Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জনশক্তি রফতানি, জানুয়ারিতে গেল লাখের বেশি কর্মী

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:৫৫

ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের জনশক্তি রফতানি খাত। বছরের শুরুতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ জন কর্মী। গত বছরের একই সময়ে কাজের জন্য দেশের বাইরে যেতে পেরেছিলেন মাত্র ৩৫ হাজার ৭৩২ জন।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ায় অনেক দেশই নতুন করে করে বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। এ কারণেই বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে, সুযোগ হচ্ছে আরও বেশি কর্মসংস্থানের।

বিজ্ঞাপন

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম মাসে অর্থাৎ গেল জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ জন কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন সবচেয়ে বেশি ৭১ হাজার ১৭২ জন। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন ১২ হাজার ৮৮৫ জন, কুয়েতে গেছেন ৭২১ জন, ওমান গেছেন ১৪ হাজার ৫১৫ জন, কাতারে গেছেন ১ হাজার ৪৩১ জন, জর্ডানে গেছেন ১ হাজার ৪৭৮ জন এবং সিঙ্গাপুরে গেছেন ৩ হাজার ৮৪১ জন।

এর বাইরেও বাহারাইনে এক জন, লেবাননে ২১ জন, লিবিয়ায় দুই জন, মালয়েশিয়ায় ১৩ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২৯ জন, লন্ডন ১৪ জন, ইতালিতে ১০২ জন ও মরিশাসে ৩১০ জন বাংলাদেশি এই মাসে গেছেন। অন্যান্য দেশে গেছেন আরও ৮২৭ জন।

এদিকে, জানুয়ারি মাসে বিদেশে যাওয়া লক্ষাধিক কর্মীর মধ্যে নারী ১০ হাজার ২৯০ জন। সার্বিক হিসাবের মতোই নারী কর্মীদের মধ্যেও সর্বোচ্চসংখ্যকের গন্তব্য সৌদি আরব। দেশটিতে এই মাসে ৬ হাজার ৪৯৯ জন নারী কাজ নিয়ে গেছেন। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪৩ জন, কুয়েতে চার জন, ওমানে ১ হাজার ৯৬০ জন, কাতারে ১৮০ জন ও জর্ডানে ১ হাজার ৪৩৮ জন নারী কাজ নিয়ে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া মালয়েশিয়ায় চার জন, সিঙ্গাপুরে সাত জন, লেবাননে ১৬ জন, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে এক জন করে, মরিশাসে দুই জন এবং অন্যান্য দেশে আরও ৩৫ জন নারী গেছেন কাজ নিয়ে।

বিএমইটি’র তথ্য বলছে, আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে কাজ নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন ৪ হাজার ৬৬৯ জন নারী কর্মী। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারি নারী কর্মীদের বিদেশযাত্রার পরিমাণও বেড়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়াও খুলতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে কর্মী পাঠাতে কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী মাস অর্থাৎ মার্চ থেকেই দেশটিতে কর্মী পাঠানো শুরু করা যাবে। যদিও মালয়েশিয়াকে কেন্দ্র করে অবৈধ লেনদেন না করতে কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি দেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশ ছাড়া এই প্রক্রিয়ায় তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।

জানতে চাইলে বিএমইটি’র মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, এখনো ওভাবে কাজ শুরু করা হয়নি। কর্মী পাঠাতে কত টাকা খরচ হবে, কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ হবে, কবে থেকে পাঠানো যাবে— এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

তবে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিএমইটি’র মহাপরিচালক। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, শ্রমবাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কর্মীরা দক্ষ হচ্ছে, বাজারে চাহিদা বাড়ছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হলে জনশক্তি রফতানির গতি এবং প্রবাসী আয়ও বাড়বে বলেই আশাবাদ জানান তিনি।

করোনা মহামারি কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বলেই শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ছে বলে মনে করছেন জনশক্তি রফতানিকারকরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিও মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সে অবস্থাতেও প্রবাসী আয় তথা রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। গত বছরের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে শ্রমিকদের দেশের বাইরে যাওযার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী আয়ের এই গতিও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন তারা।

বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, গত দুই বছরের পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে অনেক দেশ। যেসব দেশ থেকে কর্মীরা লাইন ধরে ফিরে আসছিল, সেসব দেশও এখন কর্মীদের চাহিদা পাঠাচ্ছে। এটা ভালো খবর যে আমাদের কর্মীরা অনেক সুযোগ পাচ্ছে। এই গতি ধরে রাখতে হবে।

১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। ওই বছর বিশ্বের সাত দেশে মোট ৬ হাজার ৮৭ জন কর্মী পাঠানোর মধ্য দিয়ে জনশক্তি রফতানি শুরু করে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ। ওই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৯৮৯ জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে নেয়। ওই সময় কাতারে গিয়েছিল ১ হাজার ২২১ জন কর্মী। এছাড়া কুয়েতে ৬৪৩ জন, বাহারাইনে ৩৩৫ জন, সৌদি আরবে ২১৭ জন, ওমান ১১৩ জন, লিবিয়াতে ১৭৩ জন এবং অন্যান্য দেশে ১ হাজার ৩৯৬ জন কর্মী যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।

জানা গেছে, ওই বছর মাত্র ৩৫ কোটি টাকা প্রবাসী আয় এসেছিল। তবে সেই শুরুর পর থেকে আর থেমে থাকেনি বাংলাদেশ। মাঝে মাঝে কিছু চড়াই-উৎরাই পার হতে হলেও প্রবাসী আয় তথা রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির অন্যতম এক চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বরঙ গত দুই বছরেই বিদেশে কর্মী পাঠানোর পরিমাণ ছিল সবচেয়ে কম। তারপরও প্রবাসী আয়ের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত ছিল। সেই সংকটকাল কাটিয়ে চলতি বছরের শুরুতেই ব্যাপকসংখ্যক কর্মী দেশের বাইরে পাঠানোর মাধ্যমে খাত সংশ্লিষ্টরা আশার আলো দেখছেন।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

জনশক্তি রফতানি বিএমইটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর