কুবি শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে লোপাট চা দোকানি
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:০৩
কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাস সংলগ্ন দক্ষিণ মোড়ে এক চা-সিগারেটের দোকানি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-কর্মচারীসহ স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের প্রায় ৬০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত দোকানির নাম সাইফুল। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দক্ষিণ মোড়েই বাচ্চু মিয়ার ভবনের ৩ তলায় ভাড়া থাকতেন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিনি কয়েকবছর ধরে মানুষের কাছ থেকে সিগারেটের ব্যবসার শেয়ার, ধার ও সুদের চুক্তিতে প্রায় ৬০ লাখ টাকা নিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে তিনি কিছু পাওনাদারদের জানিয়েছেন ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিবেন। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সাইফুল দোকান না খোলায় পাওনাদাররা তাকে ও তার স্ত্রী সুমি আক্তারের ফোনে কল দিলে নাম্বার বন্ধ পায়। এরপর পাশেই ভাড়া বাসায় খোঁজ নিলে তাদের পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলছেন, ‘স্ত্রীর বোনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ঘরে দামি দামি আসবাবপত্র সব নিয়ে পালিয়ে গেছেন।’
ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, অভিযুক্ত সাইফুলের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার রহিমানগর ডাগঘরের পালগিরি গ্রামে। তার পিতার নাম বজলুর রহমান।
অভিযোগ মতে, চা দোকনি সাইফুল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মারুফের কাছ থেকে সাড়ে ১০ লাখ, ম্যাজিক প্যারাডাইজের পাশের কনফেকশনারির দোকানি মো. ইব্রাহিম, রিপন হোসাইন ও স্থানীয় বাসিন্দা ছাত্তারের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা করে নিয়েছে। কোটবাড়িতে গাজী স্টোরের মালিক সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে সিগারেট বাবদ অগ্রিম ৩ লাখ টাকা ও কুবির নজরুল হলের বাবুর্চি আবু ইউসুফের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছেন। এভাবে আরও অনেক মানুষের কাছ থেকে তিনি লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি।
সাইফুলের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে চারপাশে চাঞ্চল্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এরপর পাওনাদাররা তার ভাড়া বাসা ও ভাড়া দোকানের তালা ভেঙে ভিতরে গেলে সেখানে মূল্যবান তেমন কিছু পায়নি। এ সময় সাইফুল, তার স্ত্রী সুমি এবং তার ছোট ভাই সবুজের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের জন্য ফোন দেওয়া হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সাইফুল যে বাসায় থাকতেন সেই বাসার মালিক সোহাগ বলেন, ‘সাইফুল দুইদিন আগে বাকিতে দুইটা টিভি নিয়েছিল আমার দোকান থেকে। এছাড়াও তার কাছে বাসা ভাড়া বাকি প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। বাসায় মূল্যবান যা যা ছিল সব নিয়ে গেছেন তিনি। এখন তাকে এবং তার স্ত্রীকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারুফ বলেন, ‘ওনার দোকানে সবসময় চা খেতাম, আড্ডা দিতাম। একটা ভাল সম্পর্ক হয়েছিল। উনি আমার সঙ্গে ব্যবসার কথা বললে প্রথমে আমি রাজি হইনি। তবে করোনায় লকডাউনে ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশার কারণে বাসায় বসে থাকাকালে ব্যবসায় জড়াতে আগ্রহী হই। আব্বুকে জানিয়ে ব্যবসা করার জন্য তাকে ৫০ হাজার টাকা দিলাম। ওই মাসে আমাকে ৫ হাজার টাকা লাভ দিয়েছিলেন সাইফুল। আস্তে আস্তে তার প্রতি আমার বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছিল। এরপর বাসায় সবাইকে বুঝিয়ে টাকা আনি, আর ধাপে ধাপে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দেই। সবশেষে এ মাসে ৩ লাখ টাকাসহ মোট সাড়ে ১০ লাখ টাকা দেই তাকে। তিনি আমাকে জানিয়েছিল- এ ব্যবসাটা শুধু তিনি আর আমিই করছি আর কেউ না। কিন্তু এখন দেখছি আমার মতো অনেককে তিনি প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছেন।’
সাইফুলের ব্যাপারে জানতে চেয়ে তার ছবি দেখালে গোহাট উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, ‘এই সাইফুলের বাড়ি আমার বাড়ির কাছাকাছি। গত ৪ বছর আগে এলাকা থেকে সাত-আট লাখ টাকা নিয়ে স্ত্রীসহ পালিয়ে আত্মগোপনে ছিল সে। এরপর এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তে তাদের জমি বিক্রি করে মানুষের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তার বাবার নাম আব্দুল মান্নান। আর ভাইয়ের নাম সবুজ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘অভিযুক্ত দোকানি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কেউ না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কেউ হলে টাকা আদায়ে আমরা ভূমিকা রাখতে পারতাম। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে তাকে সহযোগিতা করব। পুলিশ প্রশাসনকে জানাব যেন তার টাকা উদ্ধারে সচেষ্ট হয়।’
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, গতকাল এ বিষয়ে আমাদের কাছে একটা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেব।
সারাবাংলা/এনএস