যেকোনো সময় দেখবেন সরকার নাই— দলীয় কর্মীদেরকে গয়েশ্বর
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:১০
ঢাকা: কেরানীগঞ্জের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গযেশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘যে সাহসিকতার সঙ্গে আপনার পথ চলছেন, সেটা অব্যাহত রাখুন। সরকার পতন অনিবার্য। যেকোনো সময় দেখবেন সরকার নাই। তখন দেখা যাবে ওই পোশাক পরা পুলিশ নামের কুলাঙ্গাররা কোথায় লুকায়, কোথায় পালায়।’
‘প্রদীপ নেভার আগে জ্বলে ওঠে ধপাস করে। সরকারের বর্তমান কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে পতনের শেষ শিখা জ্বলে উঠছে- নিভে যাবে। কখন নিভে যাবে, এটা তারা নিজেরাও অনুমান করতে পারছে না’- বলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর হোসেন নুরুর বাড়িতে ছাত্রলীগের হামলা, ভাঙচুর ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা দক্ষিণ শাখা বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে সামনে পুলিশি হামলা, লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ এবং নারী ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “প্রশাসনে যারা বেতনভুক্ত, তাদের এই বেতনের টাকা কোনো ব্যক্তি বা দল দেয় না। এটা জনগণের ট্যাক্সের টাকা। ইউনিফর্মধারী, ইউনিফর্ম পরা পুলিশের মুখ থেকে যে বক্তব্য (মালাউন) বেরিয়েছে তা রীতিমতো সাম্প্রদায়িক উসকানি। আওয়ামী লীগের একমাত্র ভরসা এ দেশের হিন্দুদের ওপর। আর তাদেরকে ‘মালাউন’ বলে গালি দিচ্ছে পুলিশ। প্রজাতন্ত্রের পোশাক পরা পুলিশ বাহিনীর মুখ থেকে এই ধরনের শব্দ অত্যন্ত গর্হিত অন্যায়। এই পোশাক পরার অধিকার তাদের আছে কিনা, সেটা সরকারকে বিবেচনা করতে হবে।”
‘যে সময় তাদেরকে (পুলিশ বাহিনী) গণতান্ত্রিক বিশ্ব ধিক্কার দিচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কয়েকটি দেশে। শোনা যায়-পালাক্রমে আরও আসিতেছে। সেই মুহূর্তে পুলিশ কেন সংযত হচ্ছে না? এটা কি সরকারের জন্য লাভজনক, না ক্ষতিকর? সেটা সরকারকে বুঝতে হবে। আর যা কিছু ঘটনা ঘটুক না কেনে, সরকারকে দায় বহন করতে হবে। ছাত্রলীগ হোক, পুলিশ হোক, যুবলীগ হোক- এই ঘটনা যেই ঘটাক, যে জুলুম, অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা প্রকাশ করেছে, তার দায় তো শেখ হাসিনা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ওপর বর্তাবে’- বলেন সাবেক এই মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশটা স্বাধীন করার সময় হিন্দু-মুসলমানের ব্যবধান দেখি নাই। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে, দলমত নির্বিশেষে যুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। পঞ্চাশ বছরে পরে পুলিশের মুখে এই ধরনের শব্দ শোনার জন্য আমরা প্রস্তুত না। এর জবাব যথাসময় দেওয়া হবে, কেরানীগঞ্জের মাটিতেই দেওয়া হবে। সরকার বিচার করবে, কী করবে না, জনগণের অধিকার আছে এর বিচার করার। আজ সারা কেরানীগঞ্জ ফুঁসে উঠেছে। ভোর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে লোক এখানে এসেছে। যে নারী নির্যাতনের কারণে সারা পৃথিবী ফুঁসে উঠেছে এই সরকারের বিরুদ্ধে, সেই নারী নির্যাতের আরেকটা জ্বলন্ত প্রমাণ কেরানীগঞ্জের ঘটনা।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘সরকারের অন্যায় কর্মকাণ্ডের সমালোচনার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। আমরা কোনো অন্যায় করিনি, আমাদের নেতাকর্মীরা কেউ অন্যায় করেনি। যারা বাধা দেয় তারাই দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে। যারা বাধা দেয় তারা সরকারি কর্মচারীদের রুলস অব বিজনেস ভঙ্গ করে। আমরা এর প্রতিবাদ করি।’
‘যে কতিপয় ঠ্যাঙ্গারু নুর হোসেনের বাড়িতে আক্রমণ করেছে, আশা করি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাকে পুলিশে সোপর্দ করবে। সেটায় যদি ব্যাত্যয় ঘটে, কেরানীগঞ্জের জনগণ প্রস্তুত আছে বিচার করার জন্য এবং তাদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য। যাদের রক্ত ঝরেছে, তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করেই কেরাণীগঞ্জ থানার ওসিকে বিদায় নিতে হবে’- বলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব সম্প্রদায় যেভাবে বিভিন্ন বাহিনীর ওপর স্যানশন দিচ্ছে, অসন্তোষ প্রকাশ করছে, এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক, শঙ্কার। এতে আমরা খুশি না। কিন্তু দায় জনগণের না, দায় সরকারের। সুতরাং এই ধারাবাহিকতা যদি অব্যাহত থাকে, সারাবিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।’
সারাবাংলা/এজেড/এমও