বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে শিক্ষাবৃত্তির আবেদন করেছে তামান্না
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:২৫
যশোর: সম্বল ছিল মাত্র একটি পা। চরম শারীরিক এমন প্রতিবন্ধকতাকেও অদম্য আগ্রহ আর ইচ্ছা দিয়ে জয় করে নিয়েছে যশোরের মেয়ে তামান্না আক্তার নূরা। সেই একটি পা’কে সম্বল করেই এইচএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে তাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পরামর্শেই বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন করেছে তামান্না।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে তামান্না আক্তার নূরার বাসা থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে শিক্ষাবৃত্তির এই আবেদনটি সংগ্রহ করেন ঝিকরগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডা. কাজী নাজিব হাসান। আবেদনপত্রটি তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছে দেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, আবেদনপত্রটি আগামী শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) যশোর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন- তামান্নাকে ফোন করে অভিনন্দন জানালেন প্রধানমন্ত্রী
তামান্না নূরা বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দু’টি স্বপ্নের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখেছিলাম। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বোন শেখ রেহানাও ফোন করেছিলেন। তারা দু’জনেই আমার স্বপ্নপূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রীই আমাকে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টে আবেদনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী আমি বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টে শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন করেছি।
তামান্না বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ফোন করার পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও আমাকে ফোন দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন। সবাই এভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, এ জন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
ঝিকরগাছার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তামান্না আক্তার নূরা। দুই হাত ও এক পা ছাড়া মাত্র একটি পা নিয়ে জন্ম হয় তার। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হেরে যায়নি তামান্না। অদম্য মনোবল নিয়ে সম্বল একটিমাত্র পা দিয়েই লিখতে শেখে। চালিয়ে যায় পড়ালেখা। তাতেই পিইসি, জেএসসি, এসএসসির পর এইচএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পেয়েছে তামান্না।
ঝিকরগাছার আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন দম্পতির মেয়ে তামান্না তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে নানা কথা শুনতে হলেও তামান্নার পরিবার সবসময় তার পাশে ছিল। নিজের একাগ্র আগ্রহের পাশাপাশি পরিবারের উৎসাহ-অনুপ্রেরণাতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে সে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে।
তামান্নার এখন স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। এরই মধ্যে ইউসিসি কোচিং সেন্টারের যশোর শাখায় তাকে বিনামূল্যে পড়ালেখা করানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তামান্নার ইচ্ছা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি কর্মকর্তা হবে। ভবিষ্যতে নিজেকে গবেষণায় নিয়োজিত করার স্বপ্নও রয়েছে তার।
তামান্নার স্বপ্নপূরণে সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে জেলা প্রশাসনও। যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, তামান্নার স্বপ্নপূরণে পাশে দাঁড়িয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। আশা করি তামান্নার স্বপ্ন পূরণে কোনো বাধা থাকবে না। সে আরও এগিয়ে যাবে।
সারাবাংলা/টিআর