Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভাষা শহিদ রফিকের নামে স্মৃতি জাদুঘর, নেই তার স্মৃতি চিহ্ন

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৪২

মানিকগঞ্জ: ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিন আহম্মদের নামে নির্মিত স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পরেও স্মৃতি জাদুঘরটিতে নেই রফিকের কোনো স্মৃতি চিহ্ন। তার নামে লেখা একটি মাত্র বই গ্রন্থাগারের আলমিরায় থাকলেও বাকি শহিদদের নিয়ে লেখা কোনো বই সেখানে নেই। শুধু তাই নয়, জাদুঘরে থাকা ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বিরল ছবিগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ ভাষার মাস এলেই ধোয়ামোছা আর দায়সারা দায়িত্ব পালন করেই দায়িত্ব শেষ করে কর্তৃপক্ষ। এমন দুরবস্থা দেখে হতাশ হয়েই ফিরতে হয় দর্শনার্থীদের।

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে (বর্তমানে রফিক নগর হিসেবে পরিচিত) ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিন আহম্মদের নামে নির্মিত গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার কাজ। জাদুঘরের সামনে প্যান্ডেলের কাজও চলছে পুরোদমে। সেখানে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ফরহাদ হোসেন খান।

রংপুরের একটি পরিবার ভাষা শহিদ রফিক স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি দেখতে এসেছে। তাদের মধ্যে দর্শনার্থী সুবল সাহা বলেন, আমরা সুদূর রংপুর থেকে জাদুঘর ও শহিদ রফিকের বাড়িটি দেখার জন্য এসেছি। কিন্তু আশানুরূপ কিছুই দেখতে পেলাম না। শুনেছি শহিদ রফিকের ব্যবহৃত চশমা, নকশিকাঁথা, কলম, রুমালসহ বেশ কিছু জিনিস রয়েছে। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না। ভাষা আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন কিংবা সে সময়ের স্মৃতি বিজড়িত কোনো কিছুই নেই।

সুবল সাহার কলেজ পড়ুয়া কন্যা সবিতা সহানা বলেন, জাদুঘর ও গ্রন্থাগারে যে আলোকচিত্রগুলো দেখেছি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বোঝার উপায় নেই কোনটা কার ছবি। পাশাপাশি ভাষা শহিদদের ওপর লেখা ইতিহাসের বইগুলোও নেই। এটা আমার কাছে ভালো লাগেনি।

গাজীপুর থকে আসা দর্শনার্থী শহিদুল ইসলাম এসেছেন তার কয়েক বন্ধু ও পরিবারের সদস্য নিয়ে। এসেই অনেক হতাশার কথা শোনালেন। শহিদুর বলেন, ভাষার জন্য যিনি শহিদ হয়েছেন তার বাড়িতে প্রবেশ করার রাস্তাটির বেহালদশা দেখে বেশ খারাপ লেগেছে। রফিক স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের ভেতরেও কিছু দেখতে পেলাম না। বই বলতে উপন্যাস ও গল্পের বই বেশি। মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা শহিদদের ওপর লেখা বই এখানে অপ্রতুল। নতুন প্রজন্মের ইতিহাস জানার জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই খুবই জরুরি।

শহিদ রফিক স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ফরহাদ হোসেন খানও স্বীকার করলেন অব্যবস্থাপনার কথা। তিনি বলেন, জাদুঘরে রফিকের কোনো স্মৃতিই নেই। আমি জেনেছি শহিদ রফিকের ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র তার ছোট ভাই খোরশেদ আলমের কাছে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বলেছি জিনিসপত্র গুলো জাদুঘরে আনার জন্য।

গ্রন্থাগারের বই সম্পর্কে জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন খান বলেন, এখানে প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের মতো বই আছে। তবে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযোদ্ধা, জেলা ইতিহাসসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বইয়ের জন্য আমি আবেদন করেছি।

এসব বিষয়ে কথা হলে শহিদ রফিকের ভাই খোরশেদ আলম বলেন, রফিকের স্মৃতি চিহ্ন বলতে যা বোঝায় তা খুব একটা নেই। একটি পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, টেবিল-চেয়ার ও কাপড়ের ওপর রফিকের নিজ হাতে নকশা করা একটি টেবিল ক্লথ আছে। জাদু ঘরে সংরক্ষণের অভাবে তা দেওয়া হয়নি।

মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহী উদ্দিন বলেন, রফিকের ব্যবহৃত জিনিসপত্র জাদুঘরে দেওয়ার জন্য পরিবারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। যদি তার ব্যবহৃত কোনো জিনিসপত্র পরিবার থেকে দেওয়া হয়নি। পরিবার দিলে তা যথাযথ মর্যাদায় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।

২০০৮ সালের ২৪ মে জেলা পরিষদের উদ্যোগে ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়।

সারাবাংলা/এএম

ভাষা শহিদ রফিক রফিক স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

এখনো সালমানকে মিস করেন মৌসুমী
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৩

সম্পর্কিত খবর