখনো মেলেনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ বরিশালের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, সুরভী-৭ লঞ্চের যাত্রীদের এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে করে বরিশাল নেওয়া হয়েছে। সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে তারা নিরাপদে নদী বন্দরে পৌঁছেছেন।
এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের মাস্টার হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, ঢাকার সদরঘাট থেকে বুধবার রাত ৯টার দিকে ৫৩৯ জন যাত্রী নিয়ে তাদের লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশে রওনা দেয়। রাত ১১টার দিকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া সংলগ্ন ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর সংযোগস্থল অতিক্রমের সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাল্কহেড সুরভী লঞ্চকে ধাক্কা দেয়। বাল্কহেডটিতে কোনো ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন বা বাতি ছিল না। ফলে সেটি রাতে দূর থেকে দেখাও যায়নি। ওই বাল্কহেডটি অন্য একটি বাল্কহেডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চালছিল এবং হঠাৎ করে বাল্কহেডটি নৌপথে চলাচলের নির্ধারিত পাশ থেকে বিপরীত পাশ দিয়ে চলছিল।
তিনি আরও জানান, সংঘর্ষে লঞ্চের যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পানির উপরিভাগে থাকায় বড় ধরনের কোনো ঝুঁকি ছিল না। তারপরও যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চ ঘটনাস্থলে এনে যাত্রীদের সেটিতে উঠিয়ে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে বরিশালের উদ্দেশে পাঠানো হয়।
লঞ্চের মাস্টার হুমায়ুন কবির বলেন, বাল্কহেডের ধাক্কায় আমাদের লঞ্চের সামনের পানির ওপরের অংশ ফেটে যায় এবং ধাক্কার লাগার পরপরই বাল্কহেডটি ডুবে যায়। এ সময় আমরা লঞ্চ থেকে নদীতে বয়া ফেলে বাল্কহেডের আরোহীদের সহায়তাও করি।
তিনি আরও বলেন, রাতে নৌপথের নিরাপত্তার স্বার্থে বাল্কহেড চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও নিয়মিত বাল্কহেড চলাচল করছে। এ ঘটনার সময় কাছাকাছি এমভি পারাবত-১৮ ও মানামী নামে দু’টি লঞ্চ ছিল, যেগুলোও দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারতে। এ ঘটনায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ মেরিন আদালতে মামলা দায়ের করবে।
এদিকে, বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছানো যাত্রীরা জানান, বাল্কহেডটির কোনো সাংকেতিক বাতি ছিল না। দ্রুত গতিতে চলা সুরভী-৭-এর সঙ্গে প্রথমে বাল্কহেডটির সংঘর্ষ হয়। বিষয়টি খেয়াল না করে মানামী লঞ্চ সুরভী লঞ্চকে ওভারটেক করতে গিয়ে মানামী লঞ্চের সঙ্গেও বাল্কহেডটির ধাক্কা লাগার উপক্রম হয়। মানামী লঞ্চের পাশে আরও একটি বাল্কহেড ছিল, সেটিও অল্পের রক্ষা পেয়েছে। দুইটি বাল্কহেডের মাঝখান দিয়ে দ্রুতগতিতে মানামী লঞ্চ বের হয়ে গেছে। আর সুরভী লঞ্চের পেছনে ছিল পারাবত-১৮ লঞ্চ। অল্পের জন্য সুরভী লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লাগেনি পারাবত লঞ্চের। মূলত মানামী, সুরভী ও পারাবত লঞ্চ নদীতে প্রতিযোগিতা করে চলছিল। পুরো দোষ বাল্কহেডের থাকলেও এমনভাবে লঞ্চ চালানো উচিত নয়।
যাত্রীরা আরও জানান, ধাক্কা লাগার পর সুরভী-৭ লঞ্চটি কিছুক্ষণ থামিয়ে রেখে আবার চালু করা হলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। পরে পুনরায় নদীর তীরে লঞ্চটি নোঙর করা হয়। এরপর সেখানে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা আসেন।
সুরভী-৭ লঞ্চের মালিক রিয়াজুল কবির জানান, অবৈধভাবে রাতে বাল্কহেড চালিয়ে লঞ্চকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। এতে লঞ্চের সামনের দিকের ওপরের অংশ ফেটে গেছে।
কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মো. জহিরুল হক বলেন, বালুবাহী বাল্কহেডটি ঢাকার ডেমরার দিকে যাচ্ছিল। লঞ্চের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এটি ছয় জন শ্রমিক নিয়ে ডুবে যায়। পাঁচ শ্রমিককে জীবিত পাওয়া গেলেও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা নিখোঁজ শ্রমিককে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সারাবাংলা/টিআর